আওয়ামী লীগ নয়, ‘অদৃশ্য শক্তি’ দেশ চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ দাবি করে, তারা দেশ চালাচ্ছে। আসলে কী তারা দেশ চালাচ্ছে? তারা দেশ চালায় না, এক অদৃশ্য শক্তি দেশ চালাচ্ছে এবং যাদের নির্দেশে তারা আজ বাংলাদেশের মানুষের অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে।’
গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী যুবদলের এক বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের নামে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ কারাবন্দী নেতাদের মুক্তির দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
বিদেশে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে হয়রানির অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘নিজ দেশে থেকে আমরা আজ পরবাসী হয়েছি। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে যখন আমরা এয়ারপোর্টে যাই, সেখানে আমাদের ঘণ্টা ধরে আটক রাখা হয় বিভিন্ন কারণে এবং সহজে ছাড় দেওয়া হয় না।’
এ পর্যায়ে মির্জা আলমগীর ইসলাম এক অদৃশ্য শক্তি দেশ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র, আমাদের পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, আমাদের প্রশাসন আছে, বিচারব্যবস্থা আছে—প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে তারা আজ কুক্ষিগত করেছে, দলীয়করণ করেছে…তাদের লোক ছাড়া কেউ কোথাও যেতে পারে না।’
মির্জা আলমগীর বলেন, ‘চাকরিও পান না। জিজ্ঞাসা করে দেখেন, অনেকে বিসিএস পরীক্ষা দেন, তাঁদের সবাইকে চাকরি দেওয়া হয় না…তাঁদের ডিএনএ টেস্ট করা হয়। তাঁরা কোন দলের? তাঁদের বাবা-মামা-চাচা-ভাই—কেউ বিএনপির সঙ্গে জড়িত কি না। তাহলে চাকরি হবে না পাস করেও। আর টাকা ছাড়া কোনো চাকরি হয় না। এই একটা অবস্থায় তারা দেশটাকে নিয়ে এসেছে।’
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ২০০৮ সাল থেকে এ দেশের মানুষ আর নিরপেক্ষভাবে ভোট দিতে পারেন না। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তারা আবারও একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চায় ভিন্ন মোড়কে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী ব্যবস্থা তারা সম্পূর্ণ গিলে ফেলেছে। প্রতিবার একেকটা নির্বাচনে নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করে। এবার উদ্ভাবন করেছে ডামি নির্বাচন। ডামি নির্বাচন কী, আওয়ামী লীগ ইলেকশন করবে, অপজিশন ক্যান্ডিডেট (বিরোধী প্রার্থী) বানাবে, সেটাও ডামি প্রতিনিধি থাকবেন, ডামি ক্যান্ডিডেট।’
সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রতি ইঙ্গিত করে মির্জা আলমগীর বলেন, ‘সেই সঙ্গে ওই যে গৃহপালিত দল, তাদের তারা সিলেক্ট করে দেবে যে “আপনার দল থেকে ১০ জনকে আমরা পার্লামেন্টে আসতে দেব।” যদি না দেওয়া হয়, তখন তারা আবার কান্নাকাটি করে যে “তাহলে আমরা নির্বাচনে যাব না।” তখন তারা বলে, “ঠিক আছে, তুমি ১০টাই পাবা—যাও।” একটা ক্যারিকেচার, একটা তামাশা, একটা কৌতুক, আমরা এই জন্য দেশ স্বাধীন করিনি। লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে তারা (আওয়ামী লীগ) বলে, এখন নাকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই যদি গণতন্ত্রের চেহারা হয়, তাহলে এরশাদ সাহেবরা যাবেন কই। তাহলে হিটলার, মুসোলিনি যাবেন কোথায়। নমরুদ, ফেরাউন, হিটলার কেউই টিকে থাকতে পারেননি, অত্যাচার-নির্যাতন করে এরশাদ, আইয়ুব খানও টিকে থাকতে পারেননি।’
‘আবার সন্ত্রাস সৃষ্টি করার চেষ্টা করবেন না, তাহলে এবার ডবল শিক্ষা দিয়ে দেব’, বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য উদ্ধৃত করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি কখনোই সন্ত্রাস করে না, বিএনপির সন্ত্রাসের ইতিহাস নেই। সন্ত্রাসের ইতিহাস আপনাদের। আমি বহুবার বলেছি, সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে আপনাদের জন্ম।’
মির্জা আলমগীর বলেন, ‘মাওলানা ভাসানী যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন, এই মাওলানা ভাসানীকে আপনারা মেরে রূপমহল সিনেমা হল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তারপরই মাওলানা ভাসানী বেরিয়ে গিয়ে ন্যাপ প্রতিষ্ঠান করেন। আমরা ভুলে যাইনি, পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের ডেপুটি স্পিকারকে আপনারা পিটিয়ে হত্যা করেছেন। আমরা ভুলে যাইনি, এই সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে আপনারা এই দেশের জনগণের সব ন্যায়সংগত আন্দোলন দমিয়ে দিচ্ছেন ১৮ বছর ধরে।’
মির্জা আলমগীর বলেন, ‘ওদের লজ্জা-শরম বলতে কিছু নেই এখন। লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে ফেলেছে। এমনভাবে কথা বলে যে তারা একটা এখানে দণ্ডমুণ্ডের কর্তা…আসলেও এটাকে তারা তাদের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে। এটা মনে করে, এই দেশ তাদের সম্পত্তি, যেমন খুশি সেভাবে ব্যবহার করবে। জনগণের যে চাহিদা, সেদিকে তাকায় না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এখনো বলি, এখনো সময় আছে…জনগণের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, সেই জনগণকে বাধ্য করবেন না রাস্তায় বেরিয়ে আসতে উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি করে আপনাদের মসনদ ভেঙে চুরমার করে দিতে। তরুণ-যুবকদের আমি বলতে চাই, কোনো দেশের মুক্তি হয় না, তার স্বাধীনতা রক্ষা করা যায় না, যদি তরুণ-যুবকেরা এগিয়ে না আসেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনাকে বেরিয়ে আসতে হবে, রাজপথে জনগণকে নিয়ে চলে আসতে হবে। সেই জনগণকে দিয়ে আরও শক্তিশালী ব্যূহ রচনা করতে হবে। অন্যথায় আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সবই জলাঞ্জলি যাবে।’
যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন হাসানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, যুবদলের এম মোনায়েম মুন্না, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির রফিকুল আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানী, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া বক্তব্য দেন।