শুধু অতি ডান আর অতি বাম নয়, সব পন্থার, সারা দেশের মানুষ এই সরকারকে উৎখাত করতে চায়, এই মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে ওই মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, উৎখাত করতে চাওয়ার কারণ কী, তা নাকি প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পারছেন না। বুঝতে পারছেন না, নাকি বুঝতে চাচ্ছেন না?
বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল। ঐতিহাসিক মে দিবস উপলক্ষে বিএনপির অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল এ শ্রমিক সমাবেশ ও সমাবেশের পর শোভাযাত্রার আয়োজন করে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, এ দেশের অতি বাম, অতি ডান—সবই এখন এক হয়ে গেছে, এটা কীভাবে হলো, আমি জানি না। এই দুই মেরু এক হয়েও সারাক্ষণ শুনি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে হবে। অপরাধটা কী আমাদের?’
বিএনপি মহাসচিব গতকাল শ্রমিক দলের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের সমালোচনা করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, শুধু বিএনপি নয়, এ দেশের সব মানুষ জেগে উঠেছে। বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতো; ধ্বংসের মধ্য থেকে বিএনপি জেগে ওঠে, গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারের কথা বলে। বিএনপি পরাজিত হবে না। গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অতীতে যেমন ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, আরও ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
দেশের শ্রমজীবী মানুষদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, শ্রমজীবীদের রক্তে, ঘামে এ বিশ্ব সভ্যতা গড়ে উঠেছে। কিন্তু এ দেশের শ্রমিকেরা, মজদুরেরা তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে তাঁরাই সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন। তাই শ্রমিকেরাসহ সারা দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে চান।
এই সরকারের আমলে মানুষের ন্যূনতম অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। ডামি প্রার্থী, ডামি নির্বাচন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা হয়েছে। আর যারা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায়, বাক্স্বাধীনতা, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, তাদের জেলে অত্যাচার নির্যাতন করে সাজা দেওয়া হয়েছে। বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন সব কব্জা করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছে।
শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এ দেশে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত শ্রমিক শ্রেণি। তাঁরা ভালো-মন্দ খেতে পারেন না, তাঁদের সন্তানেরা ভালো স্কুলে যেতে পারে না, ন্যূনতম মজুরি পায় না, প্রচণ্ড গরমে কষ্টের মধ্যে কাজে যেতে হয়। কিন্তু এ সরকার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করেই চলেছে। জ্বালানির মূল্য আবার বাড়ানো হয়েছে। লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। ব্যাংকগুলোকে মেরে ফেলেছে। তাই এখন আর চুপ করে বসে থাকলে চলবে না। এক হয়ে সবাইকে জেগে উঠতে হবে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
সমাবেশে মে দিবসের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। তাতে খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নতুন শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা, আউট সোর্সিং বন্ধ করে স্থায়ী নিয়োগ, শ্রমিক হত্যা বন্ধ, শ্রমিকদের বাঁচার মতো বাজারদর নিশ্চিত এবং শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করাসহ অন্যান্য দাবি তুলে ধরা হয়।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম কখনো কুসুমাস্তীর্ণ হয় না। অধিকার আদায়ের সংগ্রাম কোনো দিন সহজ ছিল না। অধিকার জোর করে কেড়ে নেওয়া যাবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এবার শ্রমিক দিবসে সরকারের স্লোগান শ্রমিক মালিক গড়ব দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ। এই স্লোগানে মানুষের মুক্তি হবে না। মানুষের মুক্তি হবে এই অবৈধ সরকারের পতন হলে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেন, সরকারের পক্ষে চোর, লুটেরা, ব্যাংক ডাকাতেরা আছে। সরকারের লাজ লজ্জা নেই।
সমাবেশ শেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে ফকিরাপুল গিয়ে শেষ হয়। সমাবেশে বিএনপি ও সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের থানা ও ওয়ার্ড কমিটির নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।