০৯ ডিসেম্বর ২০২৩
জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের
বাণী
"আজ ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। ১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতিসংঘে মানবাধিকারের সর্বদলীয় ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। জাতিসংঘ ১৯৫০ সালে ১০ ডিসেম্বরকে ‘মানবাধিকার দিবস’ ঘোষণা করে। সেই থেকে প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। এই দিনে আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মৌলিকমানবিক অধিকারহারা নির্যাতিত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি। যারা নাগরিক স্বাধীনতার জন্য সোচ্চার হতে গিয়ে ক্ষমতাসীন স্বেচ্ছাতন্ত্রের নৃশংস নিপীড়নে আত্মদান করেছেন তাদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। আজও বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ একদলীয় কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসন ও জাতিগত সংঘাতে অবলীলায় খুন ও গুপ্ত হত্যার শিকার হচ্ছে এবং অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। রাষ্ট্রীয় মদদে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। জাতিসংঘের সর্বজনিন ঘোষনায় বলা হয়েছে বিশ্বের সব জাতির সকল মানুষের মানবাধিকার সংরক্ষনের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। কিন্তু দেশে দেশে জনসমর্থনহীন নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী শাসকেরা জাতিসংঘ কর্তৃক মানবাধিকারের সর্বজনিন ঘোষনার নির্দেশনাগুলোকে তাচ্ছিল্য করে নিজ দেশের জনগণের উপর চালিয়ে যাচ্ছে বর্বোরোচিত আক্রমন। শুধুমাত্র ক্ষমতাকে চিরস্থায়ীভাবে ধরে রাখার জন্য জনমতকে অগ্রাহ্য করে। গণবিরোধী শাসক গোষ্ঠী জনগণের মানবাধিকারের ত্বোয়াক্কা করেনা। সুতরাং দুঃশাসনের বাতাবরণ তৈরী করতে গিয়ে তারা প্রতিবাদি জনগণের উপর নামিয়ে আনে পৈশাচিক অত্যাচার ও উৎপীড়ন। যারা সত্য উচ্চারণ করতে চায় তারা রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজিবিসহ নগরিক সমাজের যেই হোকনা কেন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় এবং কারাবাস, শারিরিকভাবে নির্যাতনসহ জখম এবং গুম ও হত্যারও শিকার হতে হয়। এবারের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য হলো 'স্বাধীনতা, সাম্য ও সকলের জন্য ন্যায় বিচার' - যা বাংলাদেশে সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত। নাগরিকদের সকল মর্যাদা ও অধিকার আজ তিরোহিত। বাংলাদেশে এখন ভয়াবহ দুঃসময় বয়ে চলছে এবং মানবধিকার চরমভাবে ভূলণ্ঠিত হচ্ছে। মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশ ও শান্তিপূর্ণ সভাসমাবেশের কোন অধিকার নেই। জোরপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের সঙ্গে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা ও গায়েবি সাজা দেওয়ার হিড়িক চলছে। অবৈধ ক্ষমতাসীন জোট সীমাহীন রক্তপাত ও বেপরোয়া নিপীড়ন নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে জনগণের সকল গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করে নিয়েছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার মানবাধিকারের পরিপূরক। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার শূণ্যের নিচে অবস্থান করছে। এদেশে শুধু মাত্র বিরোধীদলের নেতাকর্মিরাই শুধু নয়, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, নারী, শিশুসহ কারোই কোন নিরাপত্তা নাই। এদের অধিকাংশই গুম, গুপ্ত হত্যা এবং বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছেন। সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করলেই বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও দল নিরেপক্ষ রাজনৈতিক বিশ্লেষক, টকশো আলোচকদের বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে এবং কাউকে কাউকে কারান্তরীনও করে রাখা হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন, ২০১৮ সালের ৩০ডিসেম্বরের আগের রাতে নিশিরাতের নির্বাচন এবং বর্তমানে আবারও একতরফার তামাশার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। গুম,খুন, গুপ্তহত্যার পাশিপাশি সারাদেশে মিথ্যা ও সাজানো গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে অর্ধকোটিরও বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। অবৈধ শাসকগোষ্ঠী দেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, প্রশাসনকে শুধু দলীয়করণ করেনি তারা আইন-আদালতকেও দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। এখন দলীয় বিচারকদের ব্যবহার করে পুলিশের সাজানো মিথ্যা মামলায় পুলিশকেই স্বাক্ষী বানিয়ে দেশব্যাপি বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মৃত্যুদন্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হচ্ছে। গায়েবি মামলা ও গায়েবি সাজা থেকে রেহাই পাচ্ছে না মৃত ব্যক্তিরাও। সুতরাং এই নৈরাজ্যকর দুঃশাসনের ছোবল থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের এই মূহুর্তে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য চলমান অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার জন্য জনগণের মিলিত কন্ঠের আওয়াজ তুলে বর্তমান অপশাসনের অবসান ঘটাতে হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গিকার।”
(এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী)
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।