বিএনপি’র বাজেট প্রতিক্রিয়া: অর্থবছর ২০২৪-২৫
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আসসালামু আলাইকুম।
জনসাধারণের ম্যান্ডেট ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে রয়েছে। যে সরকার নিজেই আইন-কানুন ও সংবিধান লঙ্ঘন করে ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ডামি সংসদ বানিয়েছে, এমন সরকারের পক্ষে বাজেট প্রদানের কোন নৈতিক অধিকার নেই। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। অথচ সেই জনগণই ভোট দিতে পারেনি। এ সরকার জনপ্রতিনিধিত্বহীন একটি অবৈধ সরকার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য এ সরকারের প্রস্তাবিত বাজেট দেশের সাধারণ দরিদ্র মানুষদের শোষণের লক্ষ্যে একটি সাজানো হাতিয়ার মাত্র। বর্তমান লুটেরা সরকারের এ বাজেট কেবলমাত্র দেশের গুটিকয়েক অলিগার্কদের জন্য, যারা শুধু চুরিই করছে না, তারা ব্যবসা করছে, তারাই পলিসি প্রণয়ন করছে, আবার তারাই পুরো দেশ চালাচ্ছে। দেশ আজ দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। এই বাজেট কল্পনার এক ফানুস। এই বাজেট ফোকলা অর্থনীতির উপর দাঁড়িয়ে আছে।
বাজেট প্রণয়নের জন্য যে সম্পদ প্রয়োজন, সেটাই এ অলিগার্করা লুট করে নিয়েছে। ব্যাংকগুলো খালি। সরকারের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে অলিগার্করা ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলোকে শূন্য করে দিয়েছে। এ অর্থের সিংহভাগই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। আমানতকারীরা ব্যাংকে তাদের নিজস্ব জমাকৃত অর্থের চেক ক্যাশ করতে পারছে না। মানুষের মধ্যে নজিরবিহীন হাহাকার দেখা দিয়েছে। তবে এই হাহাকার সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট ও সুবিধাভোগী নব্য ধনীদের জন্য নয়। সাধারণ মানুষের রক্ত চুষে দিব্যি ভালো আছে তারা। আর অন্যদিকে গরিব আরও গরীব হচ্ছে। যেকোনো সময় মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে। এদিকে বাংলাদেশের রিজার্ভের অবস্থা তলানিতে চলে গেছে। তিন মাসের আমদানি ব্যয় মিটানোর মত ডলার রিজার্ভে নেই। ডলারের অভাবে ব্যবসায় বাণিজ্যে অচলাবস্থা চলছে। দেনা বাড়তে বাড়তে এমন হয়েছে, সেই দেনা শোধ করতেই বাজেটের বড় একটা অংশ চলে যাচ্ছে। তারা বিদ্যুৎ চুরি করবে আর সাধারণ মানুষকে বিদ্যুতের অসহনীয় বিল পরিশোধ করতে হবে। পানি ও গ্যাসের বেলায়ও একই অবস্থা। তথাকথিত এই বাজেট বাস্তবায়নে যে অর্থ লাগবে সেটা সংকুলানেরও প্রস্তাব করা হয়েছে জনগণের উপর করের বোঝা চাপিয়ে। এ বাজেট কর-নির্ভর, এ বাজেট ঋণ নির্ভর, এ বাজেট লুটেরা-বান্ধব। অসহনীয় মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ জনগণের ত্রাহি অবস্থা, এর উপর বাজেটে করের বোঝা। জবাবদিহিতাহীন এ সরকারের কাছ থেকে জনকল্যাণমূলক বাজেট আশা করাটাই বোকামি। এই বাজেট দেশি-বিদেশী ঋণ ও সাধারণ জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া করের নির্লজ্জ ফিরিস্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। এই বাজেট একদিকে সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ধ্বংসপ্রায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং অন্যদিকে গণমানুষের অর্থনৈতিক দুরবস্থার সঙ্গে এক নিষ্ঠুর তামাশা মাত্র। জনগণের সাথে এক করুণ ও হৃদয়বিদারক প্রতারণাই বটে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
বর্তমানে বাংলাদেশ লুটেরাদের কবলে। প্রস্তাবিত বাজেট নিজেদের চুরি হালাল করার ধান্দাবাজির বাজেট। এই বাজেটে দেশের অর্থ নতুনভাবে লুটপাটের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আয়ের চেয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে অনেক বেশি। অথচ পুরো বোঝাটা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সাধারণ মানুষের ওপরে। ঋণ ও ঘাটতিভিত্তিক বড় বাজেট অতীতে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি, আগামীতেও হবে না। একটি অনির্বাচিত সরকারের ওপর করদাতারা আস্থা রাখে না। এ বছর আগের ১২ বিলিয়ন ডলারের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হবে। এই বাজেট আসলে শূন্যের উপর দাঁড়িয়ে আছে। ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটির মধ্যে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটিই ঘাটতি। অর্থাৎ বাজেটের এক তৃতীয়াশংই ঘাটতি যা মেটানোর প্রস্তাব করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ দেড় লক্ষ কোটি ও বৈদেশিক এক লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে। ঋণ দিয়ে ঋণ পরিশোধের ফন্দি। অর্থাৎ কৈ এর তেলে কৈ ভাজা আর কি! আর হ্যাঁ, এই ঋণ নেওয়া হবে Sovereign guarantee এর কভারে। কারণ কো-লেটারেল দেওয়ার সক্ষমতা হারিয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ঋণ সংস্থা Fitch Ratings অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের দীর্ঘ মেয়াদী ঋণমান আবারও অবনমন করেছে। Big Three নামে পরিচিত ঋণমান সংস্থাগুলোর মধ্যে Fitch অন্যতম। এর আগে মুডিস ও এস এন্ড পিও বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন হলো, এই দেউলিয়া সরকারের ওপর কার আস্থা হবে ঋণ দিতে? ফলে যা হবার তাই হবে। এমনিতেই পায়ের নিচে মাটি নেই। সরকার কঠিন শর্তের বিদেশী হার্ড লোনের দিকে আরও ঝুঁকে পড়বে। আটকে পড়বে আরও গভীর ঋণ-ফাঁদে। এহেন অবস্থায় বছর শেষে অর্থনীতি মুখ থূবড়ে পড়তে বাধ্য। মাশুল তো আর সরকার বা সরকারের সুবিধাভোগীদের দিতে হবে না, বোঝাটা পড়বে দেশের সাধারণ মানুষের ওপর, অসহায় ও নিরীহ দরিদ্র মানুষ মাথা কুটে মরবে।
উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ,
এই বাজেটে কর্মসংস্থান তৈরির কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ডলার সংকটের কথা বলে আমদানি সংকুচিত করায় ক্যাপিটাল মেশিনারিস এবং র’ মেটারিয়ালস আমদানি প্রায় অবরূদ্ধ। যার ফলে শিল্প কারখানা বন্ধের পথে। ব্যাংকগুলো শূন্য। সুদের হার অনেক বেশি। সরকার নিজেই ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ নেওয়ায় বেসরকারি সেক্টরে ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ কমে গেছে। যার ফলে বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে। DFI (Direct Foreign Investment) ও শূন্যের কোঠায়। তিন হাজারের বেশি শিল্প বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে ও যাচ্ছে । নতুন কর্মসংস্থান তো হচ্ছেই না, হাজার হাজার শ্রমিক গ্রামে চলে গেছে ও যাচ্ছে। কিন্তু গ্রামে তো কর্মের সংস্থান নেই। মানুষের ত্রাহি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ বাজেটে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির কোন আশা নেই। বাজেটে চাকুরি হারানো এবং দুর্দশাগ্রস্ত শ্রমিকদের জন্য কোনো পুনর্বাসন রোডম্যাপ নেই। বাজেট বক্তৃতায় সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো উন্নয়নের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলা হলেও, তার বাস্তবিক কোনো পথনির্দেশনাই নেই এই বাজেটে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
এই বাজেট শুধু গণবিরোধী নয়, এ বাজেট বাংলাদেশ বিরোধী। যে গণমানুষকে নিয়ে বাংলাদেশ, সেই গণমানুষের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পুরো বাজেটটিই করা হয়েছে মেগা-প্রকল্প ও মেগাচুরির জন্য, দুর্নীতি করার জন্য। অর্থনীতির এই ত্রিশঙ্কুল অবস্থায় উচিত ছিল অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্পসমূহ বা অর্থহীন, অনুৎপাদক দৃশ্যমান অবকাঠামোগুলো বন্ধ রাখা। সেই অর্থ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ জনকল্যাণমুখী খাতে ব্যবহার করা যেত, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি আরও সম্প্রসারিত করা যেত। কিন্তু সেগুলো বন্ধ করলে তো দুর্নীতির পথ বন্ধ হয়ে যাবে! তাই বোধগম্য কারণেই সেটা করা হয়নি।
এবার শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপি’র ১.৬৯%, যা চলতি বছরে ছিল ১.৭৬% এবং ২০২২-২৩ সনে ছিল ১.৮৩%, এবং ২০২১-২২ এ ছিল ২.০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বর্তমান গণবিরোধী সরকার শিক্ষা খাতে ক্রমাগত বরাদ্দ কমাচ্ছে। এ বারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রেখেছে জিডিপির ০.৭৪ শতাংশ, যা নিতান্তই অপ্রতুল। আপনারা জানেন, বিএনপি নির্বাচিত হয়ে পুনরায় জনসেবার সুযোগ পেলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে জিডিপি’র ৫% বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছে। কৃষির জন্যও বরাদ্দ কমিয়েছে এই মাফিয়া সরকার। অথচ করোনাকালে পুনরায় প্রমাণিত হয়েছে আমাদের অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষি। সরকার কৃষককে সহায়তা না করে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লক্ষ কোটি টাকা ভর্তুকির অর্থ তুলে দিয়েছে বিদ্যুৎ সেক্টরের অলিগার্কদের হাতে, অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ না কিনেই। একদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৭ হাজার মেগাওয়াট দাবি করে, অন্যদিকে ভারতীয় আদানি কোম্পানির কাছ থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনে, যার মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে ডলারে। এ চুক্তিকে অসম ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
এই বাজেট কালো টাকাকে সাদা করার বাজেট। কালো টাকায় ঢালাও দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। ১৫% কর দিয়ে ব্যক্তির সাথে যে কোনো কোম্পানিকেও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সরকারের কোনো সংস্থাই কালোটাকা সাদাকারীদের কোনো ধরনের প্রশ্ন করতে পারবে না। অর্থাৎ দায়মুক্তি বা আইনি ছাড় দেওয়া হলো। এর ফলে সৎ ও বৈধ আয়ের করদাতাদের নিরুৎসাহিত এবং দুর্নীতিকে সরকারিভাবে উৎসাহিত করা হলো। দুর্নীতি করার এহেন লাইসেন্স প্রদান অবৈধ, অনৈতিক ও অসাংবিধানিক। ১৫% করে কালোটাকা সাদা করার বিপরীতে সৎ করদাতাদের সর্বোচ্চ ৩০% হারে কর দেওয়ার বিধান বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক। এই পদক্ষেপ সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। কথায় কথায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্সের’ বুলি যারা আওড়ায় তাদের পক্ষে রাজস্ব বৃদ্ধির খোড়া যুক্তিতে দুর্নীতির বৈধ লাইসেন্স প্রদান যে অনৈতিক ও সাংঘর্ষিক- তা জেনে শুনেই দুর্নীতিবাজ সরকার অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের দুর্নীতির এই লাইসেন্স দিচ্ছে। সরকারের আনুক‚ল্যে বেড়ে ওঠা আজিজ- বেনজিরদের মত দুর্নীতিবাজদের কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ সৃষ্টির জন্যই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে এই অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কিছু রাজস্ব আদায় হলেও, এতে সার্বিকভাবে রাজস্ব আহরণ ব্যাহত হবে। এই বাজেট দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ দখলদার আওয়ামী সরকার ও তাদের মাফিয়া গুরুদের মাঝে ভাগাভাগির এক সুনির্দিষ্ট ইজারাপত্র মাত্র। এটি স্পষ্ট যে বাজেটটি এমন কতিপয় ব্যক্তির মুনাফার জন্য প্রণীত হয়েছে যারা এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে সাহায্য করছে। এর কুফল শুধু আগামী বছর নয়, আগামী দশকেও এ জাতিকে বহন করতে হবে।
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
বাজারে চরম মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যও এখন বিলাসী পণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতির চরম চাপে মানুষের জীবন আজ ওষ্ঠাগত। বাজারে সবকিছুর দামেই আগুন লেগেছে। মানুষের কেনার ক্ষমতা নেই। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। অনেকের সঞ্চয়ও নেই। এ অবস্থায় মাছ, মাংস, ডিম অর্থাৎ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য কেনা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মানুষ আর এ বোঝা টানতে পারছে না। সরকারি বিবিএস’র হিসাব মতেই, গত মে মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের কাছাকাছি। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২%। এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজারের বাস্তবতায় সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ২০% এর কাছাকাছি। আপনারা বাজারে যান, গত এক বছরে মূল্যস্ফীতি ৫০ শতাংশের বেশি ছাড়িয়ে গেছে। বিবিএস এর তথ্য নিয়ে বিশ্বব্যাংক নিজেই প্রশ্ন তুলেছে। তাদের কাছে এ পরিসংখ্যান নির্ভরযোগ্য নয়। বিবিএস’র দোষ দিয়ে কি লাভ বলুন? সত্যিকারের ফিগার প্রকাশ করলে তাদেরতো চাকুরি হারানোর ভয় আছে। রক্ষক যদি ভক্ষক হয়, তা হলে এই পরিণতি হবে - এটাই স্বাভাবিক।
এ বাজেটে সরকার মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ৬.৫ শতাংশ। কিন্তু কিভাবে এ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা হবে তার কোনো পথনির্দেশনা নেই। আর কে না জানে, সরকারি আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে তাদের আশীর্বাদপুষ্ট কিছু সিন্ডিকেটের কারণেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য গত বছরের তুলনায় কয়েক গুন বেড়েছে। এ সকল সিন্ডিকেট কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, বাজেটে সে বিষয়ে কোনো আলোচনাই স্থান পায়নি। বাজেটে তাই সাধারণ মানুষের জন্য কোন স্বস্তি নেই।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
গত ১৫ বছরে সরকারের আশ্রয়ে ও প্রশ্রয়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ২০০৯ সালে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা, যা এখন ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। দুই লক্ষের মাইল ফলকে পৌঁছাতে আর মাত্র ১৭ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা বাকি। কেবল গত তিন মাসেই বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৬ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৯% থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১%। ইশতেহারে খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য আইন প্রয়োগ অব্যাহত থাকবে বলা হলেও- তা আসলে কথার কথা। বাস্তবে খেলাপি ঋণ আদায় নয়, বৃদ্ধিই অব্যাহত থাকছে। অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, খেলাপি কমাতে সময় লাগবে। এটিও এক ধরনের প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। এদিকে মানুষের অবস্থা দিন দিন আরও শোচনীয় হচ্ছে। কারণ পরোক্ষভাবে এ খেলাপি ঋণের প্রভাব তাদের ঘাড়েই পড়ছে।
উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ,
সরকার মনে করতে পারে তারা একটি বিশাল অংকের বাজেট দিয়েছে। যা বিগত বছরের চেয়ে প্রায় ৫% বেশি। যদিও এর আগে প্রতি বছর ১০% থেকে ১১% বৃদ্ধি করা হয়েছিল। কিন্তু বিগত অর্থবছরে টাকার মান হিসাব করলে, ডলারের বিপরীতে বাজেটের আকার দাঁড়ায় ৫ লক্ষ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেটে ৯৭% অর্থই আনতে হবে ভিক্ষা করে। তাহলে কি উন্নয়নের নামে বাংলাদেশ পুনরায় ৪০ বছর আগের সেই ঋণের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়ল? যাই হোক, বাজেটের আকার তুলনামূলকভাবে কমে যাওয়ায় প্রমাণিত হয় যে আওয়ামী প্রোপাগান্ডা সেল কর্তৃক ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো অর্থনীতির বেলুন মূলতঃ ছিদ্র হয়ে পড়েছে। এদিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬.৭৫% প্রস্তাব করা হলেও বাস্তবে তা অর্জন সম্ভব হবে না। বিশ্বব্যাংক বলছে প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৬ শতাংশ। বাজেটের প্রায় ৪ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকার দুই-তৃতীয়াংশই যাবে অনুৎপাদনশীল বেতন, প্রণোদনা, ভাতা ও ভর্তুকি খাতে। উৎপাদন না হলে প্রবৃদ্ধি হবে কোথা থেকে।
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আপনারা জানেন, প্রস্তাবিত ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ১৭১ কোটি টাকা, উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা এবং রাজস্ব লক্ষ্য ধরা হয়েছে অনুদানসহ ৫ লক্ষ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যয়ের চেয়ে আয় অনেক কম। এনবিআর সূত্র থেকে আয় আসবে ৪ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক ঋণ হিসেবে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, আর অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ব্যাংক থেকেই ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ব্যাংক বহির্ভূত ঋণের পরিমাণ ২৩ হাজার ৪০০ কোটি।
এদিকে অর্থ মন্ত্রনালয়ের Debt Bulletin অনুসারে, গত আড়াই বছরে সরকারের ঋণ বেড়েছে ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি। ৩০ জুন ২০২১ এ ছিল ১১ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। আর ২০২৩ সনের ডিসেম্বরে বেড়ে মোট সরকারি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এই বিপুল অংকের ঋণ অর্থনীতিকে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। সম্প্রতি এক সরকারি প্রক্ষেপণে অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী তিন অর্থবছরে সরকারের মোট ঋণ স্থিতি ২৭ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
আসছে অর্থবছরে সুদ পরিশোধে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি যা মোট বাজেটের ১৪.২৪%। গত ৬ বছরে সুদ পরিশোধে ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুন। পরিচালন ব্যয়ও মিটানো হবে ঋণ নিয়ে। এদিকে অভ্যন্তরীণ ঋনের সুদ ৯৩ হাজার কোটি টাকা আর বৈদেশিক ঋণের সুদ ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এখন মেগা প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পের জন্য যে ঋণ করা হচ্ছে, তা পরিশোধ করতে হবে কয়েক বছর পর থেকে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে এ ঋণের বোঝা আরও বাড়বে। এমনিতেই গত বছর ঋণের বোঝা ছিল মাথাপিছু ১ লক্ষ টাকা, যা গত এক বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিটি নবজাতক শিশুকে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে জন্ম নিতে হবে। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিই আজ ঋণময়। মেগা প্রকল্পের অর্থনৈতিক ফিজিবিলিটি বিহীন এসব ঋণ আমাদের সমগ্র অর্থনীতিকে দেশী-বিদেশী অলিগার্কদের কাছে জিম্মি করে ফেলছে। বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিষয়টি কার্যত এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ,
বাংলাদেশ কার্যত দেউলিয়াত্বের দোরগোড়ায় উপনীত হয়েছে। সম্ভবত আইএমএফ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে উদ্ধারের উপায় খুঁজে না পেয়ে তাদের ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে শর্ত হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ২০.১০ বিলিয়ন থেকে কমিয়ে ১৪.৭৬৯ বিলিয়ন করতে বাধ্য হয়েছে। যদিও এতে শেষ রক্ষা হচ্ছে বলে মনে হয় না। দেশের রিজার্ভের পরিমাণ বর্তমানে ১৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। ডলারের অভাবে ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে পারছে না। মার্কিন কোম্পানিসহ বেশ কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি ও এয়ারলাইন্সের বকেয়া পরিশোধ করা যাচ্ছে না। IATA বারবার বকেয়া বিল পরিশোধের তাগাদা দিচ্ছে। অনেকে ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। এতে ব্যবসাবাণিজ্যেও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। বিদেশিদের অনেকে বিনিয়োগ ফেরত নিয়ে ইউএস ট্রেজারি বিল ও বন্ডে খাটাচ্ছেন। এতে চাপে পড়েছে আর্থিক হিসাব। গত মার্চ পর্যন্ত Balance of Accounts এ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯.২৬% বিলিয়ন, গত বছর একই সময়ে যা ছিল ২.৯৩ বিলিয়ন ডলার। এর আগে আর্থিক হিসেবে সবসময় উদ্বৃত্ত ছিল। ধারাবাহিকভাবে ডলার রিজার্ভ দ্রæত কমে যাচ্ছে। দুঃখজনক হলো রিজার্ভ সংকট কাটিয়ে ওঠার কোন রোডম্যাপই এই বাজেটে দেওয়া হয়নি। অথচ রিজার্ভ ও ডলার সংকট বর্তমান অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সংকট।
অর্থপাচার ও হুন্ডি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ না নিয়ে ডলার বাজার বাগে আনার চেষ্টা বৃথা যেতে বাধ্য। সাম্প্রতিক সময়ে একজন ডামি সাংসদের প্রতিবেশি দেশে নৃশংসভাবে খুন হওয়ার যে সংবাদ গণমাধ্যমে চাউর হয়েছে সেখানে তার স্বর্ণ চোরাচালানসহ নানাবিধ চোরাচালান সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত থাকার কাহিনী উঠে এসেছে, এবং এর নেপথ্যে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট আরও শক্তিশালী গডফাদারের কথাও বলা হচ্ছে। মোদ্দা কথা কথিত সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনারের ন্যায় কোন লেভেলের মহারথীরা বর্তমান সরকারি দলের নমিনেশন পায় এবং কারা এ সরকার চালায় তা জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়েছে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
