image

আজ রোববার (২৩ জুন) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের নেতা বেগম খালেদা জিয়া (বিদেশে প্রয়োজনীয়) চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুশয্যায় সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন।’


আজ রোববার (২৩ জুন) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন  বেগম খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্য কামনায় দোয়া মাহফিলের অনুষ্ঠান হয়।

ও মিলাদ মাহফিলে তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করেছেন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, 'এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের নেতা খালেদা জিয়া (বিদেশে প্রয়োজনীয়) চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুশয্যায় সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন।'

ফখরুল বলেন, 'বর্তমান জালিম ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রতিহিংসার কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি রয়েছেন। সম্পূর্ণ বানোয়াট মামলায় তাঁকে (খালেদা) রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল। এখন বাড়িতে থাকতে দেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ ও বন্দি রয়েছেন।'


বিএনপি মহাসচিব বলেন, পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু সেখানে তার কোনো চিকিৎসা করা হয়নি। 'তিনি বারবার অভিযোগ করলেও সরকার কর্ণপাত করেনি এবং চিকিৎসাসেবা দেয়নি। পরে যখন তাঁকে (কারা কর্তৃপক্ষ) হাসপাতালে পাঠায়, সেখানেও তাঁর কোনো সুচিকিৎসা হয়নি।'

ফখরুল বলেন, দেশের বাইরে যেতে পারবেন না এবং দেশেই চিকিৎসা নিতে হবে এই শর্তে সরকার খালেদা জিয়াকে গুলশানে তার বাসায় থাকার অনুমতি দিয়েছে। 

তিনি বলেন, 'এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড বারবার বলে আসছে, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) অসুস্থতার চিকিৎসা বাংলাদেশে সম্ভব নয়। তাঁর শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য উন্নত দেশের একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি হাসপাতালে তার চিকিৎসা প্রয়োজন।'

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, খালেদা জিয়ার পরিবার, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিদেশি মিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিদেশে বিশেষায়িত চিকিৎসা সুবিধায় খালেদাকে চিকিৎসার অনুমতি দিতে সরকারের কাছে বারবার আবেদন করেছে। 'কিন্তু শেখ হাসিনা তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়াকে হত্যা এবং রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য উন্নত চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছেন।'

আজ রোববার খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় দেশব্যাপী দলের কর্মসূচির অংশ হিসেবে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপি।

ফখরুল বলেন, ‘আমাদের প্রশ্ন ‍খুব পরিষ্কার। আমরা সবার আগে তিস্তার পানির ন্যায্য বণ্টন চাই এবং অভিন্ন যেসব নদী আছে প্রত্যেকটি নদীর আমরা ন্যায্য হিৎসা চাই। এটা আমাদের অধিকার, আন্তর্জাতিক আইনের অধিকার। এই কথাগুলো সরকার বলতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হচ্ছে।’


বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে ভারতের কাছে তারা (সরকার) সেবাদাসে পরিণত হয়ে গেছে। শুধু ভারত নয়, সমগ্র আশপাশের প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে তারা আজকে পুরোপুরি মাথা নিচু করে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে। মিয়ানমার থেকে গুলি আসে, জবাবটাও পর্যন্ত তারা দিতে পারে না। এই একটা অর্থব নতজানু শাসকগোষ্ঠী আমাদের ওপরে চেপে বসে আছে।'

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে ফখরুল বলেন, ‘ভারতে গিয়ে চুক্তি করেছেন, ১০টি চুক্তি করেছেন। চুক্তিগুলো আমরা দেখলাম, যে চুক্তিগুলো বেশিরগুলো বলা হচ্ছে, মোমোরেন্ডাম সই করেছেন, অনেকগুলো তারা চুক্তি করবেন, কারিগরি দল পাঠাবেন সেগুলো। কিন্তু আমাদের যে সমস্যাগুলো… আমরা যে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিৎসা আমরা পাচ্ছি না, সেই ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি। উপরন্তু কী হয়েছে? তিস্তা প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করার জন্য, তাতে বিনিয়োগ করার জন্য ভারতবর্ষ প্রস্তাব করেছে।’


‘পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বিস্ময়’


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা তাদের দুর্নীতি কাহিনি বেরিয়েছে। সাবেক যে সেনাপ্রধান (আজিজ আহমেদ) তার দুর্নীতির কাহিনি বেরিয়েছে। আবারো কয়েকজন পুলিশের দুর্নীতি কাহিনি বেরিয়ে আসছে। আমি অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম যে, গত পরশু পুলিশের অ্যাসোসিয়েশন থেকে একটা স্ট্যাটমেন্ট দেওয়া হয়েছে সাংবাদিকদের সত্য প্রকাশে হুমকি দিয়ে যে, এই সত্য (পুলিশের দুর্নীতির খবর) প্রকাশ করা যাবে না। কারণ এতে নাকি তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়। আজকে সারাদেশের মানুষ জানে, সারা পৃথিবী জানে যে, পুলিশ বাহিনীর কিছু কিছু সদস্য তারা কীভাবে এই অবৈধ সরকারের সঙ্গে যোগসাজস করে তারা বিত্ত-বৈভবের একটা দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তুলেছে। শুধু তাই নয়, তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধবংস করছে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার দায় তাদেরকেই নিতে হবে যারা এসবের সাথে জড়িত।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই যে আওয়ামী লীগ সরকার তারা দাবি করে যে, নির্বাচিত সরকার, তারা কোনোমতেই নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসে না। সম্পূর্ণভাবে একটা প্রহসনের নির্বাচনের তামাশা করে জোর করে শুধু রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে।’

ফখরুল বলেন, ‘তারা বাংলাদেশের মানুষের একে একে সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে, বিচারব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে, মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং মানুষের যে বেঁচে থাকবার ন্যূনতম অধিকারগুলো সেই অধিকার তারা কেড়ে নিয়েছে। এই সরকার একটা অবৈধ সরকার, তারা সমস্ত দেশটাকে বিক্রি করে দিয়েছে।’


অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, কেন্দ্র্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।


এর আগে শনিবার রাতে দলের সব মহানগর ও জেলা ইউনিটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনা করে রোববার দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে।