‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিম্নোক্ত বাণী দিয়েছেন :—
বাণী
“২০০৭ সাল থেকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৫ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের চর্চা ও অনুশীলন উৎসাহিত করা হয়। গণতন্ত্র অর্জনের সংগ্রামে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। জীবনদানকারী শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং আহতদের সমবেদনা জানাচ্ছি।
গণতন্ত্র সর্বজনীন যা, কোন দেশ বা অঞ্চলের অন্তর্গত নয়। গণতান্ত্রিক সমাজে ব্যক্তি মানুষের মর্যাদা সমুন্নত থাকে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় মানুষকে কৃতদাসে পরিণত করা যায় না। একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র—সমাজেই কেবলমাত্র মানুষের অধিকার নিশ্চিত হয়। জনগণের স্বাধীন ইচ্ছার ওপর ভিত্তি করে তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নির্ধারণ; সামাজিক—সাংস্কৃতিক ব্যবস্থাসহ জীবনের সকল দিকগুলোর স্বত:স্ফুর্ত পূর্ণপ্রকাশ ঘটে। সারাবিশে^ বহুমত ও পথের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতি মানুষের আগ্রহকে ভূলুন্ঠিত করে বিভিন্ন দেশে এখনও একদলীয় দুঃশাসনের কালো থাবা বিরাজমান। বাংলাদেশেও নাগরিক স্বাধীনতা, ভোটাধিকার, মানবিক মর্যাদা ও মানবিক সাম্য হরণ করে এক সর্বনাশা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম ছিল। নানা কালাকানুনের মাধ্যমে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ, ভিন্নমতের কারণে অনেকেই গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার করা হয়েছিল। বাংলাদেশের কিংবদন্তিতুল্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আপোষহীন যোদ্ধা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল। গণতন্ত্রের প্রতি দৃঢ় অঙ্গিকারাবদ্ধ বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের ওপর নামিয়ে আনা হয়েছিল মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়ার বর্বরোচিত অত্যাচার। দেশবাসী এক ভয়াবহ দুর্দিন অতিক্রম করে ছাত্র—জনতার ঐতিহাসিক রক্তস্নাত আন্দোলনের বিজয়ের মধ্য দিয়ে এখন কিছুটা মুক্তির নি:শ^াস নিতে পারছে।
এবারের আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের মূল থীম হলো—‘গভর্নেন্স ও সিটিজেন এনগেজমেন্টের জন্য এআই নেভিগেট করা’। সুশাসন ও নাগরিক অংশগ্রহণের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ইতোমধ্যে গত দেড় দশক ধরে নাগরিক স্বাধীনতার ক্রমাগত ক্ষয় হয়েছে। নির্বাচন পদ্ধতি, বহুত্ববাদ, সরকারের জবাবদিহিতা, রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ ইত্যাদি নাগরিক স্বাধীনতা ভয়ানকভাবে সংকুচিত করা হয়েছিল।
বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের এমন একটি শাসন ব্যবস্থায় উপনীত হতে হবে যেখানে জনগণ সরাসরি শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে পারে। জনগণের মতামতই হয় সেই সরকারের পরিচালনার ভিত্তি। কেবলমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
আমরা দুঃসময় কাটিয়ে উঠে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি, এখন কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার সার্বিক প্রচেষ্টায় আমাদেরকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।”