দেশে প্রতিনিয়ত ধনী ও গরিবের বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বাজেটে পক্ষপাতমূলক নীতিকাঠামো, আয় ও সম্পদের বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দেবে। গত ১২ বছর ধরে দেশে গিনি সহগ ঊর্ধ্বমুখী যা ২০২২ সালে ০.৯৯ এ পৌঁছেছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত- সবার ঘরে ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর যে দুর্বিষহ অবস্থা সেটা দেখার মতো চোখ বা বুঝার মতো দরদ মাফিয়া সরকারের নেই। শাসক শ্রেণীর এ সকল অভিজাতরা নিজেদের সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রস্তাব দিতেও কসুর করে না।
সুইজারল্যান্ডের ইউবিএস ব্যাংকের গত সেপ্টেম্বর ২০২৩ এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী অর্থনীতির নানাবিধ সংকট সত্ত্বেও বাংলাদেশে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ১৭০০ দাঁড়িয়েছে, যারা দেশের জিডিপি’র মোট ১০% নিয়ন্ত্রণ করে। বস্তুত এই গোষ্ঠীর কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ সৃষ্টি করার জন্যই এই বাজেটে মাত্র ১৫% কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার আইনি কাঠামো সৃষ্টি করা হলো।
অর্থ পাচার অব্যাহতভাবে বাড়ছে। জিএফআই বলছে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে ৪,৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়। সিআইডি রিপোর্ট অনুযায়ী, এক বছরে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ৭.৮ বিলিয়ন ডলার পাচার করছে। অন্যান্য মিলে প্রতিবছর কমপক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচার হচ্ছে। বিদেশে বেগমপাড়া, সেকেন্ড হোম, আবাসিক সম্পদ ও বিত্ত বৈভব গড়ে তোলার কথা বাংলাদেশের ঘরে ঘরে সকলেই জানে। জানে না কেবল সরকার। সরিষায় ভূত থাকলে জানবে কিভাবে, বলুন। গত ১৫ বছরে ক্ষমতাসীন সরকারের আমলে ছয় বছরের বাজেটের সমপরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে বলে অনেকে মনে করেন। পাচারের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সিংহভাগই সরকার ও ক্ষমতাসীনদের আশীর্বাদপুষ্ট। আজিজ-বেনজীরদের মতো শত শত দুর্নীতিগ্রস্থ এবং পাচারকারি চিহ্নিত হলেও গত ১৫ বছরে তাদের অনেকের বিচার করা হয়নি। অর্থ পাচার করে দেশ ও দেশের সাধারণ মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে ক্ষমতাসীনদের সহায়তায় তারা নিরাপদে পালিয়ে যাচ্ছে। এই মাফিয়া সরকারের পক্ষে দুর্নীতিবাজদের ধরা সম্ভব না। কারণ এসব দুর্নীতিবাজদের সহায়তায় এ সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে।
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং খাত থেকে যে বিপুল অংকের ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে এতে বেসরকারিক খাতের বিনিয়োগ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। মুদ্রা বাজারে বড় প্রভাব পড়বে। এমনিতেই ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগছে, আমানতকারীদের ৫০,০০০ টাকার চেকও ক্যাশ করতে পারছে না। আমানতকারীদের মধ্যে হাহাকার দেখা দিয়েছে। এমনিতেই dry এসব ব্যাংক থেকে সরকারই যদি এত বিশাল অংকের ঋণ নেয় তাহলে তারল্য সংকট আরো চরম আকার ধারণ করবে। আমানতকারীদের সর্বনাশ হবে। এমনিতেই কয়েক কোটি বেকার। তার ওপর বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হলে কর্মসংস্থান হবে না। অর্থনৈতিক বন্ধ্যাত্ব আরও প্রকট হবে। সামনে অন্ধকার। চলমান চরম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে গতানুগতিক এই বাজেট কোনো সমাধান দিতে পারবে না।
উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ,
জনবিচ্ছিন্ন এই মাফিয়া সরকার বাজেটে যেভাবে করের বোঝা বৃদ্ধি করেছে তাতে মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট সাধারণ জনগণের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে বাজেটের প্রস্তাব শুনেই বাজারে মূল্যবৃদ্ধি শুরু হয়েছে। লক্ষ্য করুণ, আইএমএফের পরামর্শ উপেক্ষা করে রাজস্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে এই বাজেটে কোনো সংস্কার প্রস্তাব আসেনি। যদিও আইএমএফের শর্ত পূরণের কথা বলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম ইতোমধ্যে কয়েকগুন বৃদ্ধি করা হয়েছে। বলা হচ্ছে বছরে ৪ বার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হবে। এমনকি ওয়াসার পানির বিলও গত ১৬ বছরে ১৬ বার বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে জনগণের। যে কোন সময় গণবিস্ফোরণ হতে পারে। এদিকে যারা কর ফাঁকি দেয় তাদের নিকট থেকে কর আদায়ের কোনো পরিকল্পনা না করে যারা নিয়মিত কর দেয় তাদের কাছ থেকে বাড়তি কর আদায়ের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। মুখে ‘ডিজিটাল’ বা ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশের কথা বললেও মুঠোফোনে কথা বলার বিল ও ইন্টারনেট পরিষেবার বিল বাড়ানো হয়েছে। ল্যাপটপের আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। অপরদিকে প্রিন্টারের ওপর এবারও ১৫% কর বাড়ানো হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তিকে সহজলভ্য করার সরকারি ঘোষণাকে মিথ্যা আশ্বাস ও ফাঁপা বুলিই প্রতীয়মান হয়।
ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার ওপর আবগারি শুল্ক বিভিন্ন স্তর ও হারে বিভিন্ন পরিবর্তন আনা হয়েছে। বর্তমানে ১০ লক্ষ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত স্তরটিকে ভেঙে বিভিন্ন স্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া এক থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত স্তরটিকে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। জনগণের পকেট কাটার দিকেই বেশি মনোযোগ দিয়েছে মাফিয়া সরকার।
এবারের বাজেটে শুল্ক কর কমেছে এমন পণ্যের সংখ্যা খুবই নগণ্য। ধারাবাহিকভাবে দাম বাড়তে থাকা নিত্য প্রয়োজনীয় ও নিত্য ব্যবহার্য পণ্যে কর কমানো হয়নি।
যে সরকার নিজেরাই আইনকানুন ও সংবিধান লঙ্ঘন করে তারা কিভাবে আর্থিক ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কতিপয় অর্থ-পিপাসু অলিগার্ক ও দুষ্ট রাজনীতিকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকারি কাজে ব্যয় সংকোচন, ব্যাংকিং খাতে নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা স্থাপন, কিংবা আর্থিক খাতের মৌলিক সংস্কার নিয়ে এই বাজেটে কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
চতুর্দিক থেকে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি বাংলাদেশকে কব্জা করে ফেলেছে। দেশ এক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মহাসংকটে নিপতিত। এর মূল কারণ সুশাসনের অভাব ও জবাবদিহিহীন এই মাফিয়া সরকার। এই মহাসংকট থেকে উত্তোরণের একটিই উপায়। আর তা হচ্ছে এই মাফিয়া চক্র এবং চেপে বসা মাফিয়া স্বৈরশাসকের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করা, তাদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের স্থায়ী অবসান ঘটানো। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে, দুঃশাসন ও সীমাহীন দুর্নীতি থেকে জনগণকে উদ্ধার করতে হবে। দেশে অবিলম্বে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যেটা একমাত্র সম্ভব একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে।
‘আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র’- এই ধাপ্পাবাজির অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রকামী ১৮ কোটি মানুষকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের অবাধ ও নিরপেক্ষ সুযোগ সৃষ্টি করতেই হবে।
যে গণতন্ত্র, সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা ছিনিয়ে এনেছি স্বাধীনতা, যেকোনো মূল্যে সে গণতন্ত্র আমরা ফিরিয়ে আনবই ইন-শা-আল্লাহ। এ দেশে আবার সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনম্যান্ডেট সমর্থিত জাতীয় সংসদে আবার জনকল্যাণ ও মানবকল্যাণমূলক বাজেট প্রণীত হবে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অর্থনৈতিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। বাংলাদেশের জনগণের কাছে এটা বিএনপি’র দৃঢ় অঙ্গীকার ।
আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ - জিন্দাবাদ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মহাসচিব
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি