image

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যত ও ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল


গত ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি কর্তৃত্ববাদী সরকারের অবর্ণনীয় মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যায়ের শিকার হয়েছে। এ সময়টা ছিল বিএনপি'র জন্য গণতান্ত্রিক নীতিতে অবিচল থাকার প্রতি ধৈর্য্য প্রদর্শনের চরম পরাকাষ্ঠাস্বরূপ। প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি মনে করে জনগণের যে ক্ষমতা অন্যায়ভাবে তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে, সেটা পুনরায় জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়া তাদের রাজনৈতিক দায়িত্ব। গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলোর যথাযথ সংরক্ষণই ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির মূল ভিত্তি বলে বিএনপি বিশ্বাস করে।


আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনে জনগণের আশা আকাঙ্খাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। আমরা গণতান্ত্রিক দেশ ও প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে কাতারবদ্ধ হওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করার পাশাপাশি লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম ও রাজনীতি নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশিকে স্বাধীনতা, সমতা এবং সমৃদ্ধির সকল দেশীয় উদ্যোগ বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ।


আমাদের দল জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল ইন্দো প্যসিফিক অঞ্চল নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।


১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পর থেকে, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশটিকে সোভিয়েত ব্লক থেকে বের করে নিয়ে এনে দেশটিকে গণতান্ত্রিক বিশ্বের একটি মুক্ত ও গুরুত্বপূর্ণ সদস্যে পরিণত করেন। দেশ গঠনের সময়গুলোতে রাষ্ট্রপতি জিয়া এবং তাঁর স্ত্রী তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বেসরকারিকরণ, মুক্তবাজার এবং বিশ্বায়ণ নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি সাধন করে, বাংলাদেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে উদ্ধার করেন।


কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে দেশটি অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীতন্ত্র ও ক্রনি পুঁজিবাদী শ্রেণী এবং বৈদেশিক শক্তির মদদে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত কর্তৃত্ববাদী একদলীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। চোরাই নির্বাচনের মাধ্যমে নাগরিকদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার কথা বলাই বাহুল্য । এই একদলীয় সরকারের শাসনকালে রাজনৈতিক নিপীড়ণের ফলে ১,২০৪টি জোরপূর্বক গুম, ১,৫৩৯টি রাজনৈতিক হত্যা, ক্রসফায়ারের নামে ৭৯৯টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ১,৪১,৬৩৩টি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মামলায় ৪৯,৪৭,০১৯ জন বিএনপি কর্মী-সমর্থককে ফাঁসানো হয়েছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাই এখন বিএনপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।


এ লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল এবং উদারপন্থী দেশগুলোর গভীর সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যত নির্ধারণের প্রয়াসে একটি ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে।


ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রাণকেন্দ্রে বাংলাদেশ:


ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিকের একটি গরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি বঙ্গোপসাগরের শীর্ষে অবস্থিত। স্থলপথে বিশ্বের দুটি মহাশক্তি এবং নেপাল, ভুটান ও মায়ানমারের সাথে এর ভৌগোলিক নৈকট্য দেশটিকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভূ-কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।


দেশটি’র সাথে ভারতের রয়েছে বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম স্থল সীমান্ত। নিকটতম চীন সীমান্ত বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। দেশটির অবস্থান স্থলবেষ্টিত নেপাল এবং ভুটান থেকে যথাক্রমে মাত্র ৬১ এবং ৬ কিলোমিটার দূরে ।


(চলমান)