১২ মার্চ ২০২৪
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির বিবৃতি
গতকাল ১১ মার্চ রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা গত ৭ই মার্চ রাতে সুপ্রীম কোর্ট বার সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার সমর্থিত আইনজীবীদের নিজেদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীম কোর্টের ভিতরে বহিরাগতদের সহিংস আক্রমণ ও এ নিয়ে উল্টো বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী ব্যারিষ্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ অন্যান্য আইনজীবীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে নিম্নোক্ত বিবৃতি দিয়েছে ঃ
“পূর্বের দুই বছরের মতো এবারও সুপ্রীম কোর্ট বার সমিতির নির্বাচন নিয়ে নজীরবিহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সরকার সমর্থিত আইনজীবীদের দুই গ্রুপের মধ্যে চরম মারামারির ঘটনা ঘটে। সহিংস সংঘাতে সরকার সমর্থিত সাদা প্যানেলের আইনজীবীদের ওপর সরকারী দলের সমর্থক স্বতন্ত্র সম্পাদক প্রার্থীর বহিরাগত যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডার’রা নারকীয় হামলা চালায়। এক পর্যায়ে ভোট গণনা ছাড়াই নির্বাচন কমিশন সম্পাদক পদে এ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথিকে বিজয়ী ঘোষণা করে। সর্বসম্মুখে সরকার সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর বহিরাগত লোকজন ভোট গণনাকে কেন্দ্র বারের অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করে পুলিশের উপস্থিতিতেই অপর গ্রুপের সাদা প্যানেলের সমর্থক আইনজীবীদের বেধড়ক মারধর করে। এই সন্ত্রাসী ঘটনা সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ইতিহাসে দৃষ্টান্তহীন। আসলেই ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন অপরাধপ্রবণ একটি দল।
এদিকে প্রকৃত হামলাকারী ও এদের পৃষ্ঠপোষকদের আড়াল করতে একটি সাজানো মামলা দায়ের করে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল মনোনীত সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিষ্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবী ব্যারিষ্টার ওসমান চৌধুরীকে গ্রেফতার করাসহ অনেকের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়—যাদের ঐ ঘটনার সাথে কোন সংশ্লিষ্টতাই ছিল না। ব্যারিষ্টার কাজল ও ব্যারিষ্টার ওসমান চৌধুরীকে আটক করার পর নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। এই ঘটনা আওয়ামী দুঃশাসনের এক ভয়াবহ হিংস্ররুপ।
জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার, পেশাজীবী সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়নসহ কোথাও আর সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচনের চিহ্ন রাখবে না ডামি সরকার। গণতন্ত্রের স্থায়ী নিরাপত্তা ও ঐতিহাসিক সার্থকতার প্রতি আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী চিরদিনই বিদ্বেষপরায়ণ। বাংলাদেশে চলছে শেখ বংশের মধ্যযুগীয় শাসন। তাপস আর পরশের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে দেশের সর্বোচ্চ বিচার প্রাঙ্গণকে কলুষিত করা হলো। দেশের মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল সুপ্রীম কোর্টও ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের করাল গ্রাসের আওতামুক্ত থাকছে না। ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা থেকে বঞ্চিত হয়ে মানুষের মনে নেমে এসেছে হতাশা। বন্দুকের নলের মুখে একজন প্রধান বিচারপতিকে নামিয়ে দেয়ার স্বীকারোক্তির পরেও সর্বোচ্চ আদালত কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় জনমনে বিচার বিভাগের অসহায়ত্বকেই প্রকট করেছে। ব্যারিষ্টার কাজলকে গ্রেফতার ও রিমান্ড তারই একটি নমুনা বা উপসর্গ মাত্র। অশুভ স্বৈরশাসনে সমাজ—সংস্কৃতি, সভ্য আচরণ আজ বিপন্ন। প্রকৃত রোগ হচ্ছে অনির্বাচিত, অবৈধ, ফ্যাসিবাদী ডামি সরকার। ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ এবং জনগণের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সর্বত্র সুশাসন ও আইনের শাসন কায়েম করা সম্ভব নয়। বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটি ব্যারিষ্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ অন্যদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার ও রিমান্ডের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। জাতীয় স্থায়ী কমিটি ব্যারিষ্টার কাজল ও ব্যারিষ্টার ওসমান চৌধুরী’র অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি এবং মিথ্যা মামলা ও রিমান্ড প্রত্যাহারের জোর আহবান জানাচ্ছে।
জাতীয় স্থায়ী কমিটি সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তথাকথিত নির্বাচনে জালিয়াতি ও প্রহসনের ফলাফল বাতিল করে নতুনভাবে নির্বাচন ঘোষণার জোর আহবান জানাচ্ছে।”
(অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী)
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি।