ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম পরিবর্তন করে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়নের উদ্যোগকে ‘জনগণের সাথে প্রতারণা’র শামিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি মনে করে, এটা (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) নাম পরিবর্তন করে নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়নের করার নামান্তর। তারা এটার নাম পরিবর্তন করে জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে।’
আমরা আবারো বলছি, আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি সম্পূর্ণ বাতিল চাই। এটা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে আইন, মানুষের অধিকারের বিরুদ্ধে আইন, মিডিয়ার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আইন এটা রাখার কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। সোমবার মন্ত্রিসভা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের নাম পরিবর্তন করে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামকরণে নতুন আইনের খসড়া অনুমোদন দেয়।
২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি পাস হয়েছিল। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ব্যাপক সমালোচিত ৫৭সহ কয়েকটি ধারা বাতিল করে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হলেও পুরনো আইনের বাতিল হওয়া ধারাগুলো নতুন আইনে রেখে দেয়ায় এর অপপ্রয়োগের শঙ্কা ছিল উদ্বেগের কেন্দ্রে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার লেখক মুশতাক আহমেদ ২০২১ সালে কারাগারে মারা যাওয়ার পর ওই আইন বাতিলের দাবিতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছিল।
গত ৭ আগস্ট দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভার্চুয়াল সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকে বিএনপি মহাসচিব।
মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা : মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এগুলো হচ্ছে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করা। বিদেশীদের একটা প্রচণ্ড চাপ আছে, আন্তর্জাতিকভাবে চাপ আছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তাদের বুঝানোর চেষ্টা করা আরকি। এটা হচ্ছে, খুব ঝড়ের মধ্যে একটা উট পাখি মাথা গুঁজে থাকে। ওরা ভাবছে- এভাবে মানুষকে বোকা বানিয়ে খুব বুদ্ধিমানের কাজ করছে।’ ‘তারা মানুষকে বোকা ভাবে। এটা কিন্তু ঠিক না। এটাতে প্রমাণিত হচ্ছে যে, তাদের লক্ষ্যটা হচ্ছে একই কায়দায় তারা করছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের পুরো বিষয়টা আমরা এখনো পাইনি। আমরা দেখতে চাই যে, কী এসেছে তা দেখে গণমাধ্যমের সামনে পরে কথা বলব। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে।’
আমাদের কথা খুব স্পষ্ট- আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পুরোপুরি বাতিল চেয়েছি। এটা নিয়ে কথা বলেছি, বাতিলের দাবি জানিয়েছি, সেমিনার করেছি। এই আইনটা সবচেয়ে নিকৃষ্ট কালো আইন স্বাধীনতার জন্য, গণতন্ত্রের জন্য। এই আইন কোনো মতেই থাকা উচিত না, আমরা বাতিল চাই।
সরকার আবারো ‘যেনতেনভাবে’ ক্ষমতায় যাওয়ার চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন সামনে নির্বাচন আছে। এজন্য তারা (ক্ষমতাসীনরা) একটু চেহারা পাল্টিয়ে ভদ্র লোক সাজছে সেই হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা।
লক্ষ্য একটাই- যেনতেন প্রকারে সেটা শক্তি দিয়ে হোক, যেভাবেই হোক তারা আবার একইভাবে নির্বাচনটাকে তাদের পক্ষে নিয়ে আসতে চায়। সেভাবেই তারা নীলনকশার চক্রান্ত করছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিরোধী দল যাতে নির্বাচন করতে না পারে তার সবরকম ব্যবস্থা করছে। অর্থাৎ দেয়ার ইজ নো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, আমাদের নেতাকর্মী, সিনিয়র নেতাদের আটকিয়ে রাখা, রাজনৈতিক দল হিসেবে যে কাজগুলো করার সাংবিধানিক অধিকার আমার আছে সেগুলো থেকে আমাকে বিরত রাখা এবং সবচেয়ে বড় জিনিস যেটা হচ্ছে যে, নির্বাচনটাকে সম্পূর্ণভাবে তাদের আবার ক্ষমতায় যাওয়ার পথকে প্রশস্ত করার জন্য সেটা ব্যবহার করা, তার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না এই সরকারের অধীনে কখনো কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। সেই কারণে আমাদের পরিষ্কার কথা পদত্যাগ করুন, সংসদ বিলুপ্ত করুন এবং একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যবস্থা করে তাদের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করুন।
একদফার নতুন কর্মসূচি শিগগিরই : মির্জা ফখরুল বলেন, এক দফার যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি আমরা শিগগিরই ঘোষণা করব আবার। সর্বশেষ গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে পাঁচ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি করে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো।
এটা কোন ধরনের রাষ্ট্র : মির্জা ফখরুল বলেন, আপনি দেখেন, গতকাল আমাদের ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম সাহেব হাইকোট থেকে জামিন পেয়েছেন... জেল গেটে আবার তাকে নতুন মামলা দিয়ে আটক করে রেখেছে। প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই এটা হচ্ছে। রাজশাহীর মিলন জামিন পেয়েছেন, জেল গেটে আবার নতুন মামলা দিয়ে তাকে আটকিয়ে রেখেছে।
এটা কোন ধরনের রাষ্ট্র? কোন ধরনের প্রশাসন, কোন ধরনের শাসনব্যবস্থা যে, আপনিই শুধু বিরোধী রাজনীতি করার কারণে আপনার বিরুদ্ধে যে মামলা দেবে জামিন পাওয়ার পরেও তাকে জেলে রাখার জন্য কী করছে সরকার। হাইকোট থেকে জামিনের পরও ছাড়া পাচ্ছে না। তিনি বলেন, দেখেন কী অবস্থা- হাইকোর্টের দুইজন বিচারক কত অসহায়। কালকে (সোমবার) তারা বলছেন, আপনারা আনছেন (জামিনের আবেদন) দেখি। আমাদের কথাও কেউ শুনে না। আমরা আদেশ দেই যে অ্যারেস্ট করা যাবে না, অ্যারেস্ট তো করেই তারপরে আবার রিমান্ডেও পাঠায়। এ কথা উনারা (বিচারকরা) বলছেন। এটা আমার কথা না, আপনারা নিশ্চয় পত্রিকায় দেখেছেন। এই একটা অবস্থায় তারা নিয়ে এসেছে।
দুর্ভাগ্য আমাদের, এর মধ্যেও কিছু মানুষ, কিছু বুদ্ধিজীবী, কিছু আপনাদের পত্রিকার লোকেরা তারা আবার এটাকে ডিফেন্ড করে। ডিফেন্ড করার কী আছে? এটা পরিষ্কার, দিনের আলোর মতো সত্য যে, আওয়ামী লীগ একটা ফ্যাসিস্ট পার্টি, তারা এই গভার্মেন্টকে ফ্যাসিস্ট গভার্মেন্ট হিসেবে চালাচ্ছে। সাধারণ মানুষের যে অধিকারগুলো সেই অধিকারগুলো তারা সম্পূর্ণ হরণ করে নিয়েছে।
গত ৭ আগস্ট দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন বিএনপি মহাসচিব।
ঢাকার প্রবেশপথের কর্মসূচি প্রসঙ্গে : ২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে লোকসমাগম বেশি হয়নি বলে প্রচারণা আছে। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনার এই কথার সাথে আমি একমত নই। এই কর্মসূচিতে আমাদের অনেক লোক, হাজার হাজার, লক্ষ নেতাকর্মী ছিলেন।’
পুলিশ হামলা চালিয়েছে, আপনারা নিজেরাও সব দেখেছেন। পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে, মারধর করেছে, এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি হয়েছে। আপনারা দেখেছেন যে, আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্যকে পর্যন্ত ওরা কিভাবে হামলা করেছে, লাঠিপেটা করেছে। আমাদের সিনিয়র নেতাদের পিটিয়েছে, কতজন মেরেছেন, কত আহত হয়েছে, কত গ্রেফতার হয়েছে সবই গণমাধ্যমে এসেছে।