২৫ জুন ২০২৪ ইং
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র
জাতীয় স্থায়ী কমিটির ২৪ জুন ২০২৪ এ অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভার সিদ্ধান্ত সমূহ
গত ২৪ জুন ২০২৪ তারিখ, সোমবার, রাত ৮.৩০ টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য যথাক্রমেঃ
১. ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন
২. মির্জা আব্বাস
৩. বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
৪. ড. আব্দুল মঈন খান
৫. জনাব নজরুল ইসলাম খান
৬. মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
৭. জনাব আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী
৮. জনাব সালাহ উদ্দিন আহমেদ
৯. বেগম সেলিমা রহমান
১০. জনাব ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু
সভায় আলোচ্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে নিম্নে বর্ণিত সিদ্ধান্ত সমূহ গৃহীত হয়।
১। সভায়, গত ৩ জুন ২০২৪ অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে মহাসচিব জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভাকে অবহিত করেন।
২। সভায়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সবচেয়ে প্রিয় নেতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া’র স্বাস্থ্যের অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া’র রোগ মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করা হয়। সভা মনে করে, গণতন্ত্র পুণূরুদ্ধারের জন্য দেশনেত্রীর অবদান, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ সাম্প্রতিক গণতান্ত্রিক বিশে^ অতুলনীয়। সভা আরো মনে করে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা প্রদান করে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার লক্ষে এই হীন চক্রান্ত করছে এই অবৈধ সরকার। সভা আরো মনে করে, শুধু মাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে দেশনেত্রীকে বন্দি করে রাখা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনী এবং সংবিধান বিরোধী। এই মামলায় জামিন পাওয়া তাঁর সাংবিধানিক অধিকার। সভা মনে করে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন যাবৎ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। চিকিৎসকেরা তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণের সুপারিশ করেছেন। দলের পক্ষ থেকে তাঁকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে প্রেরণের দাবী জানানো হয়েছে। এমন কি পরিবারের পক্ষ থেকে দুই বার তাঁর বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু অবৈধ সরকার তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষে দেশনেত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্ছিত করেছে। সভায় অনতিবিলম্বে দেশনেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করা হয়। সভায় দেশনেত্রীর মুক্তির দাবীতে আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই লক্ষে প্রয়োজনীয় কর্মসূচী প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৩। সভায়, সম্প্রতি শেখ হাসিনার ভারত সফরে ভারতের সঙ্গে ২টি চুক্তি ৫টি নতুন সমঝোতা স্বারক ও ৩টি চুক্তি নবায়নসহ ১০টি চুক্তি সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভায়, সম্পাদিত চুক্তিগুলিতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশংকা প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে, তিস্তাসহ অভিন্ন নদী গুলির পানি বন্টনের কোন চুক্তি না করা, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা বন্ধ না করা, একতরফা ভাবে ভারতকে সকল সুবিধা প্রদান করে বাংলাদেশের স্বার্থ ব্যাপকভাবে ক্ষুন্ন হয়েছ। কানেকটিভিটির নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত রেল যোগাযোগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগের সমঝোতা, কৌশলগত ও অপারেশনাল খাতে সামরিক শিক্ষা সহযোগীতা, ঔষধ সংক্রান্ত সমঝোতা, বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতের অবাধ বিচরণ এবং ভারতের ইনস্পেস ও বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা, রেলমন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা, সমুদ্র বিষয়ক গবেষণায় দুই দেশের সমঝোতা ইত্যাদি সমঝোতাগুলোতে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়েছে। ভারতকে সকল প্রকার সুবিধা প্রদানের বিনিময়ে ভারতের কাছে থেকে বাংলাদেশের কোন স্বার্থ আদায় করতে শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন এবং এটা ম্যান্ডেট বিহীন অবৈধ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বহিঃপ্রকাশ। এই অবৈধ সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে ভারতের উপর নির্ভরশীল করে ফেলছে। সভায়, এই চুক্তিগুলিকে বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী হওয়ায় বিএনপি এই চুক্তিগুলি প্রত্যাক্ষাণ করছে। এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত সংবাদ সম্মেলন আগামী ২৮ জুন ২০২৪ বিকাল ৩টা অনুষ্ঠিত হবে।
৪। সভায়, সম্প্রতি মিয়ানমার কর্তৃক বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত জলসীমায় নির্বিচারে গুলি বর্ষণের ফলে বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডের সঙ্গে সেন্টমার্টিনের যোগযোগ বন্ধ হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে, এই অবৈধ সরকারের নতজানু পরারষ্ট্রনীতির কারনেই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বারবার হুমকির সম্মুখিন হচ্ছে। এই বিষয়ে অবৈধ সরকার জনগণকে সুস্পষ্টভাবে কোন তথ্য সরবরাহ করছে না। সভা অনতিবিলম্বে মিয়ানমার কর্তৃক বাংলাদেশের সীমান্তে গুলিবর্ষণ বিষয়ে জনগণের নিকট ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য সরকারের নিকট আহব্বান জানায়।
৫। সভায়, বৃহত্তর সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। সভা মনে করে, কিশোরগঞ্জে হাওড়ের মাঝখানে সড়ক নির্মাণ এবং বেশ কিছু এলাকায় মাটি ভরাট করে কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণ করায় ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানি দ্রæত নিষ্কাশিত না হওয়ার কারনে এই ভয়াবহ দুর্যোগ সৃষ্টি হচ্ছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জ শহরসহ বিভাগের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানির তলে যাওয়ায় অসংখ্য মানুষ সীমাহীন দূদর্শার মধ্যে পড়েছে। দূর্গত এলাকায় সরকারের কোন ত্রাণ তৎপরতা দেখা যায়নি। অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের জন্য সভায় দাবী জানানো হয়। বিএনপি’র একটি ত্রাণ টিম অতিদ্রæত সিলেট সফর করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৬। সভায়, গত ১ মাসে ঔষধের মূল্য ১০% থেকে ৪০% বৃদ্ধি এবং সেই সঙ্গে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভায়, এই মূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ জনগণের যে দূর্ভোগের জন্য সরকারের দূর্নীতি ও ভ্রান্তনীতিকে দায়ী করা হয়। অবিলম্বে ঔষধসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রবাদির মূল্য হ্রাসের জোর দাবী জানানো হয়।
৭। সভা শেষে সভাপতি সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভা মুলতবী করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মহাসচিব
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি