বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম
মহান জাতীয় ঐক্যের তাগিদ : ব্যাপক ভিত্তিক নতুন জাতীয় দল
১। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
ঐতিহাসিক মুক্তিসংগ্রামের সোনালী ফসল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আমাদের পবিত্র আমানত এবং অলঙ্ঘনীয় অধিকার। প্রাণের চেয়ে প্রিয় মাতৃভূমির এই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুদৃঢ় ও সুরক্ষিত করে রাখাই হচ্ছে আমাদের কালের প্রথম ও প্রধান দাবি। বিবর্তনশীল ইতিহাস এবং সাম্প্রতিক জীবনলব্ধ অভিজ্ঞতা আমাদের এই শিক্ষাই দেয় যে, ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত গণপ্রচেষ্টা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের কালজয়ী রক্ষাকবচ। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অতন্দ্র প্রহরী হচ্ছে যথাক্রমে:
১। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে অনুপ্রাণিত ও সংহত ইস্পাতকঠিন গণঐক্য,
২। জনগণভিত্তিক গণতন্ত্র ও রাজনীতি এবং
৩। ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত জনগণের অক্লান্ত প্রয়াসের ফলে লব্ধ জাতীয় অর্থনৈতিক মুক্তি, আত্মনির্ভরশীলতা ও প্রগতি।
সুদৃঢ় এবং অভেদ্য জাতীয় ঐক্যবোধ এবং জাতীয় অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা না থাকলে সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও নয়া উপনিবেশবাদের গ্রাস থেকে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষা করা দুঃসাধ্য।
জাতীয় ঐক্যের অভাব, বিশেষতঃ দেশপ্রেমিক শক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে সমঝোতা ও মৌলিক ঐক্যবোধের অভাব বাংলাদেশের মত আপাত দরিদ্র অথচ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রকে সহজেই বৈদেশিক আধিপত্যবাদ এবং অভ্যন্তরীণ বিধ্বংসী প্রক্রিয়ার শিকারে পরিণত করতে পারে। কয়েক বছর আগের ইতিহাস এই বিশ্লেষণের সত্যতাকে প্রমাণ করেছে। আমাদের জাতীয় অনৈক্য ও বিভেদের সুযোগ নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী, নব্য উপনিবেশবাদী ও সম্প্রসারণবাদী শক্তিসমূহ বাংলাদেশের উন্নতি ও প্রগতির পথ রুদ্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি, আন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতার পশ্চাদগামী করারও প্রয়াস পেয়েছে। এই সকল অশুভ শক্তির তৎপরতার ফলে আমাদের সার্বভৌমত্ব খর্ব হয়ে পড়েছিল, কৃষিজাত ও শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন হয়েছিল মারাত্মকভাবে ব্যহত, রাজনীতি হয়েছিল বিদেশী প্রভুদের সেবাদাসী, পররাষ্ট্রনীতিতে এসেছিল মূল্যবোধের চরম সংকট এবং সর্বগ্রাসী বিভ্রান্তি, শিক্ষাঙ্গনে হামলা চালিয়ে সৃষ্টি করেছিল অপরিসীম নৈরাজ্য।
এক কথায় বাংলাদেশী জাতির স্বাধীন, সার্বভৌম সভ্য অস্তিত্ব হয়েছিল মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন। ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বরের ঐক্যবদ্ধ জাতীয় বিপ্লব এই ভয়াবহ পক্রিয়ার অবসান ঘটিয়ে যে নতুন উষার আহ্বান জানায় গত আড়াই বছরের কিঞ্চিত অধিককালের পরিসরে তার বলিষ্ঠ প্রকাশ ঘটেছে। ১৯৭৮ সালের ৩রা জুনের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশী নাগরিকের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হওয়ার ফলে জাতীয় ভিত্তিক ঐক্যের ইতিবাচক দিকটি আমাদের জনজীবনে প্রাসংগিকভাবে সংঘবদ্ধ হয়েছে।
১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর থেকে শুরু করে ১৯৭৮ সালের ৩রা জুন পর্যন্ত ও তার পরবর্তীকালের সকল ঘটনাই এ কথা প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশী জনগণ বৈদেশিক অধিপত্যবাদ এবং অভ্যন্তরীন নৈরাজ্যের বিরোধী। ইতিহাসের রায় এই যে, বাংলাদেশী জনগণ উনিশ দফাকে বাস্তবায়িত দেখতে চান। তারা সর্বতোভাবে দেশের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে সংরক্ষিত দেখতে চান। তারা চান যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি সর্বাত্মক বিশ্বাস ও আস্থা, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায় বিচারের সমাজতন্ত্র জাতীয় জীবনে সর্বস্তরে প্রতিফলিত হোক।
তারা চান যে, বাংলাদেশের জনগণ যেন অন্নহীন, বস্ত্রহীন, স্বাস্থ্যহীন, নিরক্ষর ও আশ্রয়হীন অবস্থায় না থাকেন। তারা চান যে, জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুদৃঢ় হোক। ৩ জুনের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠনের মাধ্যমে যে বিস্তৃততর জাতীয় একতা এবং যে ঐতিহাসিক সংহতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তাকে স্থায়ী এবং সুসংবদ্ধ করাই হচ্ছে সময়ের দ্বিধাহীন দাবি। বাংলাদেশী জনগণ জাতীয় অনৈক্য, বিভেদজনিত দুর্বলতা ও অসহায়তার শিকার হতে চান না। জাতীয় জীবনের এই যুগসন্ধিক্ষণে জাগ্রত জনতার দাবী অত্যন্ত সুস্পষ্ট-জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সুদৃঢ় গণঐক্য ও জনগণতন্ত্র গড়ে তুলতে হবে; ঐক্যবদ্ধ পুনরুজ্জীবিত জাতিকে অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতার মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদ, ও অধিপত্যবাদের সম্প্রসারণবাদ, নয়া-উপনিবেশবাদ বিভীষিকা থেকে মুক্তির নিশ্চিতি দিতে হবে। জনগণের এই চারটি সোচ্চার মৌলিক দাবি মেটানোর জন্যই ইতিহাসের প্রয়োজনে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টভুক্ত রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠির ও অন্যদের সমবায়ে এই দল গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জাতীয় মিলন ও ঐক্যের দল। এ দলের বৈপ্লবিক উদারতা ও বিশালতা সকল দেশপ্রেমিক মানুষকে এই অটল ঐক্যবাদী কাতারে সামিল করে জাতীয় পর্যায়ে স্থিতিশীলতা এবং সার্বিক উন্নতি ও প্রগতি আনতে সক্ষম হবে বলে যৌক্তিক ও বাস্তব আশা এবং সম্পূর্ণ বিশ্বাস আমাদের আছে।
