বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে দেশবাসী আরেকটি সুখবর পাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এক ভিডিও বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রিয় দেশবাসী, বিনাভোটে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য দেশে বর্তমানে জাতীয় নির্বাচনের নামে জনগণের সঙ্গে নিদারুন তামাশা চলছে। জনগণের কাছে 'নির্বাচনে ভোট প্রদান' ছিল একধরণের রাজনৈতিক উৎসব। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সেই রাজনৈতিক উৎসবকে 'ভোট ডাকাতির উৎসবে' পরিণত করেছে। জেলাশহর লক্ষীপুরের এক ছাত্রলীগ নেতার একাই একটি মার্কায় ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩টি ব্যালটে সিল মেরে প্রমান করেছে- চিহ্নিত ভোট ডাকাত শেখ হাসিনা ভোট ডাকাতির সংস্কৃতি জেলা উপজেলা গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে নির্বাচনী মাঠ জমানোর জন্য ফ্যাসিস্ট হাসিনা বর্তমানে তার নিজের দলেরই একজনের পেছনে আরেকজনকে লেলিয়ে দিয়েছে। বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তি এবং দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ সবার চাওয়া একটি অবাধ নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। অথচ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবর্তে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো ভাগ বাটোয়ারার নির্বাচনের পথ বেঁচে নিয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়া দেশে বিদেশে কোথাও জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক হিসেবে বিবেচিত হবেনা। বিএনপিকে জাতীয় নির্বাচনকে দূরে রাখতে বিএনপি'র নেতাকর্মীদের পেছনে সুকৌশলে পুলিশের ইউনিফর্ম পরিয়ে চিহ্নিত মাফিয়া চক্রকে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকার গত একযুগে সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেড় লাখেরও বেশি মামলা দিয়েছে। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এসব ভুয়া মামলায় ৮০ লাখের বেশি মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ ধরণের অনাচার বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত বিএনপি'র প্রায় ৫ হাজার নিরপরাধ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরআগে গত ২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত বিএনপি'র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিথ্যা কিংবা গায়েবি মামলার দোহাই দিয়ে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মাফিয়া চক্রের ক্র্যাকডাউন অব্যাহত রয়েছে। ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদারবাহিনী এবং তাদের সহযোগী সঙ্গী রাজাকারবাহিনীর চরিত্রে গড়ে ওঠা আওয়ামী হানাদার বাহিনীর নির্যাতন নিপীড়নে সারাদেশে বিএনপির দুই কোটির বেশি নেতাকর্মী দিনের পর দিন ঘরছাড়া।
তারেক রহমান বলেন, নির্বাচন কমিশনের চেয়েও বিচার বিভাগের অবস্থা আরো ভয়ঙ্কর। মিথ্যা কিংবা গায়েবি মামলা দিয়ে পুলিশ যেভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের ফাঁসাচ্ছে একইভাবে কতিপয় বিচারকও বিরোধী দলকে ফাঁসাতে আদালতকে ব্যবহার করছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে এখন শুধু গায়েবি মামলাই নয়, গায়েবি বিচারও চলছে। বিএনপি নেতাকর্মী যারা কয়েকবছর আগে ইন্তেকাল করেছেন তাদেরকেও কারাদণ্ড দেয়া হচ্ছে। এর মানে, গায়েবি মামলার যেমন কোনো তদন্ত হচ্ছেনা অপরদিকে আদালতে মামলার কোনো শুনানিও হচ্ছে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণ জানতে চায়, বিএনপি'র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেখানে গণহারে গ্রেফতার এবং গণহারে রায় প্রদান চলছে বিএনপির নেতাকর্মীরা যেখানে দিনের পর দিন নিজেদের বাসাবাড়িতেই নিজেরা থাকতে পারছেনা সেখানে বিএনপির পক্ষে কিভাবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ সম্ভব? জনগণ জানতে চায়, মাফিয়া চক্রের দোসর ভুঁইফোড় রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পায় তাহলে গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, এইসব দলগুলো কেন নিবন্ধন পায়নি? এর কারণ, এই মেরুদন্ডহীন নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কখনোই স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব নয়। ফলে এই নির্বাচন কমিশনের পক্ষে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা অসম্ভব।
তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার দুর্নীতি দুঃশাসনের কারণে এমনিতেই জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। অর্ধাহারে অনাহারে কাটছে, কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষের দিনকাল। এমনকি মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে সংসার পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে একতরফা ভাগবাটোয়ারার এই প্রহসনের নির্বাচনের জন্য কেন অকারণে রাষ্ট্রের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হচ্ছে? একজন মাত্র ব্যক্তির অবৈধ ক্ষমতা লিপ্সার কারণে শুধু ব্যাঙ্ক বীমা নয়, পুরো দেশটাই এখন দেউলিয়া হওয়ার পথে। দেশ থেকে ১১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি পাচার করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। ভোট ডাকাত হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য এবং আওয়ামী দুর্নীতিবাজরা দেশটাকে তাদের লুটপাটের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছে। আওয়ামী লুটেরা চক্র শুধু অর্থনৈতিকভাবে দেশটাকে দেউলিয়া করেনি, দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতাও বিপন্ন করে দিয়েছে। এই লুটেরা চক্র শুধু বর্তমান প্রজন্মকেই নয় দেশের ভবিষৎ প্রজন্মকেও ঋণে ডুবিয়েছে। ভবিষৎ প্রজন্মের উজ্জল সম্ভাবনার পথও কঠিন করে দিয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা ২০১৪ কিংবা ২০১৮ বারবার প্রতিবার নির্বাচনের নামে জনগণের ভোট লুন্ঠন করেছে। বিনাভোটে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে বছরের পর বছর ধরে বিরোধী দল ও মতের মানুষকে গুম-খুন-অপহরণ-গুপ্তহত্যা করেছে। এমনকি বিরোধী বিরোধী দলের সমাবেশে গুলি করে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। এর প্রতিবাদে বিএনপিসহ বিরোধী দলের রাজনৈতিক দলগুলো ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ-বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। গত দশ বছরে একবারের জন্যও হরতাল-অবরোধ দেয়া হয়নি। তবুও ক্ষমতালোভী ফ্যাসিস্ট হাসিনা গণতন্ত্রকামী জনগণের আকাঙ্খা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। সকল শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিক্ষোভ আর জনদাবি উপেক্ষা করে আবারো ফ্যাসিস্ট হাসিনা তার ফ্যাসিবাদী শাসনকে দীর্ঘায়িত করার নীলনকশা বাস্তবায়নের জাল বিস্তার করেছে। ষড়যন্ত্র যাই হোক, গণতন্ত্রকামী জনগণ ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে আর এক মুহূর্তও মানতে রাজি নয়।
তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পদত্যাগের একদফা দাবিতে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর আহবানে সারাদেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল-অবরোধ পালিত হচ্ছে। জনগণের আন্দোলন বানচাল করতে মাফিয়া চক্রের পুলিশের ইউনিফর্ম পরিহিত একটি অংশ এবং সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা একদিকে যানবাহনে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্নরকমের নাশকতার পথ বেঁচে নিয়েছে। তবে জনগণের আন্দোলন দমানো যায়নি। দমানো যাবেনা। কারণ, ফ্যাসিস্ট হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন শোষণ থেকে মুক্তিকামী লক্ষ কোটি জনগণ চলমান গণ আন্দোলনে শামিল হয়েছে। শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে রেখে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। চলমান আন্দোলনে যারা কষ্ট স্বীকার করছেন, ত্যাগ স্বীকার করছেন, আন্দোলন সফল করে চলছেন আপনাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
আশাবাদ ব্যক্ত করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, চিহ্নিত ভোট ডাকাত হাসিনার অধীনে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য যারা ফ্যাসিস্টদের বর্তমান আস্তানা গণভবনে ধর্ণা দিচ্ছে, এইসব রাজনৈতিক দল এবং ভাগবাটোয়ারার প্রার্থীদেরকে চিহ্নিত করুন। এরা ফ্যাসিবাদের দোসর,দেশ এবং গণতন্ত্রের শত্রু। বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো '৫৭ সেকেন্ডে ৪৩ ভোট' মডেলের ভাগবাটোয়ারার এই নির্বাচনকে বর্জন করেছে। বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো দেশের বারোকোটি মানুষের লুন্ঠিত ভোটের অধিকার আদায় করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে রেখে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে। আমরা যদি সিদ্ধান্তে অটল থাকি, ঐক্যবদ্ধ থাকি, এই বিজয়ের মাসেই হয়তো আমরা আরেকটি বিজয়ের সুখবর পাবো। ইনশাআল্লাহ।