image

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর বিবৃতি

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এবং গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসু’র সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে নির্যাতনের পর আবারও নির্যাতন চালানোর উদ্দেশ্যে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে, যা গভীর উদ্বেগ-উৎকন্ঠার সৃষ্টি করেছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি রিয়াদ ইকবাল এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাব গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার পর এখনও পর্যন্ত তাদের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। দেশব্যাপী নিরীহ ছাত্র-জনতা এবং বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসহ অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও পেশাজীবিদেরকে নির্বিচারে গ্রেফতার, গুম করে রাখা, নির্যাতনের পর পুনরায় নির্যাতনের লক্ষ্যে সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে বারবার রিমান্ডে নেয়া, গ্রেফতারকৃতদের ওপর সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন চালানোর ঘটনাকে বর্বরোচিত ও কাপুরুষোচিত আখ্যায়িত করে অবিলম্বে এসব দমন নিপীড়ণ বন্ধ করার আহবান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ভয়-ভীতির কারণে দেশব্যাপী সরকারের নির্মম ও নির্দয় অত্যাচার এবং নিপীড়ণের সব তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হচ্ছে না, তবে বিভিন্নভাবে যে সকল তথ্য আসছে সেগুলো রীতিমতো লোমহর্ষক এবং মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কোটা সংস্কারের ছাত্র আন্দোলনের কারণে সাধারণ ছাত্র-জনতাকে এবং একই সাথে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মী ও সাধারণ সমর্থকদেরকেও বিভিন্ন এলাকায় দিনে-রাতে ও কারফিউ চলাকালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা বøক রেইড দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। অনেককে তুলে নিয়ে গেলেও তাদের খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছে না। আটকের ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও গ্রেফতারকৃত অনেককে ৪/৫ দিন বা এরও বেশী সময় পর আদালতে নেয়া হচ্ছে। আটক করার পর আদালতে নেয়ার আগে এবং রিমান্ডে থাকা অবস্থায়, এমনকি কারাগারে থাকা অবস্থায় আটককৃতদের ওপর অমানুষিক ও অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। শিক্ষার্থী বা নেতাকর্মীদের আটক করতে বাসা বাড়িতে অভিযানের নামে পরিবারের সদস্যদের সাথেও অশালীন আচরণ ও বাসার আসবাবপত্র ভাংচুর করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বাসায় না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের আটক করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন থানায় মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নাম সেসব মামলায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে সম্পৃক্ত করে বা পুরোনো অন্য মামলায় অজ্ঞাত আসামী হিসেবে গ্রেফতার ও হয়রানী করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের কর্মস্থলে পর্যন্ত হানা দেয়া হচ্ছে আটকের জন্য।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারীদেরকে ডিবি কার্র্যালয়ে তুলে নিয়ে এসে চাপ প্রয়োগ করে নির্যাতনের মাধ্যমে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা যায় কিন্তু আবেগ-অনুভূতি এবং সঙ্গীদের রক্ত মাখা শার্টের গন্ধ শিক্ষার্থীদের বিবেককে সবসময় তাড়া করবে, সুযোগ পেলেই তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেটির বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে।

গণগ্রেফতারের নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা নেতাকর্মীদের বাসায় ছিনতাই ও লুটপাটের দৃশ্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।

এর আগেও এসব অন্যায়, অত্যাচার, আটক, নির্যাতন ও নিপীড়ণের প্রতিবাদ করা হয়েছে, কিন্তু ফ্যাসিষ্ট ও কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী ভোটারবিহীন সরকার তা কর্ণপাত করেনি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সরকারের এসব মানবাধিকার বিরোধী কর্মকাÐের প্রতিবাদ করে তা বন্ধ করার আহŸান জানালেও সরকার তা অব্যাহত রেখেছে এবং দিন দিন তা বৃদ্ধি করছে। কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন অনির্বাচিত ফ্যসিষ্ট সরকারের ক্ষমতার ভীত নড়িয়ে দিয়েছে। আন্দোলন দমনের নামে নিষ্ঠুরভাবে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস চালিয়ে শত শত ছাত্র-জনতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যারা নিহত কিংবা আহত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসী পেটোয়া বাহিনীর ছোঁড়া গুলিতে হয়েছেন। পত্রিকার তথ্যমতে, রাজধানীর ৩১টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতের সংখ্যা ৬ হাজারের অধিক। যেসব ছাত্র-জনতকে হতাহত করা হয়েছে তাদের পরিবারকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে, সরকারের নির্দেশে মৃতদের ময়না তদন্ত রিপোর্ট পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে অনেক ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেছে। অনেককে ময়না তদন্ত ছাড়াই আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের মন্ত্রী-নেতারা বারবার বলছেন-প্রকৃত সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে, কিন্তু বাস্তবতা হলো-প্রকৃত অপরাধীদের না খুঁজে বিএনপি সহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমনে উঠেপড়ে লেগেছে সরকার। তাদের এই হত্যাযজ্ঞ থেকে বাসা বাড়ির বেলকনি, পড়ার ঘর বা ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট সোনামনিরা পর্যন্ত বাদ যায়নি। শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে সরকার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে যে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করছে সেটির সর্বশেষ প্রমাণ হলো-দেশ বিদেশের সকল নাগরিক দেখার পরও রংপুরের আবু সাঈদ এর মৃত্যুকে গুলিতে নয়, ইটের আঘাতে মৃত্যু বলা হচ্ছে। তবে মিথ্যাচার, অপকৌশল ও নির্যাতন-নিপীড়ণ চালিয়ে প্রকৃত সত্যকে জনগণ থেকে আড়াল করতে পারবে না অবৈধ আওয়ামী সরকার। তাই সকল দায় নিয়ে সরকারের উচিৎ জনদাবীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পদত্যাগ করা।”

সরকার কর্তৃক প্রকাশিত চলমান আন্দোলনে নিহতদের নাম ও সংখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে এর সংখ্যা অনেক বেশী। কিশোর ও আগে নিহতের নাম এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। অবিলম্বে সঠিক তালিকা প্রকাশের দাবী জানায় বিএনপি’র মহাসচিব।

বিএনপি মহাসচিব বিবৃতিতে এ পর্যন্ত গ্রেফতারকৃত বিএনপি ও বিরোধী দলের সকল নেতৃবৃন্দসহ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধ এবং অবিলম্বে সকলের নি:শর্ত মুক্তির জোর আহবান জানান।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এবং গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসু’র সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর এবং জামায়তের সাধারণ সম্পাদক জনাব গোলাম পারওয়ার নির্যাতনের পর আবারও ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের ঘটনাকে আতঙ্কজনক বলে উল্লেখ করে তাদের রিমান্ড বাতিলেরও আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব। বারবার মিরান্ডে নেওয়া এবং রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতন সংবিধান বিরোধী। সর্বচ্চো আদালতের এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। নি¤œ আদালতে ঢালাও রিমান্ড দেওয়া সম্পূর্ণ আইন বিরোধী। রিমান্ডে নেওয়া বন্ধ করার জন্য দাবী জানান মহাসচিব।

বিএনপি মহাসচিব বিবৃতিতে গোয়েন্দা পুলিশ কর্তৃক তুলে নিয়ে যাওয়ার পর এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান না পাওয়ার ঘটনাকে গভীর উদ্বেগজনক আখ্যায়িত করে অবিলম্বে তাদেরকে জনসমক্ষে হাজির করার আহবান জানান।


রিলেটেড প্রোগ্রাম এবং প্রেস রিলিজ

আরো দেখুন