২৭ জানুয়ারী ২০২৪
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটি কতৃর্ক গৃহীত সিদ্ধান্তক্রমে
বিএসএফ কতৃর্ক বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) এর সদস্যকে হত্যার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি
“গত ২১ জানুয়ার ২০২৪, ভোরে যশোর সীমান্তের ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্ট—সংলগ্ন এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করে। সারা পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ—ভারত সীমান্ত সবচেয়ে সহিংস ও রক্তস্নাত। ভারত কতৃর্ক বারবার প্রতিশ্রম্নতি দেয়া হলেও বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশী নাগরিকদেরকে হত্যার ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিনিয়তই প্রাণহানীর সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে গণমাধ্যমে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে ৭ বছরে ২০১ জন বাংলাদেশী নাগরিক বিএসএফ এর গুলিতে নিহত হয়েছে।
সিপাহী মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে গুলি করে হত্যার পর বিএসএফ এর পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য। বিএসএফ এর পক্ষ থেকে বলা হয় ‘তিনি (নিহত ব্যক্তি) বিজিবির সদস্য তা তারা বুঝতেই পারেনি, তিনি লুঙ্গী ও টিশার্ট পরে ছিলেন এবং পাচারকারী দলের সঙ্গে তাকে ভারতের সীমানার ভিতরে দেখা গিয়েছিল। একজন বিজিবি সদস্য কিভাবে লুঙ্গী আর টিশার্ট পরে পাচারকারী দলের সাথে মিশে থাকতে পারেন সেটি তাদের বোধগম্য নয়—এই বয়ান শুধু বানোয়াটই নয়, ভারতীয় নীতি নির্ধারকদের ‘বিগ ব্রাদার’ সুলভ গরীমা থেকে উৎসাহিত হয়ে বিএসএফ তাদের হত্যাকান্ডের পক্ষে সাফাই গাইছে। একজন বিজিবি সদস্য কখনোই লুঙ্গী ও টিশার্ট পরে পাচারকারী দলের সাথে থাকতে পারেন না। বিএসএফ এর মন্তব্যের সাথে ভারতের মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুম’ও দ্বিমত পোষণ করেছে। বিএসএফ এর এহেন আচরণের ইতিহাস যুগপত হিংসাশ্রয়ী ও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। বরাবরই বিএসএফ এর কৃত অপরাধকর্ম এবং বয়ানের মধ্যে দুস্তর ব্যবধান থাকে। তাদের আচরণে মনে হয় তারা আদিম ও মধ্যযুগ পেরোতে পারেনি। মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে হত্যা করার পর তাদের মনগড়া বয়ানকে বাংলাদেশের মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে। এই মর্মস্পর্শী হত্যাকান্ড বাংলাদেশ জুড়েই ক্ষোভ ও বিক্ষোভে আলোড়িত। জ¦লে উঠেছে বাংলাদেশ। ভারতের উচ্চাকাঙ্খী নীতির কারণেই সীমান্তে রক্তপাত থামছে না। বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাকে ‘ব্লাড—স্পোর্ট’ বা রক্তক্ষয়ী খেলায় পরিণত করেছে। বাংলাদেশের মানুষকে নতজানু রাখার এটি একটি আধিপত্যবাদী বার্তা।
এতদিন ভারতীয় সীমান্তরক্ষীবাহিনী বিএসএফের হাতে সাধারণ বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। আর এখন সীমান্তে বিজিবিরও নিরাপত্তা নেই। অন্য দেশের সীমান্তরক্ষীবাহিনীর হাতে আরেকটা স্বাধীন দেশের সীমান্তরক্ষীবাহিনী হত্যা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, বরং এটির সঙ্গে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত। এটি গভীর উদ্বেগের বিষয় যে, শেখ হাসিনার ক্ষমতা লোভের ফলশ্রম্নতিতে নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশকে আজ তাবেদার রাষ্ট্র বানানো হয়েছে। দখলদার আওয়ামী সরকার আজ দেশবিরোধী ঘৃণ্যচক্রান্তের ক্রীড়নক। সীমান্তরক্ষীবাহিনী বিজিবি—কেও এখন বেঘোরে প্রাণ দিতে হচ্ছে।
বিএসএফ এর ‘ডেলিবারেট কিলিং’ এখন সর্বজনবিদিত। নিয়ন্ত্রণহীন এসব হত্যাকান্ডের আশকারা দেয়া দিল্লীর উগ্রতা আর ঢাকার নীরবতা। শেখ হাসিনা দিল্লীর সাথে অধীনতামূলক চিরস্থায়ী ‘রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ এর ফলশ্রম্নতি হচ্ছে বিএসএফ কতৃর্ক সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যার ঘটনায় নিশ্চুপ থাকা। মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে হত্যার ঘটনা পরের দিন পর্যন্ত জানতেই পারেননি বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাবিলাসী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। নাগরিকদের জীবনের চেয়ে দখলদার আওয়ামী মন্ত্রীদের ক্ষমতা খুব জরুরী। দেশবাসীকে পরাধীন রেখে ক্ষমতা ভোগ করাই আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শ। স্বভূমির সীমানায় কাউকে শান্তিতে রাখেনি আওয়ামী সরকার। এখন তাদের বন্ধুপ্রতীম দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে দিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক এবং সীমান্তরক্ষীদের প্রাণ সংহার করা হচ্ছে। ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ হলেও তাদের নীতি নির্ধারকদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গভীরতা অর্জিত হয়নি। সেজন্যই বাংলাদেশ সীমান্তে বেআইনী হত্যাকান্ডে তারা কোন দায়বোধ করে না। ফেলানীসহ সকল হত্যাকান্ডে আন্তর্জাতিক মহল এমনকি ভারতের বেশকিছু মানবাধিকার সংগঠন প্রতিবাদ—উদ্বেগ—উৎকন্ঠা প্রকাশ করলেও ভারতীয় কতৃর্পক্ষ এর কোন বিচার বা প্রতিকার করেনি। কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীর হৃদয়বিদারক লাশের দৃশ্য দেখে বাংলাদেশের মানুষের মনে এখনও ক্ষোভের আগুন জ¦লছে।”
বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় বিজিবি সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ রইসুদ্দিনকে বিএসএফ কতৃর্ক নির্মমভাবে গুলি করে হত্যাকান্ডের জাতিসংঘের তদন্ত দাবিসহ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানানো হয় এবং নিহত ব্যক্তির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়।
(অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী)
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি।