সরকার পতনের একদফা দাবিতে আগামী ২৮শে অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসঙ্গে পূজার ছুটির মধ্যে সরকারকে মানে মানে পদত্যাগের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া জনসমাবেশকে ঘিরে বিএনপি’র আড়াইশ’ নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। বুধবার বিকালে সরকার পতনের একদফা দাবি ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে নয়াপল্টনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী ২৮শে অক্টোবর শনিবার ঢাকায় মহাসমাবেশ করবো। এখান থেকে মহাযাত্রা শুরু হবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আর থেমে থাকবো না। অনেক বাধা ও বিপত্তি আসবে। সেই সমস্ত বাধা ও বিপত্তি অতিক্রম করে মহাসমাবেশকে সফল করে জনগণের অধিকার আদায় করতে আমাদেরকে সামনে ছুটে যেতে হবে। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সামনের কয়েকটা দিন সময় আছে।
এই পূজার ছুটি। এরমধ্যে সিদ্ধান্ত নেন যে, আপনারা কি করবেন। পদত্যাগ করে সসম্মানে বিদায় হবেন না কি জনগণ দ্বারা বিতাড়িত হবেন। তাদেরকে আমরা আহ্বান জানাই, জনগণের ভাষা বুঝতে পেরে, জনগণের আওয়াজ বুঝতে পেরে আপনারা পদত্যাগ করেন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে এই সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের পতন ঘটাবো, ইনশাআল্লাহ্।
সমাবেশকে ঘিরে আড়াই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার এই সমাবেশকে পণ্ড করতে মঙ্গলবার থেকে এখন পর্যন্ত ২৫০ জনেরও বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। এটা থেকে প্রমাণিত হয়, এই সরকার অত্যন্ত ভয় পেয়েছে, ভীত হয়েছে এবং তারা কাঁপছে। ক্ষমতা শেষ হওয়ার যতই দিন ঘনিয়ে আসছে ততই তারা এ সমস্ত অপকৌশল অবলম্বন করছে। এদেশের জনগণ তাদেরকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, নো। আর নয়। এখন তোমরা দয়া করে মানে মানে বিদায় হও। মামলা দিয়ে, মামলা করে এবং গ্রেপ্তার করে দেশের মানুষকে আর ঠেকিয়ে রাখা যাবে না মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই কথা তারা যত তাড়াতাড়ি বুঝবে- ততই তাদের ভালো হবে। একটা সেফ এক্সিট নিয়ে বের হয়ে যেতে পারবে। আর এখন আমরা কথা বেশি বলতে চাই না। আমরা কাজ করতে চাই। কাজ শুরু করেছি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মঙ্গলবার আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। রাত ২টায় এসেছি। আমাদের ডাক্তাররা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। কত ভয়াবহ, কত অমানবিক এবং কত দানবীয় এই সরকার যে, ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ন্যূনতম সুযোগটুকু দিচ্ছেন না।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, প্রতিটা সভা করার আগেই আমাদের কিছু কিছু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশের জেলখানায় আমাদের নেতাকর্মীদের ভর্তি হয়ে গেছে। আমাদের আন্দোলন কি থেমে গেছে। গ্রেপ্তারে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ভয় পায় না। আর এই সরকারকে যেতেই হবে। একটা ভঙ্গুর অবস্থায় এই সরকার আছে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমি আন্দোলন- সংগ্রামে ছিলাম, এখনো আছি আর ভবিষ্যতেও আপনাদের সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রামে থাকবো।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আজকে দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। কারণ একদলীয় বাকশাল দূর করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তাই আজকে আমরা রাজপথে নেমেছি। উদ্দেশ্যে হচ্ছে, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই আমরা রাজপথে আছি এবং থাকবো।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই অবৈধ প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে আলোচনা হবে। তাছাড়া আলোচনা হবে না। তাই আগামীর দিনগুলোর প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের গুরুত্বপূর্ণ। আর সরকারকে বলবো, সামনে পূজার ছুটি আছে। এই সময়টাতে সিদ্ধান্ত নিয়ে পদত্যাগ করেন। তারপরে আমরা আলোচনা করতে পারি।
কাকরাইল থেকে মতিঝিল পর্যন্ত জনসমুদ্র:
রাতে পুলিশের কড়াকড়ির পর ভোর হতেই নয়াপল্টনে আসতে শুরু করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। দলীয় কার্যালয়ের সামনে তৈরি মঞ্চের চারপাশে জড়ো হন তারা। ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা ওয়ার্ডসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে অসংখ্য নেতাকর্মী খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন। দুপুর গড়াতেই জনস্রোত শুরু হয় নয়াপল্টনমুখী। বেলা ২টায় সমাবেশ শুরুর আগেই নেতাকর্মীদের ঢল মালিবাগ, কাকরাইল, নাইটিংগেল মোড়, মৎস্য ভবন, পল্টন, ফকিরাপুল, মতিঝিল, আরামবাগ, পীর জঙ্গি মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় নেতাকর্মীদের সরকারবিরোধী নানা স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে নয়াপল্টন এলাকা।
দিকে জনস্রোতের কারণে নাইটিংগেল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়া সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন এলাকায় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।