image

বাংলাদেশকে ‘সেবাদাস’ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্যই জিয়াউর রহমানের মতো জাতীয়তাবাদী নেতাকে হত্যা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আজ ৩০ মে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর শাহজাহানপুরে দুস্থদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কর্মসূচিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।


১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে একদল বিপথগামী সেনাবাহিনীর সদস্যের হাতে নিহত হন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।


এই হত্যাকাণ্ডকে ‘একেবারে পরিকল্পিত’ বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে সেবাদাসে পরিণত করার জন্য এবং পরনির্ভরশীল একটা রাজ্যে পরিণত করার জন্য সেদিন এই জাতীয়তাবাদী নেতাকে হত্যা করা হয়েছে।


মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি (জিয়া) তাঁর অল্প সময়ের রাজনৈতিক জীবনে এ দেশের জন্য অসাধারণ সব উদ্যোগের মধ্য দিয়ে অবদান রেখেছেন। আজকে বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি—শহীদ জিয়াউর রহমানই তা রচনা করেছিলেন।


আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকে যারা বলে বিএনপি কিছু করেনি, শহীদ জিয়া কিছু করেনি, সবকিছু তারাই করেছে। তারা ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রের দায়িত্বে ছিল। সেই সময় তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল রাষ্ট্র পরিচালনা করতে। এবং ব্যর্থতা এমন হয়ে গিয়েছিল যে সংবিধানকে সংশোধন করে সেদিন তারা একদিকে বিশেষ ক্ষমতা আইন, অন্যদিকে জরুরি অবস্থা, সবশেষে একদলীয় শাসন বাকশাল করেছিল। গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল, শহীদ জিয়া সেই গণতন্ত্রকে আবার ফিরিয়ে দিয়েছেন। আজকে সেই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে।


এর আগে সকালে মির্জা ফখরুল ইসলাম শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ‘দেশ পুরোপুরি দুর্বৃত্তদের কবলে’ বলে মন্তব্য করেন।


বিএনপির মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি দুর্বৃত্তদের কবলে, লুটেরা মাফিয়াদের কবলে। একদিকে তারা (সরকার) রাজনৈতিক অধিকার হরণ করছে, অন্যদিকে তারা অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে এবং তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে এটাকে পরনির্ভরশীল একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। তিনি বলেন, ‘আমরা এর বিরুদ্ধে লড়াই করছি। ইনশা আল্লাহ আমরা জয়ী হব।’   


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে নির্বাসিত। একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে নিয়ে ক্ষমতাকে দখল করে আছে। জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকীতে আমরা শপথ নিয়েছি, এই ভয়াবহ যে দানবীয় সরকার তাদের পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।’


বেলা ১১টায় জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ নেতা-কর্মীদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে আসেন। পুষ্পমাল্য অর্পণের পর প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, ফরহাদ হালিম, হাবিবুর রহমান হাবিব, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও হাবিব উন নবী খান, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে কবর প্রাঙ্গণে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের উদ্যোগে দোয়া মাহফিলেও অংশ নেন নেতারা।


জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিএনপি ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, মুক্তিযোদ্ধা দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে জিয়ার কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।


জিয়ার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দুপুরে আগারগাঁও লায়ন চক্ষু হাসপাতাল, হাইকোর্ট মাজার প্রাঙ্গণে, সেগুনবাগিচা, শাহজাহানপুর, নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ একাধিক জায়গায় দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব। এ সময় বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মহানগরের দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সদস্যসচিব রফিকুল আলম, উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক উপস্থিত ছিলেন।