image

খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে যেকোনো পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বলে সরকারকে হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ কখনো দেশনেত্রীকে এভাবে অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দী অবস্থায় চলে যেতে দেবে না, এটা আপনাদের মনে রাখতে হবে।’

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এই হুঁশিয়ারি জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে এই দেশ এই আওয়ামী লীগের হাতে, এই বর্বরদের হাতে, এই লুটেরাদের হাতে একটুও নিরাপদ নয়। একদিকে তারা আমাদের ভোটের অধিকার হরণ করেছে, অন্যদিকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, যিনি গণতন্ত্রের মা, যিনি গণতন্ত্রের সঙ্গে একাত্ম, তাঁকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে প্রায় সাত বছর আটক করে রাখা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই। এই সরকার থাকা মানে হচ্ছে দেশ ধ্বংস হওয়া, গণতন্ত্র ধ্বংস হওয়া, দেশের মানুষ ধ্বংস হওয়া।’

বর্তমান সরকারকে দখলদার সরকার মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে, অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে। ভয়ংকরভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। ব্যাংক লুটপাট করে তারা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, চিন্তাও করতে পারি না। যখন দেখি তিনি গণতন্ত্র ধ্বংসে জড়িত। সাবেক পুলিশপ্রধান হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। বড় বড় আরও যারা রাঘববোয়াল, ব্যাংক চুরির হোতা, তাদের এখন পর্যন্ত ধরা হচ্ছে না। অথচ দেশনেত্রীকে সাত বছর ধরে বন্দী রাখা হয়েছে।



ভারতের সঙ্গে চুক্তি প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। শুধু বিএনপি নয়, দেশের আইনবিশেষজ্ঞ, পানিবিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, এটা বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি। আমরা পানি চাই। আমরা আমাদের অধিকার চাই। অভিন্ন নদীর ন্যায্য হিস্যা চাই, সীমান্ত হত্যা বন্ধ চাই। তা না করে এই সরকার সবকিছু বিলিয়ে দিয়েছে।’

এ চুক্তিতে বাংলাদেশের মানুষ কী পেয়েছে? এমন প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে ঘৃণা, বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে তার অধিকারকে হরণ করা, তার সম্পদগুলোকে লুণ্ঠন করার আরও পথ তৈরি করা। সাহস করে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই একমাত্র পথ বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, মানুষের মৃত্যু হয় একবার, দুইবার নয়। ভয়ে মরে যাওয়ার চেয়ে সাহস করে প্রতিরোধ করতে হবে। তাই সব অন্যায়ের প্রতিরোধ করতে হবে। আর এর জন্য তরুণ-যুবকদের জেগে উঠতে হবে।


‘খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে না পারলে দেশের অস্তিত্ব রক্ষা করা যাবে না’


সমাবেশে গয়েশ্বর বলেন, ‘যে মামলায় খালেদা জিয়ার সাজাই হয় না, সেই মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। আমরা বহু দিন ধরে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু তিনি এখনো কারাগারে, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।


ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমাবেশে নেতাকর্মীদের বিশাল উপস্থিতি দেখে গয়েশ্বর সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আপনারা প্রমাণ করেছেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের প্রতীক, জাতীয়তাবাদী ঐক্যের প্রতীক। তাকে তাড়াতাড়ি মুক্ত করতে না পারলে মানচিত্র থেকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র মুছে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর বলেন, ‘সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়ে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই করেছেন, সবই দেশবিরোধী। আমরা এতে উদ্বিগ্ন। আমরা ভারত বিরোধী নই, সবার সঙ্গে সমমর্যাদার ভিত্তিতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই, গণতন্ত্র চাই।


‘খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রশ্নে আপস নয়’

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘একটা ব্যানারে দেখলাম, খালেদা জিয়া সুস্থ হলে দেশ সুস্থ থাকবে। কথাটা ঠিক। খালেদা জিয়া অসুস্থ, আজকে পুরো জাতি অসুস্থ হয়ে গেছে। চোর-ডাকাত-বাটপার-বদমাশে দেশ ভরে গেছে। এখন চোর–ডাকাত সবাই মুক্তি পেয়ে যায়, আর দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে আপনি (প্রধানমন্ত্রী) মুক্তি দিতে চান না।’ মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, দেশনেত্রীকে যেকোনো মূল্যে মুক্তি দিতে হবে। তাঁর মুক্তির স্বার্থে কোনো আপস কারও সঙ্গে হবে না, তাঁর মুক্তি ইনশা আল্লাহ আমরা করে ছাড়ব।’


‘আমি কবরস্থানে গিয়ে অনেককে দেখেছি, যারা মৃত্যুর ভয়ে মুক্তিযুদ্ধে যায়নি’, বিপ্লবী নেতা চে গুয়েভারার এমন উক্তির উল্লেখ করে আব্বাস বলেন, ‘আমরা ১৫টা বছর আন্দোলন করেছি, কিন্তু আন্দোলনের কোনো ফল আমরা ঘরে আনতে পারি নাই। কারণ, আমরা যথাসময়ে মাঠে থাকি না।’

কেন এ কথা বললেন, সে ব্যাখ্যা দিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘২৮ (অক্টোবর) তারিখে আমরা যে আন্দোলন করেছিলাম, সেই ২৮ তারিখেই ফলাফল চূড়ান্ত আন্দোলন হয়ে যেত। যদি আমরা পাল্টা একটা মিছিল নিয়ে দাঁড়াতে পারতাম। কিন্তু কেন পারি নাই? মৃত্যুর ভয় ছিল, রক্ত ঝরার ভয় ছিল। যদিও আমরা হাজার কণ্ঠে বলি, খালেদা জিয়ার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই। খালেদা জিয়ার কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে ইত্যাদি ইত্যাদি স্লোগান দিই। আমাদের তৈরি হতে হবে।’


‘বড় বড় কর্মকর্তারা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত’

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, তিনি কোনো তহবিল তছরুপ করেননি। অবাক বিস্ময়ে দেখলাম, তাঁকে পাঁচ বছরের সাজা দেওয়া হলো। আমরা জানি, সাধারণত নিম্ন আদালতে সাজা হলে উচ্চ আদালতে আপিল করলে সেটা কমে। কিন্তু খালেদা জিয়ার মামলা উচ্চ আদালতে গিয়ে দ্বিগুণ হয়ে গেল।’

নজরুল ইসলাম বলেন, এই সরকারের নিযুক্ত সাবেক প্রধান সেনাপতি দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত। এই সরকারের সাবেক পুলিশপ্রধান দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত। এই সরকারের ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত। এই সরকারের রাজস্ব বিভাগের বড় বড় কর্মকর্তারা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত। যেই সরকারের নিযুক্ত এত বড় বড় কর্মকর্তারা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হন, তাহলে সেই সরকার কি দুর্নীতিবাজ নয়?


‘এখন প্রতিরোধই কর্তব্য’

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যখন অন্যায় আইনে পরিণত হয়, তখন প্রতিরোধ কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। তিনি প্রশ্ন ছোড়েন বাংলাদেশে আইনের শাসন আছে? উপস্থিত সবাই ‘না’ জবাব দিলে আমীর খসরু বলেন, যেখানে আইনের শাসন নেই, মানবাধিকার নেই, গণমাধ্যমে স্বাধীনতা নেই, বাক্‌স্বাধীনতা নেই, যেখানে জীবনের নিরাপত্তা নেই, যে দেশে ৬০ লাখ বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ভিন্নমত বন্ধ করে দিতে চায়, সে দেশে শুধু কি প্রতিবাদ করে এখান থেকে বের হওয়া যাবে?খসরু বলেন, যেখানে অন্যায় আইনে পরিণত হয়, সেখানে প্রতিরোধকে অনিবার্য এবং কর্তব্য হিসেবে নিতে হবে।



সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, নিতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, জয়নুল আবেদিন ফারুক, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, অধ্যক্ষ সেলিম ভুইঁয়া, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহস্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, সহ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এইচ এম সাঈফ আলী খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. মাইনুল ইসলাম, মজিবুর রহমান, আকরামুল হাসান মিন্টু, নিপুণ রায় চৌধুরী, ফজলুর রহমান খোকন, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সাবেক সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্না, সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, যুগ্ম সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদসহ অন্যান্যরা ।