২। জাতীয়তাবাদভিত্তিক ইস্পাত কঠিন গণঐক্য
অবিস্মরণীয়কাল থেকে বাংলাদেশি জনগণ এক অনস্মীকাৰ্য স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে উপমহাদেশের অন্যান্য জাতিসত্তা থেকে পৃথক অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। ভৌগলিক অবস্থান, অভিন্ন ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক ঐক্য এবং সাধারণ ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার স্বতন্ত্র বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী চেতনার ভিত্তিমূল দৃঢ় করেছে। বহিঃশত্রু, সাম্রাজ্যবাজ, উপনিবেশবাদ এবং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যুগ যুগান্তরের সংগ্রাম এই চেতনাকে বলিষ্ঠ করেছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৭১ এর ঐতিহাসিক লোকায়ত্ত সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে সুসংহত, দৃঢ়বদ্ধ ও স্পষ্টতর রূপ দিয়েছে। ধর্ম, গোত্র, অঞ্চল নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশী এক ঐক্যবদ্ধ জাতিতে পরিণত হয়েছে। স্বনির্ভর সংগ্রামের মাধ্যমে এই জাতি তার নিজস্ব আবাসভূমি, স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।
ধর্ম বিশ্বাস ও ধর্মপ্রিয়তা বাংলাদেশি জাতীর এক মহান ও চিরঞ্জীব বৈশিষ্ট্য। নিষ্ঠুর, নির্বিবেকী বৈদেশিক ও বিজাতীয় শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে দীর্ঘকালের গণসংগ্রাম বাংলাদেশী জাতীয় সমাজের উদার ধর্মবোধকে স্থিতিশীল ও মহত্তর রূপ দিয়েছে।
বাংলাদেশের জনগণের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। এই বাস্তব সত্য সুষ্ঠু ও উদার বৈশিষ্ট্য জাতীয় জীবনে প্রতিফলিত ও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত। ইসলামের মহান শিক্ষাকে যথাযথভাবে আত্মস্থ করে তাকে জাতীয় জীবনের মূলে সংহত করতে সক্ষম হওয়ায়, বাংলাদেশ জনগোষ্ঠি উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিষ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পেরেছে। ধর্ম, গোত্র, গোষ্ঠি নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশী নাগরিকই তাই জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ও সমৃদ্ধি অর্জনের প্রয়াসে শরীক হয়ে এক মহান জাতীয়তাবাদভিত্তিক শিলাদৃঢ় গণঐক্যের পত্তন করতে পেরেছেন। এই ঐক্যবোধকে আরও মজবুত করে জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষিত করা পাটির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ।
৩। ঐক্যবদ্ধ অগ্রগতির অমোঘ দাবি : উৎপাদনের রাজনীতি এবং জনগণের গণতন্ত্র
জাতীয় ঐক্য এবং একতাবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যকে সার্বিক উন্নতি ও প্রগতি আনার জন্য যা দরকার তা হচ্ছে জনমূখী রাজনীতি। বহু শতাব্দীর কুশাসন, শোষণ ও নিষ্পেষণের ফলে বাংলাদেশী জনজীবনে দারিদ্র, অশিক্ষা ও অপুষ্টি নিষ্ঠুর অভিশাপের মত বিরাজমান। জনগণের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ, শতকরা নব্বই ভাগের বেশি, গ্রামবাসী দারিদ্র সীমার নিচে আধুনিক সভ্যতার সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত অবস্থায় দিন যাপন করেন। তাদের মাথাপিছু গড়পড়তা আয় এত কম যে, দু'বেলা ক্ষুধার অন্ন, প্রয়োজনীয় বস্ত্র ও বাসস্থানের সংস্থান করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। প্রায় আশি শতাংশ মানুষ নিরক্ষর। অপুষ্ঠি ও স্বাস্থ্যহীনতা সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশীর নিত্য দিনের সমস্যা। অবাঞ্ছিত দ্রুতহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দারিদ্র্য, অশিক্ষা-অপুষ্টির বিষচক্রকে আরও মারাত্মক ও ভয়াবহ করে রেখেছে। বেকারত্ব ও কর্মহীনতা প্রায় ষাট (৬০) থেকে সত্তর (৭০) লক্ষ সক্ষম মানুষকে অভিশপ্ত জীবনযাপন করতে বাধ্য করেছে। সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত অবস্থায় থাকার ফলে জাতির অর্ধাংশ নারীসমাজ জাতীয় উৎপাদন ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় তার যথার্থ ভূমিকা পালন করে আসতে পারেনি এবং বর্তমানেও আশানূরূপভাবে পারছে না।
এই পরিপ্রেক্ষিতে জনমুখী রাজনীতিকে অবশ্যই সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক মানবমূখী অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনের জাতীয় প্রচেষ্টার সঙ্গে অংগাংগীভাবে সংশ্লিষ্ট হতে হবে। রাজনীতিকে বিভ্রান্তির গোলক ধাঁধা থেকে মুক্ত করার যে প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে তার ইতিবাচক তাৎপর্যকে জাতীয় জীবনে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করতে হলে সকল দেশপ্রেমিক শক্তিকে সম্মিলিতভাবে উৎপাদনমূখী রাজনীতির চর্চা অভ্যাহতভাবে চালিয়ে যেতে হবে।
রাজনীতিকে জাতি গঠন ও জাতীয় সমৃদ্ধি ও শক্তিশালী অর্থনীতি গঠনের প্রক্রিয়ায় সক্রিয় মাধ্যম হিসেবে চিরঞ্জীব করার নিরলস প্রয়াসই হবে পার্টির রাজনৈতিক তৎপরতার মূল বৈশিষ্ট্য। গ্রামমূখী ও গণরাজনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ডকে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিধ্বংসী কব্জা থেকে মুক্ত রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। রাজনীতিকে উৎপাদন ক্ষেত্রের বলিষ্ঠ চালিকা শক্তিতে পরিণত করার জন্য পার্টি ক্ষেত-খামারে, কলে-কারখানায়, কুটির শিল্প কেন্দ্রগুলোতে রাস্তাঘাট, বাঁধ নির্মাণে, নদী-খাল এবং মজা পুকুর পুনঃখননে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যোগাবে এবং সার্বিকভাবে সক্রিয় অংশ নেবে। পরিণতিতে জনজীবন বিচ্ছিন্ন রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব বিলুপ্ত হবে, যোগ্য, দক্ষ ও আত্ম-নিবেদিত নেতৃত্ব গড়ে উঠবে; দারিদ্র, ক্ষুধা, অশিক্ষা, অপুষ্টি, আশ্রয়হীনতা ও অস্বাস্থ্য দূর হবে। ফলে কালক্রমে বঞ্চিত জনগণ ন্যায়বিচারভিত্তিক সুষম অর্থনৈতিক উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে এবং সমৃদ্ধি ও তাৎপর্যময় জীবনমান অর্জন করতে পারবে।
৪। জণগণের গণতন্ত্র
উৎপাদনমুখী এবং জীবননির্ভর রাজনীতির বাহক ও অবশ্যম্ভাবী সুফল হচ্ছে জনগণের গণতন্ত্র। যে তথাকথিত গণতান্ত্রিক কাঠামো ও বিধি ব্যবস্থা ধনী, অভিজাত ও নগরবাসী উচ্চবিত্তকে ক্ষমতার আসনে বসিয়ে রাখে মাত্র, অথচ জনগণের জীবনের আশা, সুখ ও সমৃদ্ধি আনতে ব্যর্থ হয়, সে ধরনের ব্যবস্থা আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতা ও সমঅধিকারের চরম পরিহাস বৈ কিছু নয়। আমাদের দলের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে- এমন এক বাস্তব নির্ভর ও গণমূখী কাঠামো ও ব্যবস্থা নিজ ক্ষেত্রে সকল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে এবং সেই সিদ্ধান্তকে কার্যকরী করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করে জাতীয়, সামাজিক ও ব্যক্তিগত উন্নতি ও সমৃদ্ধ আনতে পারেন। পার্টি বিশ্বাস করে যে জাতীয় জীবনে যেমন, তেমনি গোষ্ঠি ও ব্যক্তিগত জীবনেও রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থনৈতিক জীবনে আত্মনির্ভরশীলতা অপরিহার্য। এই আত্মনির্ভরশীলতার জন্য প্রয়োজন সচেতন সংগঠন এবং মৌলিক পর্যায়ে গণইচ্ছানুযায়ী এবং জনগণ কর্তৃক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। জনগণ নিজেরাই চিন্তা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদের সমস্যার সমাধান করবে। জনগণই নেতৃত্ব সৃষ্টি করবে এবং গণমূখী নেতৃত্ব প্রতি এলাকায়, প্রতি অঞ্চলে তাৎপর্যময় প্রকৃত গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তুলবে যার উচ্চতর প্রকাশ ঘটবে জাতীয় জীবনে। পার্টি মনে করে যে, সচেতন এবং সংগঠিত জনগণই সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস এবং অটল রক্ষাকবচ। জাতীয়তাবাদী ঐক্যের ভিত্তিতে গ্রামের জনপদে জনগোষ্ঠিকে সচেতন ও সুসংগঠিত করা এবং উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা ও প্রকল্প রচনা ও বাস্তবায়নের ক্ষমতা দেওয়া-এসব কিছুকেই পার্টি জনগণের গণতন্ত্রের অপরিহার্য উপাদান বলে মনে করে এবং এর লক্ষ্যগুলোকে অর্জন করার জন্য পার্টি তার সার্বিক সাংগঠনিক কাঠামো এবং আন্তরিক প্রচেষ্টাকে সর্বাত্মকভাবে নিয়োজিত রাখবে।
পার্টির উদ্দেশ্য হবে এমন এক কাম্য পরিস্থিতির সৃষ্টি করা যেখানে গণতন্ত্রের শিকড় মৌলিকস্তরে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত হবে এবং ফলে জনগণ ব্যাপকভাবে জাগ্রত হয়ে উঠে জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক অধিকারসমূহের দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ রক্ষকের ভূমিকা পালন করবেন ।
৫। জনগণের গণতন্ত্রের মূখ্য দাবি : স্থিতিশীলতা
জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অনস্বীকার্য পূর্বশর্ত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, অখন্ডতা, সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ শান্তি অটুট রাখার জন্য জনগণ দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। স্থিতিশীলতা, শান্তি ও নিরংকুশ নিরাপত্তা আজকের প্রথম ও প্রধান গণদাবি। জনগণ স্বাধীনতাকে অটুট রাখতে চান; তারা চান এমন একটি স্পষ্ট, স্থিতিশীল সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার নিশ্চিতি যার আওতায় নিজেরাই তাদের মানবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি আনতে পারবেন।
জাতীয় স্থিতিশীলতার পূর্বাপর শত্রু সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করে কোন সশস্ত্র ক্যাডার, দল বা এজেন্সী গঠনে অস্বীকৃতি জানিয়ে গোপন রাজনৈতিক সংগঠনের তৎপরতাকে বাংলাদেশের মাটি থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করতে আমাদের পার্টি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
৬। জনগণের গণতন্ত্রের মৌলিক দাবি : সামাজিক অন্যায় ও বৈষম্যের দূরীকরণ
জনগণের গণতন্ত্রের এক মৌলিক ও প্রধান দাবি হচ্ছে যুগসঞ্চিত সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক ও আধিপত্যবাদী সামাজিক অন্যায় ও অবিচারের অবসান। এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য সৎ, দূরদর্শী ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা অপরিহার্য। অর্থনৈতিক দুর্নীতির সেবাদাস, উচ্চবিত্তের করায়ত্ত কোন রাজনৈতিক, প্রশাসনিক কাঠামোর পক্ষে বহু শতাব্দির শোষণ ও শাসনের ফলে গড়ে ওঠা অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবিচার, অন্যায় ও অত্যাচার বিলুপ্তি করা সম্ভব নয়।
৭। সার্বভৌমত্ব, সামাজিক ন্যায়বিচার ও দ্রুত উন্নয়নের মাধ্যম : স্থিতিশীল গণতন্ত্ৰ
জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখার জন্য, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, দ্রুত সার্বিক জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থক প্রয়াস চালানোর জন্য যে স্থিতিশীল সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্যমতের প্রয়োজন তা দেবার ক্ষমতা রয়েছে কেবল এমন একটি সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের যেখানে জাতীয় সংসদ সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবে এবং সমগ্র দেশবাসী কর্তৃক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত এই জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করে।
