শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে গণতন্ত্র দিয়েছিলেন সেটি আজ মৃত। তিনি যে গণতন্ত্র দিয়েছিলেন সেটি আমরা এ দেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবো বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থানী কমিটির সদস্য ড.আব্দুল মঈন খান। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৮ তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে দলটি। এ সময় নেতাকর্মীরা সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকম শ্লোগান দিতে থাকেন।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম আজাদ, জয়নুল আবেদীন ফারুক, তাইফুল ইসলাম টিপু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, মৎস্যজীবি দলের নেতা আব্দুর রহিম, আবুল কালাম আজাদ, ভিপি সেলিম, নাজমুল হাসান, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে গণতন্ত্র দিয়েছিলেন সেটি আজ মৃত। তিনি যে গণতন্ত্র দিয়েছিলেন সেটি আমরা এ দেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবো। তিনি বলেন, ২৫ শে মার্চ রাতে যখন বাংলাদেশের ৭ কোটি মানুষের ওপর পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন জিয়াউর রহমান এই হানাদার বাহিনীর হামলার প্রতিরোধ করেছিলেন। সেদিনতো বর্তমান সরকারের কোন ব্যক্তি প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করেনি। তারাতো পালিয়ে গিয়েছিল পার্শ্ববর্তী দেশে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের প্রত্যেককে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ বুকে লালন করতে হবে, তবেই আমাদের মানুষের সব অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারবো। পৃথিবীতে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠাতার সংগ্রাম সহজ নয়। এ জন্য আমাদেরকে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। একজন স্বৈরাচার সরকারের সকল অস্ত্র, গুলিকে আন্দোলন করে পরাভূত করবো , আমাদের বুকে বল আছে।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা অভিযোগ করে বলেন, তাড়াহুড়ো করে নতুন কেবিনেট তৈরি করে সরকার হয়তো ভাবতে পারে, তারা টিকে যাবে কিন্তু এই স্বপ্ন পূরণ হবে না। ৭ জানুয়ারি দেশের মানুষ ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে সরকারের মুখে কলঙ্ক লেপন করেছে। বিশ্বের সুশীল সমাজ, মানবাধিকার সংস্থা, বেসরকারি সংস্থা গুলো সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই নির্বাচনকে প্রহসন মূলক নির্বাচন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তারা বলেছে এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে একদলীয় শাষন পাকাপোক্ত হয়েছে। বিশ্ববাসী এ সরকারের নির্বাচনকে নাটক ও প্রহসন বলেছে।
তিনি বলেন, আমরা মানুষের সেবা করার জন্য রাজনীতিতে নেমেছি। এ দেশের মানুষকে আমরা বলেছি ক্ষমতার জন্য আমরা রাজনীতি করতে আসিনি। মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য রাজনীতি করি। বিএনপি লগি-বৈঠার রাজনীতি করে না। বিএনপি ভদ্র মানুষের দল। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা নিরস্ত্র মানুষদের নিয়ে এ দেশের সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবো ইনশাআল্লাহ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের মৃত্যুর সঙ্গে জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও বিশ্বাস বিলিন হয়ে যাবে না; কারন আজকের দিনে জিয়াউর রহমানের তরুন সেনারা আছেন। আজকে লজ্জার কিছু নেই; স্বৈরাচারী সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করে ক্ষমতায় চেপে বসেছে। জনগন ভোট ছাড়া যারা জোর করে ক্ষমতায় এসেছে তারা আর যাই হোক গণতান্ত্রিক সরকার হতে পারে না। তিনি বলেন, সরকার জিয়াউর রহমানের নাম শুনলেই ভয় পায়, কারন, জিয়াউর রহমান যেখানে সফল ছিলেন, সরকার ঠিক সেই জায়গাতেই আজকে ব্যর্থ।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতার ভাষ্য- স্বৈরাচার এরশাদ গণতন্ত্র হত্যা করে ঠিক তখনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া তার পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখন সরকারের যারা আছেন তারা জিয়াউর রহমানের কথা শুনতেই পারে না। কারণ যেখানে তারা ব্যর্থ হয়েছে সেখানেই জিয়াউর রহমান সফল হয়েছিলেন। দুর্ভিক্ষের পরও তার সময় খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছিল। চিনি, শিল্প সব খাতে রপ্তানি করেছিলেন। জিয়ার আমলেই শ্রমিক পাঠিয়ে লাখ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসা শুরু হয়।
স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি বিএনপির নেতাকর্মীদের যারা কঠিন সময়ে আন্দোলনে রাজপথে সরব থেকেছেন, তারা জিয়াউর রহমানের আদর্শ সৈনিক। তিনি বলেন, বিএনপি কতো নেতা, কতো সৈনিক, একদলকে কারাগারে নিচ্ছে অন্যদল জেগে উঠেছে। সারা দেশের জনগণ আজ বিএনপির সঙ্গে আছে। যতো ষড়যন্ত্রই হোক, বিএনপিকে নি:শেষ করা যাবে না। আমরা পরাজিত হইনি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের মানুষকে আশার আলো দেখিয়েছিলেন একজন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। যদি দেশ স্বাধীনতা না পেতো তবে তাঁর ফাঁসি হতো। সেটি জেনেও তিনি মা ও মাটির টানে তিনি যুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পরও কোন জাতীয়তা ছিল না কেউ আমাদেরকে জাতি ভাবতো না। আর তিনি তখন জাতিসত্তার জন্যে জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত দল আজ দেশের কথা বলে, স্বাধীনতার কথা বলে।