বিএনপি’র কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালনকালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, হামলা, আহত করা ও অসত্য মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে-বর্তমান অবৈধ শাসকগোষ্ঠী খুন-জখম-সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশের মানুষকে ভীত সন্ত্রস্ত রেখে তাদের ভয়াবহ দুঃশাসনকে প্রলম্বিত করতে লাগাতার জঘন্য খেলায় মেতে উঠেছে। ভয়াবহ দুঃশাসনকে আড়াল করার ঘৃণ্য অপকৌশলের অংশ হিসেবে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী অবৈধ সরকার ধারাবাহিকভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দল ও মতের নেতাকর্মীদের ওপর ঘৃণ্য হামলা এবং খুন-জখমের নারকীয় বিভৎসতা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে খুলনা, পটুয়াখালী, নেত্রকোণা, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা যে পৈশাচিক তান্ডবলীলা চালিয়েছে তা নজীরবিহীন। তাদের হামলায় অনেকে গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, কেউ কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। আবার অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার এবং মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নির্বিঘেœ রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার সুযোগ বা অধিকার কেড়ে নিয়েছে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকার। বিএনপি’র কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালনকালে গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা মহানগরসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন অঞ্চলে নেতাকর্মীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা, মিথ্যা মামলা দায়ের ও গ্রেফতারের ঘটনায় আবারো প্রমাণিত হলো-সারাদেশটাকে এখন নিরাপত্তাহীনতার অতল গহব্বরে নিমজ্জিত করা হয়েছে। দেশের বৃহত্তম ও সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সকল অধিকার হরণের মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশকে বিরোধী দলমুক্ত করে আওয়ামী একচ্ছত্র শাসন দীর্ঘমেয়াদে ভোগ করতেই বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। আজ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র পদযাত্রা চলাকালে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা-১০ আসনে বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী শেখ রবিউল আলম রবি, ধানমন্ডি থানা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন সৈকত, ধানমন্ডি থানা বিএনপি’র সাবেক সদস্য-রাইসুল ইসলাম চন্দন, ২০ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক শাওন, ১৮ নং ওয়ার্ডের ইউনিট বিএনপি নেতা মালেক, নিউমার্কেট থানা বিএনপি নেতা আব্দুল মালেক, হাজারীবাগ থানাধীন ২২ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহবায়ক সাব্বির আহমেদ রাব্বী, নিউমার্কেট থানা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রানাসহ ২৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার, পুলিশের টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপে ধানমন্ডি থানা বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলাম টিটু, ধানমন্ডি থানাধীন ১৫ নং ওয়ার্ড শ্রমিকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ মনির সিকদার, সদস্য লিটন মোল্লা, মুগদা থানা শ্রমিকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ মজিবর মোল্লা, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার জিয়াউর রহমান জিয়া, নিউমার্কেট থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আউয়াল আহমেদ অদিল ও ছাত্রদল নেতা আবুল বাশার, ১৮ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকসহ শতশত নেতাকর্মীকে আহত করা, যুব দলের সাবেক সহ-সভাপতি আলী আকবর চুন্নু গত ৭ মাস কারাভোগের পর মাত্র ১০ দিন আগে জামিনে মুক্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আজ কোর্টে হাজিরা দিতে গেলে তার জামিন নামঞ্জুর করে পূণরায় কারাগারে প্রেরণ করা, বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর রহমান আলমকে গ্রেফতার এবং জামালপুর দ্রুত বিচার আদালতে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স, রাজশাহী জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদসহ ৭ জন বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের সবই বর্তমান অবৈধ সরকারের নিরবচ্ছিন্ন জুলুম-নির্যাতনের অংশ।
শাসকগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ মদদ না থাকলে প্রশাসন, আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা এ সমস্ত অমানবিক ও নৃশংস কর্মকান্ড সংঘটন করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। ধারাবাহিকভাবে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা এবং এর লাগাম টেনে ধরতে সরকারের অনিচ্ছাই সন্ত্রাসীদেরকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ অব্যাহত গতিতে চালিয়ে যেতে আরো উৎসাহিত করছে। মূলত: ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকার নিজেদের পতন আঁচ করতে পেরেই এখন আরও তীব্র মাত্রায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তবে অবৈধ সরকার এসব কর্মকান্ডের মাধ্যমে আর রাষ্ট্রক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হবে না। কারণ জনগণ এখন ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে রাস্তায় নেমে এসেছে।
নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা দায়ের এবং আহত করার ন্যাক্কারজনক ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তিসহ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি করছি। আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।”
বার্তা প্রেরক
(মুহম্মদ মুনির হোসেন)
সহ-দফতর সম্পাদক