৮। মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগ এবং আইনের শাসন
আমাদের দল বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনে বিশ্বাস করে। আইনের চোখে সকল নাগরিকই সমান এই মূলনীতিতে আমাদের দল বিশ্বাস করে। জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণে আমরা বিশ্বাসী।
৯। বিলুপ্ত মানবিক মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন
আমাদের দলের সকল প্রচেষ্টার মৌলিক লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে মানবমূখী সামাজিক মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে আমাদের জীবনে বিশেষত শিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত সমাজের মূল্যবোধের অবক্ষয় অভিশাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। অমানবিকতা, অন্যায়, অনাচার, দুর্নীতি আমাদের সমাজ জীবনকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল।
সারা সমাজ বিশেষত তরুণ-তরণী সম্প্রদায় বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। গত আড়াই বছর ধরে বাংলাদেশে এই অসহ্য অবস্থার পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে। এই মহৎ প্রচেষ্টাকে বলিষ্ঠতর রূপ দেবার জন্য অমরা বদ্ধপরিকর। আমাদের দল জানে যে, জাতীয় সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ দেশের কল্যাণ এবং মঙ্গল চান। আমরা জানি শুভবুদ্ধির পুনঃঅভ্যুদয় এবং প্রতিষ্ঠা অবশ্যম্ভাবী। আমরা সৃজনশীল উৎপাদনমুখী জীবনবোধ ফিরিয়ে আনার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা আমাদের সকল শক্তিকে সংগঠিত ও সঙ্গবদ্ধ করব।
১০। স্থানীয় এলাকা সরকার ও বিকেন্দ্রীভূত রাজনৈতিক ক্ষমতা
উৎপাদনমূখী রাজনীতি এবং জনগণের গণতন্ত্রকে বলিষ্ঠ ভিত্তিতে স্থাপন করার জন্য ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ অবশ্য প্রয়োজনীয়। পার্টি মনে করে যে, গণমুখী রাজনীতির অমোঘ পরিণতিতে কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার অবসান ঘটবে। স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা ও দক্ষতাকে ক্রমান্বয়ে এবং দ্রুত বাড়াবার নীতিতে পার্টি বিশ্বাস করে। স্থানীয় সরকারসমূহ যাতে জাতীয় জীবনে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারে সে জন্য ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে পার্টি যথা প্রয়োজন সাংবিধানিক, সাংগঠনিক এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সংগঠনের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও বহুকাল বঞ্চিত গ্রামীন ভূমিহীন নারী, অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত তরুণ-তরুণীকে সক্রিয়ভাবে স্থানীয় এলাকার সরকারে, এলাকা উন্নয়ন, প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট করার নীতি ও সাংগঠনিক প্রয়াসকে পার্টি অব্যাহত রাখবে এলাকা ও স্থানীয় সরকারগুলো যাতে সুবিধাভোগী ও প্রবল উচ্চবিত্তের স্বার্থরক্ষা ও সম্প্রসারণের বাহনে পর্যবসিত না হয়। পার্টির গণচেতনার বিস্তার ও জনসংগঠন প্রক্রিয়া সে উদ্দেশ্যেই নিয়োজিত থাকবে ।
১১। সামাজিক ন্যায় বিচারের অর্থনীতি
পার্টি বিশ্বাস করে যে, জনগণের উন্নয়ন প্রচেষ্টার মূলসূত্র হচ্ছে সামাজিক ন্যায়বিচার ভিত্তিক সুষম অর্থনৈতিক বন্টন। জাতি দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, স্বাস্থ্যহীনতা ও আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ শোষণের শিকার হোক আমাদের দল তা চায় না। পার্টি চায় এমন এক বাস্তবধর্মী কার্যকরী অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার দ্রুত অগ্রগতি যার মাধ্যমে জাতীয় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হবে এবং এই স্বয়ংসম্পূর্ণতার ফল গণজীবনে বাস্তবভাবে প্রতিফলিত হবে। সেই ন্যায়বিচার ভিত্তিক সুষম বন্টনের অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করাই পার্টির লক্ষ্য যার মাধ্যমে কৃষক ফসল ফলিয়ে পাবে দু'বেলা খাবার, শ্রমিক পাবে তার হালাল রুজীর ন্যায্য সুযোগ এবং নিম্নবিত্ত পাবে তাৎপর্যময় জীবন যাপনের অধিকার, যার মাধ্যমে সকল বাংলাদেশি মেটাতে পারবে অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বাসস্থানের ন্যূনতম মানবিক চাহিদা। এক কথায় জাতীয় অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন প্রয়াসের মানবিকীকরণই হচ্ছে পার্টির অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূল ও প্রধান লক্ষ্য। এই জন্যই পার্টির অভিমত হচ্ছে এই যে, মৌলিক অর্থনীতির সংগে সম্পর্কযুক্ত এবং প্রতিরক্ষামূলক শিল্প উদ্যোগসমূহ রাষ্ট্রায়ত্ব থাকবে এবং এর বাইরে সকল শিল্প ও উৎপাদন ক্ষেত্রে বাংলাদেশী বেসরকারি বহির্দেশীয় (বাংলাদেশী স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে) উদ্যম ও উদ্যোগকে উৎসাহ দেওয়া হবে। মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প ও উৎপাদন প্রচেষ্টায় পার্টি সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগকে সব সাহায্য ও উৎসাহ দেবে।
১২। জনসম্পদের সার্বিক উন্নয়ন ও সদ্ব্যবহার
জনগণের গণতন্ত্র, উৎপাদনমূখী রাজনীতি এবং বাস্তবনির্ভর ও গণমূখী অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বিপুল জনসমাজকে কাজে লাগিয়ে সার্বিক জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা পার্টির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠির যে বিপুল সংখ্যক সদস্য কর্মক্ষম হয়েও নিরক্ষরতা, দক্ষতাহীনতা এবং সুযোগহীনতার ফলে বেকার ও আধা বেকার জীবন যাপন করছেন তাদেরকে বৃত্তিমূলক, উৎপাদনমূলক এবং কুটির শিল্প প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট করে উপার্জনক্ষম স্বাবলম্বী নাগরিকে পরিণত করাই হচ্ছে পার্টির নীতি। গত আড়াই বছর ধরে এ ক্ষেত্রে যে সব বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে পার্টি তা আন্তরিকভাবে সমর্থন করে। পার্টি মনে করে যে, এই প্রক্রিয়াকে জোরদার ও বিস্তৃততর করা প্রয়োজন যাতে করে বাংলাদেশের ৬০/৭০ লক্ষ বেকারের স্বদেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থান ঘটে এবং বর্তমান দশকের কিশোর-কিশোরিরা (যাদের সংখ্যা দুই কোটিরও বেশি) যখন তরুণ -তরুণীতে পরিণত হবে তখন তাদেরও কর্মহীনতা এবং বেকারত্বের অভিশাপে ভূগতে না হয়। এক কথায় সারাদেশে, বিশেষ করে গ্রাম এলাকায় কোনো কর্মক্ষম বাংলাদেশীই যাতে কর্মহীন না থাকে, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, দক্ষতাবর্ধন ও কুটির শিল্পের দ্রুত ও ব্যাপক সম্প্রসারণের মাধ্যমে পার্টির সরকার সে ব্যবস্থা করবেন।
১৩। নারী সমাজের সার্বিক মুক্তি ও প্রগতি
বাংলাদেশের অর্ধেক নাগরিকই নারী। প্রাচীন সামাজিক বিধি ব্যবস্থা ও কুসংস্কারের নিগড়ে অবরুদ্ধ থাকার ফলে বাংলাদেশে নারী সমাজ ব্যাপকতর জাতি গঠনমূলক ও জাতীয় অর্থনৈতিক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যথার্থ ভূমিকা পালনে অক্ষম ছিলেন। বর্তমান অনুপ্রেরণা ও উৎসাহের ফলে এই দুঃসহ ও অবাঞ্ছনীয় পরিস্থিতির অবসানের সূচনা হয়েছে। মহিলা বিভাগ, সমাজকল্যাণ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন, কুটির শিল্প, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের ক্ষেত্রে নারী সমাজকে উৎপাদনমূখী প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট করার ব্যাপক ও সার্থক প্রচেষ্টা চলছে। পার্টির সরকার এই প্রচেষ্টাকে আরও বলিষ্ঠ ও ব্যাপক করার জন্য সর্বাত্মক ও সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করবে, যার মাধ্যমে প্রত্যেক নারী অবস্থা অনুযায়ী নিজস্ব সীমার মধ্যে জাতি গঠনমূলক কর্ম করতে পারেন ।
১৪। জাতি গঠন, সমাজসেবা ও উপার্জনমূখী কার্যক্রমে যুব শক্তির সদ্ব্যবহার
বাংলাদেশের আট কোটি নাগরিকের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি পঁচিশ বছরের তরুণ-তরুণী। এদের শতকরা নব্বই ভাগ গ্রামবাসী এবং এদের এক বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ স্কুলের চৌহদ্দির বাইরে সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত অস্তিত্ব পালন করছেন। এই বিপুল যুবশক্তিকে সচেতন ও সংগঠিত করার জন্য এবং বৃত্তিমূলক দক্ষতা বৃদ্ধি করণ কার্যক্রমের মাধ্যমে এদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সমাজকল্যাণ ক্ষেত্রের আওতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জাতীয় যুবসেবা কার্যক্রম বাস্তবায়িত করা হবে। সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন ক্ষেত্রেও যুব সমবায় আন্দোলনকে জোরদার করা হবে। আমাদের দল এইসব আন্দোলন ও কার্যক্রমকে মজবুত বলিষ্ঠ করবে এবং তরুণ-তরুণী সমাজকে উন্নয়নমূলক, গঠনমূলক ও সমাজসেবাধর্মী কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট করার সার্বিক প্রচেষ্টা চালাবে। দেশের শিক্ষিত বেকার যুব সমাজের কর্মসংস্থানের সফল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমাদের দল বিশেষ প্রচেষ্টা চালাবে। দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচীতে এই বেকার জনশক্তিকে কাজে লাগাবার ব্যবস্থা করা হবে।
১৫। পল্লী উন্নয়নের অগ্রাধিকার
বাংলাদেশের নব্বই শতাংশ মানুষ পল্লী এলাকার অধিবাসী। গত আড়াই বছরের নিরলস উদ্যোগ এই বঞ্চিত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পরিবেশ রচনা করেছে। এই ভিত্তিকে আরও মজবুত করা এবং গ্রাম বাংলার দ্রুত অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রগতির নিশ্চয়তা বিধান করা পার্টির অন্যতম মূল উদ্দেশ্য। আমাদের দল গ্রামীণ জনগণের জীবনে বৈপ্লবিক সমৃদ্ধি ও সার্বিক উন্নতি আনয়নে বদ্ধপরিকর। গ্রাম বাংলায় যাতে দারিদ্র ক্ষুধা ও অর্থনৈতিক দুরবস্থার অবসান ঘটে সে উদ্দেশ্যে পার্টি যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাবে।
এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য পার্টি:
- গ্রামীণ কুটির শিল্প, ব্যাপক কৃষি শিক্ষা, মৎস্য চাষ শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও উৎপাদন প্রক্রিয়াকে বলিষ্ঠ ও ব্যাপকতর ভিত্তিতে সংগঠিত করবে;
- গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে অক্ষরজ্ঞান ও জীবন উপযোগী শিক্ষার বিস্তার ঘটাবে;
- গ্রামাঞ্চলে পর্যায়ক্রমে উন্নতমানের বাসস্থান ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে;
- গ্রামীণ জনগণের স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও পুষ্টিবর্ধন নিশ্চিত করবে;
- গ্রামীণ বিদ্যুত্যায়ন প্রক্রিয়া ও যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত উন্নয়নের জন্য সার্বিক প্রয়াস চালাবে;
- ভূমি-ব্যবস্থা ও প্রশাসনকে ন্যায়বিচার ভিত্তিক, আধুনিক ও সুবিন্যস্ত রূপ দেবে।
সংক্ষেপে, পল্লী এলাকার দ্রুত উন্নয়নকে সকল পর্যায়ে অগ্রাধিকার দিয়ে পার্টি পল্লী অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়ন সাধন করে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করবে।
১৬। গণমূখী কৃষিনীতি ও কার্যক্রম
বাংলাদেশের পল্লী এলাকার অধিবাসীদের আশি শতাংশই কৃষিজীবী। আমাদের দল প্রগতিশীল কৃষিনীতির মাধ্যমে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য কৃষিজাত দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশকে স্বয়ংসম্পন্ন ও আত্মনির্ভরশীল করতে বদ্ধপরিকর। খাদ্যশস্য ও কৃষিজাত দ্রব্যের উৎপাদন দ্বিগুণ করার যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তাকে সফল পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য আমরা সার্বিক ও আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাব।
এ উদ্দেশ্যে আমরা:
- সুংসংহত কৃষি কার্যক্রমকে মজবুত করব;
- প্রয়োজনমত কৃষি যন্ত্রপাতি, উপকরণ সরবরাহ করে প্রতিটি কৃষিজীবীকে বাস্তবমূখী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমৃদ্ধির সংগ্রামে সফল ও দক্ষ কৃষক হিসেবে গড়ে তুলব;
- সুসংগঠনের মাধমে দরিদ্র ও ক্ষুদ্র কৃষকের হাত মজবুত করে তা ভাগ্য উন্নয়নে সাহায্যে করে জাতীয় অর্থনীতিকে স্বনির্ভর এবং বলিষ্ঠ করে গড়ে তুলব। এই লক্ষ্য অর্জন করার জন্য আমাদের দল একটি বাস্তবমূখী ভূমি সংস্কার ও ভূমি বন্টনের পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
বস্তুত আমাদের কৃষি, পশুপালন ও মৎস্যনীতি কার্যক্রম আমাদের দেশকে খাদ্যে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণই করবে না, বরং খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত করবে, যাতে করে খাদ্য শস্য, অন্যবিধ কৃষিজাত পণ্য এবং মাছ রপ্তানী করে আমরা জাতীয় সমৃদ্ধির পথ বিস্তৃততর করতে পারি।
১৭। সমবায়ের ভিত্তিতে জাতীয় উন্নয়ন
সামগ্রীক জাতীয় উন্নয়ন, বিশেষত পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে সুসংগঠিত এবং জনসমর্থিত সমবায় আন্দোলন যে বলিষ্ঠ ও ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করতে পারে এ সম্পর্কে পার্টি সচেতন। আমাদের দল বিশ্বাস করে যে, আমাদের দেশে সমবায় আন্দোলনের প্রসার ও সাফল্যের প্রধান প্রতিবন্ধক হচ্ছে এই প্রক্রিয়ায় আমলাতান্ত্রিক সংগঠন ও মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রাধান্য এবং জনগণের অশিক্ষা ও জনমতে সমবায় সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞানের অভাব। সেজন্য আমাদের পার্টি সরকারঃ
- সমবায় ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অবসান ঘটাবে এবং মধ্যস্বত্বভিত্তিক সুবিধাবাদী ও দুর্নীতিবাজ টাউট শ্রেণীর আমূল উৎখাতের ব্যবস্থা নেবে;
- আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়ে ও জাতীয়ভিত্তিক ব্যাপক সমাজসেবা ও কল্যাণমূলক আন্দোলন চালিয়ে জনমনে সমবায় সম্পর্কে সঠিক ধারণার সৃষ্টি করবে;
- সমাজসেবা মূলক কার্যক্রমকে জোরদার করে সমবায়ী মনোভাবের বিস্তার ঘটিয়ে সমবায় আন্দোলনকে সফল করার প্রচেষ্টা চালাবে ।
এই সকল ব্যবস্থা সার্থকভাবে গ্রহণ করে পার্টির সরকার সমবায় আন্দেলনকে কৃষি ও কুটির শিল্পে ব্যাপক উন্নয়নধর্মী বিস্তারের বাহন হিসাবে গড়ে তুলবে এবং গ্রামীণ কৃষক, মজদুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ইত্যাদিকে অর্থনৈতিকভাবে সুসংহত করে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির বলিষ্ঠ মাধ্যম হিসাবে কাজ করার সুযোগ করে দেবে।
১৮। সৃজনশীল উৎপাদনমূখী এবং গণতান্ত্রিক শ্রমনীতি
জাতীয় শিল্প-শ্রমিক নীতিতে শ্রমিক ও জাতীয় স্বার্থের এক সুষ্ঠ সমন্বয় ও সমতা বিধানের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। শ্রমিকগণ যাতে তাদের ন্যায্য পাওনা ও সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারেন তার ব্যবস্থা আমাদের পার্টি করবে। সেই সঙ্গে শ্রমক্ষেত্রে গঠনমূলক, উৎপাদনশীল মনোভাব ও কার্যক্রম বিকাশের উপর প্রতিনিয়ত গুরুত্ব দেয়া হবে। শ্রমিকদের ন্যায্য ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও পরিচালনার অধিকার অক্ষুন্ন রাখা হবে এবং সংগঠিত ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকে শ্রমিক ও জাতীয় স্বার্থের রক্ষাকবচ হিসাবে গড়ে তোলা হবে।
১৯। সার্বিক জীবনমান উন্নয়নভিত্তিক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম
আমাদের দলের বিশ্লেষণ অনুযায়ী সর্বাত্মক উন্নয়নই হচ্ছে সার্থক স্বাস্থ্য কর্মসূচী ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের চাবিকাঠি। জাতীয় স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবর্ধন কর্মসূচী এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের তুলনামূলক ব্যর্থতার কারণ এই যে, এই সব কর্মসূচীকে অতীতে সামাজিক ও সংকীর্ণ পেশাগত তত্ত্ববাদ জীবন বিচ্ছিন্ন এক প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য জনসংখ্যামূলক কার্যক্রম আমাদের দেশে তখনই সফল হবে যখন এগুলোকে জীবনমান উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করা যায়। পার্টি সন্তোষের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণমূলক কার্যক্রম জীবনমূখী ও জীবন নির্ভর হয়ে উঠেছে। পার্টি এই প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা আন্দোলনকে জাতীয় পর্যায়ে সফল করার জন্য আমাদের সরকারঃ
- আমাদের দেশের নব্বই শতাংশ গ্রাম নিবাসী দরিদ্র ও নিরক্ষর মানুষের জীবনের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের অক্লান্ত চেষ্টা চালাব- এদের মধ্যে সমাজ চেতনা ও সামাজিক একতাবোধকে সংহত করার প্রয়াস চালাব- সমাজের উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ প্রচেষ্টাকে জোরদার করবে। অর্থনৈতিক শিক্ষাগত ও সামাজিক উন্নয়নের দৃঢ়ভিত্তি সহজেই জাতীয় স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমকে বাঞ্ছিত সফলতা এনে দ
২০। গণমূখী ও জীবননির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম
ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাবার জন্য সাম্প্রতিককালে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে পার্টি তাকে সমর্থন জানায়। আমাদের দলের সরকার এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের পক্ষপাতি যা জাতীয় ঐক্য আনে, উৎপাদন বাড়ায় এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক উন্নতির নিশ্চয়তা দেয়। আমাদের সরকার বিজ্ঞানভিত্তিক, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার দ্রুত প্রসার ঘটাবে যাতে করে শিক্ষিত তরুণ-তরুণী বেকারত্বের অভিশাপে না ভোগে। নিরক্ষরতা দূরীকরণ, জীবননির্ভর ও জীবনমূখী শিক্ষার ব্যবস্থা করা আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য আনুষ্ঠানিক এবং ব্যবহারিক শিক্ষা বিস্তারের জন্য সারা দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।
২১। উন্নয়ন যোগাযোগ ব্যবস্থার নিশ্চিতি
সুষ্ঠু এবং সুপরিচালিত যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র উন্নত ও সমৃদ্ধ হতে পারে না । জাতীয় অর্থনীতি, বিশেষত গ্রামীণ অর্থনীতি ও মানব সম্পদ যাতে দ্রুত উন্নতি লাভ করতে পারে সে জন্য পার্টি রেল, সড়ক, বিমান ও নৌ-পরিবহনসহ সকল যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার সর্বাত্মক উন্নতি সাধনের প্রচেষ্টাকে অব্যাহতভাবে জোরদার করে চলবে।
২২। সমৃদ্ধির চাবিকাঠি : প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ এখনও বহুলাংশে অনাবিষ্কৃত ও অল্প ব্যবহৃত। প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ উন্নয়ন ও ব্যাপক ব্যবহার জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অন্যতম নিশ্চিত উপাদান। বাংলাদেশের বিচিত্র ও বহুমূখী প্রাকৃতিক সম্পদ- পাথর, তেল, কয়লা, গ্যাস, চীনামাটি, পানি, সৌরতাপ, বনজ ও পশুজাত দ্রব্যাদি যাতে যথাযথভাবে দেশ ও জাতির উন্নয়নে ও সমৃদ্ধি অর্জনের কাজে লাগে সে জন্য পার্টির সরকার আধুনিক বাস্তবমূখী উন্নয়ন ও ব্যবহার নীতি প্রণয়ন করবে এবং সে নীতি অনুযায়ী বলিষ্ঠ কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
২৩। তুলনামূলকভাবে অনুন্নত এলাকা ও জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য ব্যাপক গণপ্রচেষ্টা
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও জনগোষ্ঠী জাতীয় উন্নয়ন প্রয়াস ও প্রক্রিয়ায় সার্থকভাবে সংশ্লিষ্ট হতে পারেনি। ঐতিহাসিক কারণে বা সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবের কারণে এসব অঞ্চল ও জনগোষ্ঠী অপেক্ষাকৃতভাবে অনুন্নত অবস্থায় আছে। এসব এলাকা ও জনগোষ্ঠীর সার্বিক মানবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে আমরা জোরদার করবো। যে সব আদিবাসী ও দুর্গম অঞ্চলের অধিবাসী উপজাতি ঐতিহাসিক ও ঔপনিবেশিক কুশাসন ও শোষণের কারণে শিক্ষাগত অর্থনৈতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে পেছনে পড়ে আছেন তাদের দ্রুত অর্থবহ উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য আমাদের পার্টি সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা বাস্তবায়িত করবে।
২৪। সশস্ত্র বাহিনী : সার্বভৌমত্বের সুনিশ্চিত রক্ষাকবচ
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী। আমাদের জাতির বীর সশস্ত্র সৈনিকবৃন্দ যাতে দেশ রক্ষার কাজে সম্পূর্ণভাবে সার্থক হয়ে উঠতে পারে সে জন্য আমাদের দলঃ
- সশস্ত্র বাহিনী যাতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, সমরোপকরণ এবং সজীব সংগঠন লাভ করে তার সার্বিক ব্যবস্থা করবে।
- জনভিত্তিক দেশরক্ষা ব্যবস্থাকে জোরদার করবে।
- দেশরক্ষা বাহিনী যাতে সকল পেশাগত ও ন্যায়সঙ্গত চাহিদা পূরণের জন্য জাতীয় সাহায্য ও সহায়তা পায় সে ব্যবস্থা করবে।
২৫। জাতীয় প্রগতির ও সমৃদ্ধি অগ্রসেনা মুক্তিযোদ্ধা
১৯৭১-এর মহান মুক্তি সংগ্রামের সেনানীরা আমাদের জাতীয় উপলব্ধি ও সংহতির কেন্দ্রীয় উপাদান। তাঁরা যাতে বাস্তবভিত্তিক সৃজনশীল, গঠনমূলক উৎপাদনমূলক কার্যক্রমে শরীক হতে পারেন সেজন্য আমাদের পার্টি ও তার সরকার সুচিন্তিত কর্মসূচী বাস্তবায়নে ব্রতী হবে। এ উদ্দেশ্যে:
- মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে তাদেরকে নিজেদের, নিজ পরিবারের ও জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধির কাজে নিয়োজিত করার কর্মপন্থাকে বলিষ্ঠতর করা হবে;
- পঙ্গু ও অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের কে প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অর্জনের সুযোগ দিয়ে তাদেরকে পুনঃউপার্জনক্ষম ও আত্মনির্ভরশীল ব্যক্তিতে পরিণত করবে;
- মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষণ ও প্রচার করবে;
- প্রতিরোধমূলক মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন মহান ঘটনা ও স্থানকে চিহ্নিত করবে এবং সেই সব ঘটনা ও স্থানকে অবিস্মরণীয় করার ব্যবস্থা করবে।
- মুক্তিযুদ্ধের খাঁটি দলিল ও প্রামাণ্য ইতিহাস জাতীয় পর্যায়ে সংরক্ষণ করে ভবিষ্যৎ বংশধরকে অনুপ্রাণিত করবে।
২৬। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও প্রসার
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য আমাদের জাতীয় পরিচয়ের ও আত্মউপলব্ধির অনস্বীকার্য উপাদান। ১৯৪৮-৫২ এর ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের সার্থকতার প্রথম মৌলিক সোপান। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য যাতে জাতীয় জীবনে পূর্ণ ও ব্যাপক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হয় সে জন্য আমাদের দল ও তার সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালাবে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মূল কেন্দ্র যাতে বাংলাদেশ ভিত্তিক হয় সে জন্য আমাদের দল সর্বাত্মক প্রয়াস চালাবে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের পার্টিঃ
- বিদ্যালয় ও বিদ্যায়তনসমূহে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চা জোরদার করবে;
- বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নয়নের জন্য নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কার্যক্রম সুসংবদ্ধ ও বলিষ্ঠ করবে;
- জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার বলিষ্ঠতর ব্যবহার ও ব্যাপকতর প্রসারের চেষ্টা করবে এবং উচ্চতর ও মাধ্যমিক শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক ও গবেষণামূলক গ্রন্থাদি বাংলায় দ্রুত রচনার বা অনুবাদের আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
২৭। বাংলাদেশী সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার বিকাশ
জাতীর স্বতঃস্ফূর্ত সৃজনশীল প্রতিভার সুষ্ঠু ও সার্বিক বিকাশের উদ্দেশ্যে আমাদের দল সংস্কৃতি, সাহিত্য ও ক্রীড়ার সংগঠিত ও বিস্তৃততর উন্নয়নের প্রচেষ্টা নেবে। এ লক্ষ্য অর্জন করার জন্য আমরাঃ
- দেশের সকল এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক সংস্কৃতি ও ক্রীড়া কেন্দ্র পর্যায়ক্রমে এবং সুবিন্যস্তভাবে গড়ে তুলব;
- সংস্কৃতি, সাহিত্য ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সকল জননির্ভর এবং জীবনমূখী লোক প্রচেষ্টাকে প্রয়োজনীয় বাস্তব সাহায্য ও সহায়তা দেবো;
- দেশের আনাচে কানাচে সংস্কৃতি, সাহিত্য ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে যে সকল প্রতিভাশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী রয়েছে তাদেরকে চর্চা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ দিয়ে তাদের সাধনালব্ধ কৃতিত্বকে জাতীয় সম্মান ও সম্পদে রূপান্তরিত করার সুসংগঠিত প্রচেষ্টা চালাবো;
২৮। ধর্মীয় শিক্ষা
ধর্ম আমাদের ঐতিহ্যের অবিভাজ্য অংশ। বাংলাদেশ বিভিন্ন ধর্মীয় মানুষের আবাসস্থল। ইসলাম এদেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্ম ও জীবনদর্শন। ইসলাম ধর্মের শিক্ষা যাতে মুসলমানদের জীবনে সম্পূর্ণভাবে প্রতিফলিত হতে পারে সেজন্য আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাব। অনুরূপভাবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা যাতে নিজ নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী ধর্ম শিক্ষা লাভ করতে পারেন সেজন্য আমাদের দল আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাবে। সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অধিকার সংরক্ষণ ও সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিশেষ যত্নবান হওয়ার বিশেষ করে অনগ্রসর জাতীয় জীবনে তাদের অধিকতর সুবিধা ও অংশগ্রহণের সুযোগের যথাযথ ব্যবস্থা করে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে সূদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
২৯। জাতীয় পররাষ্ট্রনীতির উপাদান ও লক্ষ্যঃ স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সমৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক প্রীতি ও সখ্যতা
আমাদের দলের দৃঢ় বিশ্বাস এই যে, সংগঠিত জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনের সকল প্রচেষ্টা-
বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক জগতে যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদার আসনে সমাসীন করতে পারবে। সকল জাতির স্বাধীন সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক প্রীতি, সখ্য ও শান্তি গড়ে উঠুক এবং সুরক্ষিত হোক ইহাই জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান লক্ষ। বাংলাদেশের জনগণ আন্তর্জাতিক চক্রান্ত ও সংঘর্ষের বিরোধী জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলন ঘটিয়ে আমাদের দল এমন এক পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করবে যার আওতায় সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা ভিত্তিক সাম্যের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। আমাদের দল অন্য দেশ ও জাতির অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করে যাবে। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে আমাদের মৌলিক প্রধান লক্ষ্য হচ্ছেঃ
ক) জাতিসংঘের সনদ এবং এর মূলনীতির প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন;
খ) আন্তর্জাতিক শান্তি ও সম্প্রীতি গভীরতর ও স্থায়ী করার প্রচেষ্টায় সামিল হওয়া;
গ) তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সহমর্মিতা ও সখ্যতা দৃঢ় করে তোলা;
ঘ) মুসলিম দুনিয়ার ভ্রাতৃপ্রতিম সকল দেশের সঙ্গে গভীর ও স্থায়ী বন্ধুত্ব অটুট রাখা ও সম্প্রসারিত করা;
ঙ) আরব ও লিলিস্তিনী ভাইদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষায় পূর্ণ সমর্থন দান করা;
চ) জোট নিরপেক্ষ বিশ্বের সঙ্গে মৈত্রীর বন্ধন-জোরদার করে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা;
ছ) প্রতিবেশী সকল রাষ্ট্রের সাথে বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিকটবর্তী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা দৃঢ় ও স্থায়ী করা ।
জ) এশিয়া ও অফ্রিকাসহ দুনিয়ার যে সকল এলাকায় অত্যাচারী ঔপনিবেশিক স্বৈরাচারী সংখ্যালঘু সাম্রাজ্যবাদী ও সম্প্রাসরণবাদী শাসন ও শোষণ চলছে সে সব অঞ্চলের জনগণের বিপ্লবী মুক্তি আন্দোলনে সকল প্রকার সমর্থন দেওয়া।
পার্টির পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অটুট রেখে সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করে এমন এক শান্তিপূর্ণ ও উন্নয়নমূখী পরিবেশ গড়ে তোলা যা বাংলাদেশের জনগণের উন্নয়ন, সুখ ও সমৃদ্ধির সহায়ক হবে।