৫ জুলাই ২০২৩ ইং
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র
জাতীয় স্থায়ী কমিটির ৩ জুলাই ২০২৩ এ অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভার সিদ্ধান্ত সমূহ
গত ৩ জুলাই ২০২৩ তারিখ, সোমবার, রাত ৮.৩০ টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য যথাক্রমেঃ-
১. ব্যরিষ্টার জমির উদ্দিন সরকার
২. মির্জা আব্বাস
৩. বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
৪. ড. আব্দুল মঈন খান
৫. জনাব নজরুল ইসলাম খান
৬. মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
৭. জনাব আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী
৮. জনাব সালাহ উদ্দিন আহমেদ
৯. বেগম সেলিমা রহমান
১০. জনাব ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু
সভায় আলোচ্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে নিম্নে বর্ণিত সিদ্ধান্ত সমূহ গৃহীত হয়।
১। সভায় বিগত অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ সম্পর্কে মহাসচিব বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে সভাকে অবহিত করেন।
২। সভায়, ঈদুল আযহা পালনের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে এমন কি ঈদুল আযহার দিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা ও দলীয় কার্যালয় ভাংচুরের বিষয়ে আলোচনা হয়। সভা অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে মনেকরে আওয়ামীলীগ প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে রাজনৈতিক উদ্দ্যেশে বিএনপি ও বিরোধী দল গুলোকে রাজনীতির মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এই হামলা গুলো চালাচ্ছে।
ক) ১ জুলাই ২০২৩ তারিখে কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলায় বিএনপি’র মাননীয় চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এ্যাড. ফজলুর রহমানসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উপরে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এতে প্রায় ৩০জন আহত হয় এবং পুলিশ প্রায় ১০ জন কে গ্রেফতার করে। এছাড়াও ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলা, কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলা এবং বরিশাল গৌরনদী পৌরসভা এলাকায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি ও নেতা জহির উদ্দিন স্বপনের বাড়ি ঘেরাও এবং সারা পৌরসভায় একটি সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে। কুমিল্লা জেলা লাকসাম উপজেলায় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালামের বাড়িতে আওয়ামী সন্ত্রসীরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। এছাড়াও সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা, কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলা, ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলা, গোপালগঞ্জের মোকশেদপুরে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে বহু সংখ্যক নেতা-কর্মীকে আহত করে। ঝিনাইদহ জেলার কোর্ট চাঁদপুরে দোড়া ইউনিয়নের বিএনপি ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক মোঃ আরজান হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। ফরিদপুর উপজেলার বোয়ালমারী উপজেলায় বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের উপরে পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ করে সমাবেশ পন্ড করে। কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলা, কুমিল্লা জেলার লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা, চট্টগ্রাম জেলার মীরেরসরাই উপজেলায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায় ও আহত করে, ১ জুলাই ২০২৩ইং তারিখে ছাত্রদল ঢাকা মহানগর পূর্বের সভাপতি খালিদ হাসান জ্যাকিকে গ্রেফতার করে। বংশাল থানার কয়েকজন নেতাকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
খ) ২০ জুন রাতে বিএনপি নেতা দিদার মোড়লকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে অমানুষিক নির্যাতন, চিকিৎসার অভাব ও কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারনে কারাগারে মৃত্যু বরণ করে।
গ) ১৯ মে থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি’র নেতাকর্মীদের নামে ২১৫টি মামলায় মোট আসামী করা হয়েছে ৯ হাজার ৮শত নেতা-কর্মীকে। মোট গ্রেফতার হয়েছে ৮৩৬জন। স্থায়ী কমিটির সভায় গভীর আশংকা প্রকাশ করা হয় যে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি তথা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার হীন উদ্দ্যেশে এই অবৈধ সরকারের এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, আহত ও হত্যা করা হচ্ছে।
ঘ) বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী লুৎফর জামান বাবর, প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবি, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, রাজশাহী জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, বিএনপি নেতা মিয়া নুরুদ্দিন অপু, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম মাওলা শাহীন, ইউসুব বিন জলিল, আলী আকবর চুন্নু, আজিজির রহমান মুছাব্বির ও সিরাজুল ইসলাম সিরাজসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতৃবৃন্দের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবী জানাচ্ছি।
সভা আওয়ামী সন্ত্রাস, পুলিশের নির্যাতন ও গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানায়। অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তি, সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করা হয়।
৩। সভায়, সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সিরিয়ায় গুম বা নিখোঁজ ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষের চূড়ান্ত পরিণতি কি হয়েছে তা জানতে একটি নিরপেক্ষ মেকানিজিম বা বডি গঠন করার প্রস্তাব করা হয়। এ প্রস্তাবে সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ ভোট দানে বিরত থাকে। প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে পাশ হয়। বাংলাদেশের এই ভোটদানে বিরত থাকা মানবাধিকার নীতির পরিপন্থি। বাংলাদেশ জাতিসংঘে মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নির্বাচিত হলেও এই বিষয়ে ভোট দানে বিরত থাকা প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের বর্তমান অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে গুরুতর অভিযোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গণে উঠেছে তা মিথ্যা নয়। সভায় এই অবৈধ সরকারের সকল প্রকার মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
৪। সভায়, সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ব্যাংকের পরিচালকদের মেয়াদ ৯ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করে ব্যাংক কোম্পানি আইনের যে সংশোধনী আনা হয়েছে তাকে সম্পূর্ণ গণবিরোধী এবং সুশাসন বিরোধী বলে অভিহিত করা হয়। সভা মনে করে, দীর্ঘ দিন ধরে ব্যাংক ব্যবস্থায় নৈরাজ্য চালিয়ে ব্যাংকিং খাতকে সম্পূর্ন ধ্বংস করা হয়েছে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে সরকার দূর্নীতির লক্ষ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ খেলাপির জন্য কোন রকম শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাদেরকে সকল প্রকার সুবিধা দিয়েই চলেছে। পূণঃতফশিলকৃত ঋন, অবলোপন করা ঋণ, অর্থ ঋণ আদালতে আটকে থাকা বিপুল পরিমান অংকের ঋন বিশেষ বিবেচনায় নবায়ন করা সহ আরো অনেক ঋণ যেগুলো খেলাপি যোগ্য সেগুলো খেলাপি ঋণ হিসাবে তালিকা ভূক্ত করা হচ্ছে না। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে সরকারি হিসাব মতে খেলাপি ঋণের পরিমান ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা কিন্তু উপরোক্ত ঋণ গুলোকে তালিকা ভূক্ত না করায় প্রকৃত খেলাপি ঋণ প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদদের মতে এর প্রধান কারন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা। সরকার ঘণিষ্ঠ অলিগার্কদের খেলাপি ঋণ বার বার পূণঃ তফশিল ও অবলোপন করে তা গোপন করা হয়। দূঃখ জনকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ঐতিহাসিক জবমঁষধঃড়ৎ এর ভূমিকা বাদ দিয়ে ঋধপরষরঃধঃড়ৎ এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। পরোক্ষ ও প্রত্যোক্ষভাবে জনগণের আমানতের টাকা বিদেশে পাচারের ব্যবস্থা করছে যা রাষ্ট্রদ্রোহীতার সামিল। ব্যাংকিং খাতকে এই সরকার সচেতনভাবে ধ্বংস করছে। সভায় অবিলম্বে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে যে আইন করা হয়েছে তা বাতিলের দাবী জানায়।
৫। সভায়, সম্প্রতি সরকারের মদদ পুষ্ট ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের চক্রান্তে কাচা মরিচের মূল্য কেজি প্রতি ১১শ টাকা অন্যদিকে কাচা চামড়ার মূল্য নি¤œমুখি হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে অন্যদিকে কাঁচা চামড়ার মূল্য পরিকল্পিতভাবে হ্রাস করায় সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বিশেষ করে এতিমখানাগুলি তাদের প্রাপ্য অর্থ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সভায় এ বিষয়ে সরকারের ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করা হয় এবং অবিলম্বে দ্রব্যমূল্য হ্রাস ও কাচা চামড়ার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার দাবী জানানো হয়।
৫। সভায়, কয়েকটি সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা শেষে সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভাপতি সভা মুলতবি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মহাসচিব
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি