image

সংসদ অধিবেশন শুরুর দিনে সারা দেশে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর পূর্বঘোষিত কালো পতাকা মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ। রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণের সাতটি স্পটে পুলিশি বাধায় বিএনপি’র মিছিল পণ্ড হয়ে যায়। উত্তরার স্পট থেকে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খানসহ ১১ জনকে আটক করা হয়। আটকের ঘণ্টাখানেক পর থানা থেকে মঈন খানকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।


মতিঝিলের পীরজঙ্গী শাহ মাজারের সামনে স্পটেও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে মিছিল করতে দেয়নি পুলিশ। রাজধানীর মিরপুরের স্পটেও কালো পতাকা মিছিল করতে দেয়নি পুলিশ। সেখানে জড়ো হওয়া ৬-৭ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। পরে মিরপুরের অন্য স্পটে মিছিল করেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ দলটির নেতাকর্মীরা। দয়াগঞ্জে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে বের হওয়া কালো পতাকা মিছিলের পেছন থেকে লাঠিচার্জ করে পণ্ড করে দেয় পুলিশ। এ সময় মিছিল থেকে ৮ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়।


রাজধানীর বাড্ডার সুভাস্তু ভ্যালির সামনে বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়ো হতে দেয়নি পুলিশ। পরে বাড্ডা এলাকার অন্য স্পটে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের নেতৃত্বে মিছিল করেন নেতাকর্মীরা। আজিমপুর বটতলায় কালো পতাকা মিছিলে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ হামলা চালায়। সেখান থেকে চকবাজার থানা বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রনিসহ ১৫ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। যাত্রাবাড়ীর স্পটেও কালো পতাকা মিছিল করতে দেয়নি পুলিশ। পরে রাজধানীর শান্তিনগরে মিছিল করেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দলটির নেতারা। বিজয়নগর এলাকায় কালো পতাকা মিছিল করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের শাহবাগ থানা বিএনপি। পুলিশ সে মিছিল থেকে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। 

এদিকে সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, সারা দেশে কালো পতাকা মিছিল থেকে ৫০ জনের মতো বিএনপি নেতাকর্মী আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের হামলায় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।  


আটকের পর মঈন খানকে থানা থেকে ছেড়ে দেয় পুলিশ

‘ডামি সংসদ’ বাতিলের দাবিতে কালো পতাকা মিছিল করতে দুপুরে রাজধানীর উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের কবরস্থানের পাশের সড়কে জড়ো হন বিএনপি নেতারা। সোয়া ২টায় সেখানে উপস্থিত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেয়া শুরু করেন আবদুল মঈন খান। এ সময় কিছু নেতাকর্মী রাস্তায় দাঁড়ান। তারা দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই ৮ থেকে ১০ জন পুলিশ সদস্য দৌড়ে আসে। পুলিশকে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক কর্মী দৌড়ে পালিয়ে যান। এ সময় মঈন খান বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছিল একটি কারণে। সেটা হলো, আমরা একটা দেশ চাই, যে দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসন থাকবে। কিন্তু আজ কিছুই নাই। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা রাজপথে নেমেছি। বিএনপি’র এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করে যাব। রাজপথে থাকবো। কয়েক মিনিট পরেই মঈন খানকে জোর করে গাড়িতে তুলে পুলিশ। গাড়িতে তোলার আগে মঈন খান পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি কী অপরাধ করেছি?’


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঈন খানকে পেছন থেকে ঠেলে গাড়িতে তোলা হয়। মঈন খানের সঙ্গে মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদসহ ১১ জনকে আটক করা হয়। তখন সমাবেশও পণ্ড হয়ে যায়। পুলিশের গাড়িতে করে উত্তরা পশ্চিম থানায় নেয়া হয় মঈন খানকে। ঘণ্টাখানেক পরতাকে ছেড়ে দেয়া হয়।


এ বিষয়ে পুলিশের উত্তরা পশ্চিমের এডিসি সালাহউদ্দিন বলেন, তারা (বিএনপি) সমাবেশের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এটা ছিল অনুমোদনহীন। তারা দরখাস্ত করেছিল, কিন্তু আইনশৃঙ্খলার কথা বিবেচনা করে এটা অনুমোদন করা হয়নি। যে কারণে আমরা ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি। ৮ থেকে ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। মঈন খানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে এডিসি সালাহউদ্দিন বলেন, আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আসলে ওনার নিরাপত্তাঝুঁকি দেখা দিয়েছিল। যে কারণে আমরা তাকে একটু সরিয়ে নিয়েছি আরকি।


কী ধরনের নিরাপত্তাঝুঁকি ছিল, তা জানতে চাইলে এডিসি সালাহউদ্দিন বলেন, মঈন খানের ব্যক্তিগত ও শারীরিক ঝুঁকি ছিল। মঈন খানকে তুলে নেয়ার সময় তাকে হেনস্তা করা হয়েছিল- এমন অভিযোগের বিষয়ে এডিসি সালাহউদ্দিনের বক্তব্য, কোনো খারাপ আচরণ করা হয়নি। পুলিশ সদস্যরা পেশাদারির পরিচয় দিয়েছেন। পরে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি আবুল হাসান বলেছেন, মঈন খানকে কেউ আটক করেনি। তাকে বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে।


মিছিল করতে পারেননি গয়েশ্বর

পুলিশি বাধার কারণে মতিঝিলের পীরজঙ্গী শাহ মাজারের সামনে কালো পতাকা মিছিল করতে পারেননি গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে কর্মসূচির প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি সেখানে উপস্থিত হন। পুলিশি বাধায় মিছিল করতে না পেরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে চলে যান তিনি।


এ সময় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, উত্তরা থেকে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানকে আটক করেছে। আর এখানে আমাদের নেতাকর্মীরা দাঁড়াতে পারে নাই। এখানে আসার পরে সার্বিক পরিস্থিতি বুঝছি যে, অযথা আমার কর্মী গ্রেপ্তার হবে। আমার কর্মীরা একত্রিত হতে পারছে না। আজকে এই পুলিশি তাণ্ডব ও বাধার আমরা তীব্র প্রতিবাদ করি। 


গণঅধিকারের মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ

এদিকে রাজধানীতে গণঅধিকার পরিষদের কালো পতাকা মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। এতে ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে দলটি। বিকালে পুরানা পল্টনে ‘অবৈধ সংসদ বাতিলসহ একদফা দাবিতে’ এই কালো পতাকা মিছিল বের করে গণঅধিকার পরিষদ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের বেশ কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।


একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান, উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, ফাতিমা তাসনিম, জসিম উদ্দিন আকাশ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারজানা কিবরিয়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নুসরাত কেয়া, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুনসহ আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।


বিভিন্ন জেলায় কালো পতাকা মিছিলে পুলিশের বাধা 

‘ডামি’ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ বাতিল ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ নানা ইস্যুতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায দেশব্যাপী কালো পতাকা মিছিল করেছে বিএনপি। এ সময় পুলিশের বাধার মুখে পড়ে নেতাকর্মীরা। পণ্ড হয়ে যায় মিছিল। তবে অনেক স্থানে পুলিশি বাধা পেরিয়ে কর্মসূচি পালন করে দলটি।