দীর্ঘ ৯ বছর ভারতে নির্বাসন শেষে দেশে ফিরেছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। রোববার দুপুর সোয়া ২টায় দিল্লি থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী। সালাহউদ্দিনকে বিমানবন্দরে বিএনপি’র বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী স্বাগত জানান। বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এই সদস্যকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সময় বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ, বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক সাইফুল আলম নিরব, সদস্য সচিব আমিনুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রাজধানীর জিয়া উদ্যানে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করেন সালাহউদ্দিন। তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিছিল নিয়ে সেস্নাগান দিতে দিতে কবর প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি প্রায় ৯ বছরের বেশি সময় নির্বাসন থেকে আপনাদের মাঝে আসতে পেরে মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। প্রথমেই এদেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন জানাই যারা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা এনেছে, প্রকৃত স্বাধীনতা এনেছে এবং নতুন বিজয় দিবস আমাদের উপহার দিয়েছে। তিনি বলেন, এই স্বাধীনতাকে এই বিজয়কে আমাদের অর্থবহ করতে হবে। এদেশের সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক কাঠামোগুলো সুন্দরভাবে সংস্কার করে প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে এদেশের জনগণকে উপহার দিতে হবে।
এদেশের জনগণ যাতে স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের এবং এই বিজয় দিবসের সুফল ভোগ করতে পারে সেজন্য আমি সর্বস্তরের জনগণকে আহ্বান জানাবো- আপনারা ধৈর্য ধরুন, আপনারা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন। যদি আমরা আইনের শাসন কায়েম করতে পারি, আইনের শাসনের রাষ্ট্র বানাতে পারি, সর্বস্তরের সমস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দিতে পারি তাহলেই ১৮ কোটি মানুষের ঘরে ঘরেই সেটার সুফল যাবে, ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, এই বীরের জাতিকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা বহির্শত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করবো ইনশাআল্লাহ। অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রকারীদের কাছ থেকে এই রাষ্ট্র হেফাজত থাকে সেজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় দরকার- আমরা ধৈর্য ধারণ করি, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনি, সমস্ত জায়গায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করি এবং সকল গোষ্ঠীর সমস্ত ধর্ম-বর্ণ-দলমত নির্বিশেষে সকলকে সমভাবে যেন সমদৃষ্টিতে দেখি এবং এদেশের সকলকে আমরা যেন বাংলাদেশি হিসেবে দেখি। ফ্যাসিবাদের অবসানের প্রসঙ্গ টেনে সালাহউদ্দিন বলেন- কোনো একক রাজত্বের জন্য, একক শাসনের জন্য, একক কর্তৃত্ববাদের জন্য যারা বাংলাদেশে রাজনীতি করবে তাদের জায়গা এদেশে হবে না। এই দেশ একক কোনো ব্যক্তির নেতৃত্বে স্বাধীন হয় নাই। এই দেশ সারা বাংলাদেশের সমস্ত মানুষের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতা কোনো একক দলেরও হতে পারে না, কোনো একক ব্যক্তিরও হতে পারে না। এই মুক্তি এই বিজয় আমাদের সকলেরই, আমাদের সকলকে এদেশ হেফাজত করতে হবে। গত মঙ্গলবার গৌহাটিস্থ বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন থেকে ট্রাভেল পাস ইস্যু হয় সালাহউদ্দিন আহমেদের। ২০১৫ সালের ১০ই মার্চ ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন। তার ঠিক দু’মাস পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে তাকে পাওয়া যায়। তখন ভারত সরকারের তরফে ঢাকাকে জানানো হয়, ‘উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাফেরা’ অবস্থায় সালাউদ্দিনকে হেফাজতে নিয়েছে শিলং পুলিশ। পরবর্তীতে তার নামে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা দায়ের করা হয়। আইনি প্রক্রিয়া চলাকালে সালাহউদ্দিন জানান, গোয়েন্দা পরিচয়ে ২০১৫ সালের ১০ই মার্চ তাকে রাজধানীর উত্তরাস্থ নিজ বাসা থেকে তুলে নেয়া হয়। একটি প্রাইভেটকারে তাকে অজানা গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু গাড়িটি কোথা থেকে ছেড়েছিল বা গাড়িতে আর কে বা কারা ছিল তাও তিনি তখন বলতে পারেননি। ১৯৯৬ সালে কক্সবাজার থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সালাহউদ্দিন। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। মেঘালয়ে যখন আটক হন তখন তিনি বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। ভারতের জেলে থাকাকালে তিনি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যের দায়িত্ব পান। ২০১৮ সালের ২৬শে অক্টোবর অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা থেকে তাকে পুরোপুরি খালাস দেন ভারতের আদালত। সেই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আদালত সালাহউদ্দিনের পক্ষেই রায় দেন। চূড়ান্ত বিচারে তাকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করা হয়। সালাহউদ্দিনের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, মামলা শেষ হওয়ার পর থেকে দেশে ফেরার জন্য ব্যাকুল থাকলেও রাজনৈতিক কারণে ফিরতে পারছিলেন না তিনি। অবশেষে ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে পালিয়ে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেয়ার প্রেক্ষিতে পাসপোর্টবিহীন সালাহউদ্দিন ট্রাভেল পাস নিয়ে দেশে ফিরেছেন।