image

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো এবার উপজেলা নির্বাচনও গণতন্ত্রের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দল বর্জন করেছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন।


তারেক রহমান বলেন, বিনাভোটে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে ক্ষমতালোভী হাসিনা সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্মীয় সামাজিক মূল্যবোধগুলোকেই বিনষ্ট করে দেয়নি, ভবিষ্যতে একটি নতজানু পরগাছা প্রজন্ম তৈরী করতে দেশের শিল্প সংস্কৃতি, শিক্ষাব্যবস্থাকেও সুকৌশলে ধ্বংস করে দেয়ার অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকার প্রবেশদ্বারে লেখা রয়েছে ‘কোনো জাতিকে ধ্বংস করার জন্য পারমাণবিক হামলা কিংবা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দরকার নেই। বরং শিক্ষার মান বিনষ্ট করে শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের সুযোগ দিলেই যথেষ্ট’। এ কথাটির তাৎপর্য বোঝার জন্য বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাঙ্গন এবং শিক্ষাব্যবস্থাই হতে পারে একটি নির্মম উদাহরণ।


অটোপাস, অবাধ নকলের সুযোগ, আর ক্যাম্পাসগুলোকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানা বানিয়ে ইতোমধ্যেই একটি প্রজন্মকে বিভ্রান্তির বেড়াজালে আবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। এখন আবার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের আবহমানকালের ধর্মীয় সামাজিক সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সঙ্গে সংশ্রবহীন বিতর্কিত এক শিক্ষা কারিকুলাম। এভাবে একপেশে কারিকুলাম চাপিয়ে দেয়া কিংবা স্কুল খোলা অথবা বন্ধ রাখা নিয়ে একেক সময় একেক রকম সিদ্ধান্ত নেয়া ফ্যাসিস্ট হাসিনা মনে হচ্ছে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদেরকে অন্য কারো ইচ্ছে পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।


বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে দেশের কোনো একটি সেক্টরেও স্বস্তির খবর নেই। অর্থনীতির বেহাল দশা। সবচেয়ে কষ্টে রয়েছে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তথা কৃষক শ্রমিক, নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা স্বল্প আয়ের মানুষ। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’, এমন হাজার হাজার প্রান্তিক কৃষক যারা ব্যাংক থেকে মাত্র ত্রিশ পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা কৃষিঋণ নিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই এখন পুলিশের ভয়ে ঘরছাড়া। কৃষকদের বিরুদ্ধে সারাদেশে ১ লক্ষ ২৬ হাজারেরও বেশি সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় হাজার হাজার কৃষকের বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও খেটে খাওয়া মানুষগুলোর এমন করুন দশা হওয়ার কথা ছিলোনা। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সকল ক্ষোভ আর প্রতিহিংসা যেন দেশের কৃষক শ্রমিক গরিব মেহনতি মানুষ আর বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং মতের মানুষের বিরুদ্ধে।


তারেক রহমান বলেন, তাবেদার হাসিনার সর্বগ্রাসী দুর্নীতি লুটপাট টাকাপাচার আর সর্বক্ষেত্রে অনিয়ম অনাচারের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণের রুখে দাঁড়ানোর গণতান্ত্রিক হাতিয়ার ছিল ভোটের অধিকার। প্রতিবাদের মাধ্যম ছিল নির্বাচন। কিন্তু চিহ্নিত ভোট ডাকাত হাসিনা মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করেছে। নির্বাচন কমিশনকে পরিণত করেছে কিছু অবসরপ্রাপ্ত লোভী প্রতারক আমলার আড্ডাখানায়। নির্বাচন পরিচালনায় নিজেদের অযোগ্যতা, ব্যর্থতা এবং সীমাবদ্ধতা জেনেও জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেই কমিশনের এই প্রতারক চক্র লোভী প্রাণীর মতো তৎপর হয়ে ওঠে। অথচ, ২০১৪, ২০১৮ কিংবা ২০২৪ প্রত্যেকটি জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রেখে দেশে অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।


৭ জানুয়ারীর নির্বাচনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ভোট ডাকাত হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া অসম্ভব, এ কারণেই দেশের ৯৫ ভাগ ভোটার ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচন বর্জন করেছে। যে কারণে জনগণ ডামি নির্বাচন বর্জন করেছিলেন এখনো সেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। গণতন্ত্রের প্রতি সংবেদনশীল জনগণ বিশ্বাস করে ক্রীতদাসের পক্ষে কখনোই স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব নয়। এরপরও অধঃপতিত নির্বাচন কমিশন এবার উপজেলা নির্বাচনের নামে প্রহসন শুরু করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের ইচ্ছের বাইরে নির্বাচন কমিশনেরও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা নেই। স্বৈরাচারী হাসিনা দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ভঙ্গুর করে দিয়েছে। জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচন, যে কোনো নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বিশ্বাস করে, কোনোভাবে দলীয় মনোয়ন আদায় করতে পারলেই তাদের বিজয় নিশ্চিত। বিজয়ী হিসেবে ঘোষিত হতে তাদের শুধু কোনোরকমে নির্বাচনের দিনটি পার করার অপেক্ষা মাত্র। সুতরাং, ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে চলমান উপজেলা নির্বাচনের নামে প্রহসনে অংশ নেয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ রয়েছে বলে গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে না।


তারেক রহমান বলেন, ভোট ডাকাত হাসিনার প্রহসনের নির্বাচন বিপুলভাবে জন প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দেখানোর জন্য ভোট ডাকাত হাসিনা বিভিন্ন সময়ে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। কখনো নিজ দলের একজনের বিরুদ্ধে আরেকজন ডামি প্রার্থী লেলিয়ে দিয়েছে। কখনো স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক চালু করেছে এখন আবার প্রতীক বাতিল করে দিয়ে নিজেরা নিজেরাই উপজেলা নির্বাচনের নাটক জমানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। তবে এসব করে গণতন্ত্রকামী জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবেনা। গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি ভোট ডাকাত হাসিনার পাতা ফাঁদে পা দেবেনা। দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে, নির্বাচনের নামে প্রহসনের অংশীদার না হওয়াই বরং হাসিনার ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে সর্বোত্তম প্রতিবাদ।


বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এবার আমি বিশেষভাবে সারাদেশে বিএনপির সর্বস্তরের নেতা কর্মী সমর্থক এবং শুভাকাঙ্খীদের দৃষ্টি আকর্ষন করে কয়েকটি কথা বলতে চাই। আমি জানি, গত ১৭ বছর ধরে সারাদেশে বিএনপি এবং বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী অপশক্তির হামলা, নির্যাতন নিপীড়ণের শিকার। মিথ্যা কিংবা গায়েবি মামলায় সারাদেশে দলের লক্ষ নেতাকর্মী বছরের পর বছর ধরে ঘরছাড়া। অসংখ্য নেতাকর্মী সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে কারাবন্দী। অনেক নেতাকর্মী গুম খুন অপহরণের শিকার হয়েছেন। অনেকে সন্তান স্বজন সহায় সম্পদ হারিয়েছেন। চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।


তারেক রহমান বলেন, আপনাদের এই সীমাহীন আত্মত্যাগের পথ ধরেই দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে এই মুহূর্তে বিএনপিই সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত রাজনৈতিক দল। তাই, স্বৈরাচারী হাসিনার কবল থেকে রাষ্ট্রক্ষমতা উদ্ধার করে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমের জন্য দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ আপনার আপনাদের প্রতি, তথা বিএনপির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সুতরাং, আপনি দলের যে পর্যায়েরই নেতা হোন না কেন, আপনার আপনাদের প্রতিটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জনগণের আশা ভরসার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। এই বাস্তবতায় বিএনপি মনে করে ক্ষমতালিপ্সু হাসিনার অধীনে উপজেলা নির্বাচনে আপনার আপনাদের অংশগ্রহণ, কখনোই গণতন্ত্রকামী জনগণের আশা-আকাঙ্খার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে পারেনা। ফলে, সার্বিক বিবেচনায় বিএনপি এবং গণতন্ত্রের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দল ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের মতো এবার ডামি উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করেছে।


তিনি বলেন, এটি সত্য, দেশের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটাতে দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ আপনাকে আপনাদেরকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু স্বৈরাচারী হাসিনা ২০১৮ সালের মতোই জনগণের ভোট ডাকাতি করে নিয়ে যাবে এ কারণে দেশের ৯৫ ভাগের বেশি ভোটার ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচন বর্জন করেছিল। তবে এই ভোটাররা জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচনে অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে বিএনপি তথা গণতন্ত্রের পক্ষের প্রার্থীকেই ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে। জনরায়ে সারাদেশে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলের প্রার্থী তথা আপনারাই বিজয়ী হবেন। বাংলাদেশের পক্ষের, গণতন্ত্রের পক্ষের একজন প্রতিনিধি হিসেবে কিংবা একজন নেতা হিসেবে আপনারা প্রত্যেকেই যিনি যার এলাকায় বিএনপির জনপ্রিয়তার জোয়ার টের পান। উপলব্ধি করতে পারেন। এ উপলব্ধি থেকেই হয়তো আপনাদের কারো কারো মনে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। আমি অবশ্যই আপনাদের এই উপলব্ধি অনুধাবন করতে পারি তবে আরো একটি বিষয় সম্পর্কে আপনাদের সতর্ক পর্যবেক্ষণ থাকা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। কি সেটি? সেটি হলো, জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচনে আপনার দল, তথা জনগণের দল বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে সেই নির্বাচন কখনোই গ্রহণযোগ্য হয়না। ভোট ডাকাত হাসিনা এ কারণেই কিন্তু তার অধীনে তথাকথিত নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখানোর জন্য ভয় কিংবা প্রলোভন দেখিয়ে আপনাকে তথা বিএনপিকে প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাতে চায়। তবে যে মুহূর্তে কাগজ-কলমে তথাকথিত নির্বাচনে আপনার আপনাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে ফেলা যাবে তখনই দেখবেন আপনাদের সামনে ভোট ডাকাত হাসিনার আসল স্বরূপ উম্মোচিত হয়ে পড়ছে।


তারেক রহমান বলেন, দেশের ৯৫ ভাগের বেশি ভোটার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি তথা গণতন্ত্রের পক্ষের প্রতিনিধিরা সারাদেশে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। তবে সারাদেশে বিএনপির তুমুল জনপ্রিয়তা থাকা স্বত্তেও ক্ষমতালিপ্সু হাসিনা তার অধীনে কোন নির্বাচনেই বিএনপি তথা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিকে বিজয়ী হতে দেবেনা। প্রহসনের নির্বাচনকে নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক প্রমান করার জন্য হয়তো বাধ্য হয়ে কয়েকজনকে জয়ী ঘোষণা করা হবে। কিন্তু আপনারা নিশ্চিত থাকুন, বিএনপি থেকে নির্বাচিত কাউকেই জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হবেনা। বরং মিথ্যা মামলা দিয়ে আপনাদেরকে জেলে পাঠানো হবে নয়তো পরিপত্র জারি করে দায়িত্ব কেড়ে নেয়া হবে। স্বৈরাচারী হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান কিংবা রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ বিভিন্ন সময়ে যে কয়জন নেতা বিএনপি থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাদের একজনকেও ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হয়নি। জনগণের রায়ে নির্বাচিত হয়েও তাদেরকে অধিকাংশ সময়ই মিথ্যা মামলায় কারাগারে কাটাতে হয়েছে।


তিনি বলেন, গত ১৭ বছর ধরে আপনাদের উপর নির্মম নির্যাতন নিপীড়ণের পরও আপনাদেরকে দল এবং জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়নি। বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যায়নি। বরং বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে গণতন্ত্রকামী মানুষের হৃদয়ে বিএনপি জায়গা করে নিয়েছে। বিএনপির সর্বস্তরের প্রতিটি নেতাকর্মী-শুভার্থী-সমর্থক তথা আপনাদের শ্রম-ঘাম-মেধা-ত্যাগ তিতিক্ষার কারণেই বিএনপি এখন আর শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলই নয় বরং বাংলাদেশের প্রতিটি গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে বিএনপি এখন বিশ্বস্ত একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি’র স্বার্থের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের স্বার্থ। বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে বিএনপির অস্তিত্ব। তাই দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে দেশ এবং জনগণের স্বার্থের প্রতি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েই বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতৃত্ব তথা বিএনপিকে প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ, জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস।


বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী অপশক্তি আপনাকে কিংবা আপনাদেরকে ভয় কিংবা প্রলোভন দিয়ে বিভ্রান্ত করতে চাইলেও দয়া করে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। তথাকথিত উপজেলা নির্বাচন কিংবা কথিত নির্বাচনে অংশগ্রহণ এখন এই মুহূর্তে জরুরি বিষয় নয়। স্বৈরাচারী হাসিনার শাসনামলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার চেয়ে আপনাদের জন্য জনগণের ভালোবাসায় ধন্য হওয়া অনেক বেশি গৌরবের, অনেক বেশি সম্মানের।


শহীদ জিয়ার সৈনিক হিসেবে, দেশনেত্রীর কর্মী হিসেবে আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, দেশের স্বার্থের সঙ্গে আপোষ করলে স্বাধীনতার ঘোষককে প্রাণ দিতে হতোনা। মাদার অফ ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়াকে জালিমের বেড়াজালে বন্দি থাকতে হতোনা। সুতরাং, দলের সর্বস্তরের নেতা কর্মী সমর্থক শুভাকাঙ্খীদের প্রতি আমার বিনীত আহবান, তথাকথিত উপজেলা নির্বাচন বর্জন করুন। জনগণকেও বর্জন করতে উৎসাহিত করুন। গণতন্ত্রের পক্ষ নিন। জনগণের সঙ্গে থাকুন। জনগণকে সঙ্গে রাখুন।

তারেক রহমান বলেন, বর্তমানে শুধু গণতন্ত্র কিংবা মানবাধিকারই নয়, বর্তমানে খোদ দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতাই বিপন্ন। বুয়েটে আবরার, মধুখালীতে আরশাদুল আর আশরাফুলের নৃশংস হত্যাকাণ্ড কিংবা কুকি-চীনের তৎপরতার পরও যদি আমরা পরিনাম বুঝতে ব্যর্থ হই, আমরা যদি এখনই সতর্ক এবং সচেতন না হই, তাহলে সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন আমাদেরকে নিজ ভূমিতেই হয়তো ফিলিস্তিনিদের ভাগ্যবরণ করতে হবে। সেই আলামত ইতোমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সুতরাং, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি, গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষায় হাতে হাত রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে জনগণের বাংলাদেশ জনগনে কাছে ফিরিয়ে আনা সময়ের অপেক্ষা মাত্র।