দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে ভোটারবিহীন সরকার দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। আজ রবিবার বিএনপি’র নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, ‘গত বুধবার ‘‘আওয়ামী লীগ ভার্সেস আওয়ামী লীগ’’ উপজেলা নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র বর্জনের মাধ্যমে তামাশার নির্বাচনে দেশের জনগণ শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়ার পর সরকার আরও উদ্ভ্রান্ত হয়ে গেছে। অপদস্থমূলক লজ্জার পরাজয় ঘটেছে গণবিচ্ছিন্ন বেপরোয়া শেখ হাসিনা গংদের। উপজেলার মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে একেবারেই জনপ্রিয়তা শূন্য হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। একটি দল নিজের কর্মদোষে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হওয়ার এটা বড় লক্ষণ। এখন তাদের সঙ্গে কিছু লুটেরা আর ভারত ছাড়া কেউই নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশজুড়েই একদলীয় ভোটারবিহীন ডামি সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে জনগণের পদধ্বনি বাড়ছে। সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে জনগণের সুদৃঢ় ঐক্য অবলোকন করে ভীত সন্ত্রস্ত শেখ হাসিনা আবারও নতুন করে বিএনপিসহ বিরোধীদল নিশ্চিহ্ন করতে ভয়ংকর ক্র্যাকডাউনের পরিকল্পনা করেছেন।’
যুগ্ম সহাসচিব আরও বলেন, ‘গত ২৮ অক্টোবর জনগণের মহাসমাবেশ লণ্ডভণ্ডের মাধ্যমে যেভাবে পরিকল্পিতভাবে সংঘাত সৃষ্টি করে বিরোধীদলের ওপর দমনাভিযান চালিয়েছে, একই কায়দায় গতকাল শনিবার যুবদলের সমাবেশের দিনে গোয়েন্দা সংস্থা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় পলিথিন ব্যাগের মধ্যে ককটেল বিস্ফোরণের নাটক সাজানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত শুক্রবার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নয়াপল্টনে জনজোয়ার দেখে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুংকার দিয়ে বলেছিলেন, “বিএনপি আবার নৈরাজ্য করলে আগে তো একটা শিক্ষা দিয়েছি, এবার ডাবল শিক্ষা দিব। আমরা বসে নেই।” ওবায়দুল কাদের সাহেবের ডাবল শিক্ষা দেওয়ার ঘোষণার পরেই আওয়ামী নৈরাজ্য, সন্ত্রাস ও অরাজকতা করার এজেন্টরা মাঠে নেমেছে। তারাই নয়াপল্টনে পলিথিনের ভেতর ককটেল রেখে এক ভবঘুরে কিশোরকে আহত করেছে। তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় পুলিশ। তারা পরিকল্পিতভাবে আরও নৈরাজ্য সহিংসতা করতে পারে বলে জনগণ সন্দেহ করছে। কারণ শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন দেখলেই তা ছিন্নভিন্ন করার জন্য হামলে পড়াই শেখ হাসিনার দমন বাহিনীর কাজ।’
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার মসনদ রক্ষার প্রভু ভারতের মদদে গত ৭ জানুয়ারির একদলীয় ভোটারবিহীন ডামি নির্বাচনের পরে বায়বীয় সরকারকে রক্ষার জন্য বিশেষ বাহিনী গঠন করা হয়েছে। তারা নানা মিথ্যা অজুহাতে বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, গ্রেপ্তার, দমন-নিপীড়ন ও সাঁড়াশি আক্রমণ চালাচ্ছে।’
রিজভী বলেন, ‘আজ রবিবার বিশ্ব মা দিবস। বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে আপনজন, আমাদের প্রাণপ্রিয় দেশনেত্রী ‘গণতন্ত্রের মা’ বেগম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। শেখ হাসিনা প্রতিহিংসাপরায়ণতার বন্য হিংস্রতায় দেশমাতাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার রিপোর্টেও এই তথ্য উঠে এসেছে। আজ আমাদের হৃদয় বিদীর্ণ হচ্ছে কষ্টে। অবর্ণনীয় কষ্টে আছেন ‘গণতন্ত্রের মা’। উপযুক্ত চিকিৎসা বঞ্চিত বেগম খালেদা জিয়াকে অতি জরুরি সুচিকিৎসার জন্য বিদেশেও যেতে দিচ্ছেন না শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা শুধুমাত্র ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য ৭৮ বছরের একজন প্রৌঢ় মহীয়সী নারী, যিনি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য আজীবন লড়ে যাচ্ছেন, তাকে অন্যায়ভাবে ফরমায়েশি রায়ে বন্দী রেখে মানসিক ও শারীরিক শাস্তি দিচ্ছে। আজ সর্ববিদিত যে, তাকে হত্যা করতে চান শেখ হাসিনা।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি মিথ্যা মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. গিয়াস উদ্দীন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠান। এ ছাড়া চাঁদপুর জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও কচুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র হুমায়ুন কবির প্রধান আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আজ একটি মিথ্যা মামলায় উচ্চ আদালতে জামিন থাকা স্বতেও নিম্ন আদালতে জামিন চাইতে গেলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে তাদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান জানাই।’