image

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “আমাদের পরিষ্কার কথা, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) পদত্যাগ করুন, সংসদ বিলপ্ত করুন, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের অধীনে নির্বাচন হবে।’’


বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এই সমাবেশে বিএনপির নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন।


ফকিরাপুল মোড় থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত সড়কে হাজার হাজার নেতা-কর্মী মাথায় লাল-সবুজের টুপি পরে আসেন সমাবেশে। অনেকের মাথায় বাঁধা ছিল সাদা কাফনের কাপড়।


বাংলাদেশে একটি ‘বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত’ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থবহ সংলাপে বসার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক নির্বাচনী দল যে পরামর্শ দিয়েছে, তার প্রতিক্রিয়ায় আগের দিন ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিএনপি বলছে, তারা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চায়, সংসদ ডিজলভ করা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়, নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চায়। আমরা তো এই শর্তযুক্ত সংলাপে রাজি হব না।

“সংলাপের চিন্তা আমরা করব তখন যখন তারা (বিএনপি) এই চারটি শর্ত যদি তারা প্রত্যাহার করে নেয়। শর্তযুক্ত কোনো সংলাপের ব্যাপারে আমাদের কোনো চিন্তাভাবনা নেই। শর্ত তারা প্রত্যাহার করলে তখন দেখা যাবে।”


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘আমরা তখনই কোনো আলোচনা করতে রাজি আছি, যখন বিএনপি সমস্ত শর্ত বাদ দিয়ে আলোচনায় আসবে।’ সবার আগে কিছু প্রশ্ন আওয়ামী লীগের কাছে। আপনারা যে কথা বলছেন, সরকারে যে বসে আছেন আপনারা কি সংবিধানভাবে বৈধ? এটা প্রমাণ করতে হবে আপনাকে।

‘‘সংবিধান পরিবর্তন করে পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে এসেছেন সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে। অবৈধভাবে আপনারা ক্ষমতা দখল করে বসে আছেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কথা তুলে ধরে বিএনপি নেতা বলেন, “বিচারপতি খায়রুল হক একটা ছোট রায় দিয়েছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন যে, এটা (তত্ত্বাবধায়ক) প্রাসঙ্গিক নয়, (সংবিধানের সঙ্গে) সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে আরও দুইটা নির্বাচন এই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করা যেতে পারে।

“তাদের শর্ত ছিল বিচারককে (প্রধান উপদেষ্টা) করা যাবে না। সেই শর্ট রায় ১৬ মাস পরে পূর্ণাঙ্গ রায় হিসেবে বেরিয়েছিল। কিন্তু শর্ট ভার্ডিক্ট ও পূর্ণাঙ্গ ভার্ডিক্টে কোনো মিল ছিল না। পূর্ণাঙ্গ ভার্ডিক্ট দেওয়ার আগে সংসদে আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে সম্পূর্ণ প্রতারণা করে আইনটা পাস করেছিল।“আজকে আপনারা বলছেন, সংবিধানের ভিত্তিতে হতে হবে। তাহলে সবার আগে আপনাকে (শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার) পদত্যাগ করতে হবে। কারণ, আপনারা অবৈধ।’’যুবদলের সমাবেশে নেতা-কর্মীরা ফকিরাপুল মোড় থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত অবস্থান নেন। কয়েক দিনের মধ্যেই সরকার পতনের ‘চূড়ান্ত আন্দোলন’ ঘোষণা হবে জানিয়ে নেতা-কর্মীদের ‘সর্বাত্মক’ প্রস্তুতি নিতেও বলেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘‘একটাই লক্ষ্য আমাদের এখন যে, সরকারের পতন ঘটাতে হবে। একটাই লক্ষ্য যে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে হবে এবং আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।

“কথা একটাই, আমরা আমাদের জীবন দিয়ে লড়াই করছি, অনেক ভাই চলে গেছে, প্রাণ দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে; আমাদের অনেক মা-বোনের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে, আমাদের অনেক সন্তান পিতৃহারা হয়েছে, অনেক মা সন্তানহারা হয়েছে, আমাদের পেছনে ফিরে তাকানোর কোনো সময় নেই।”

যু্বদলের এই সমাবেশকে ‘ঐতিহাসিক’ অভিহিত করে ফখরুল বলেন, ‘‘শেষ পর্যায়ে এসে তারা দেশের সব মানুষের যে আশা-সাহস, এটাকে আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।“আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই ভয়াবহ ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকার, যারা আমাদের বুকের ওপর পাথরের মতো বসে আছে, তাকে পরাজিত করতে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ।”

সমাবেশে বিএনপির বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘এই সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের প্রতি এই বার্তা যে, তোমার আর সময় নাই। আমাদের যুবদল, আমাদের ছাত্রদল, আমাদের মহিলা দল, আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দল, আমাদের শ্রমিক দল, সবাই একযোগে তোমাদের বিরুদ্ধে নেমেছে।

‘‘আমাদের সঙ্গে এ দেশের জনগণ আছে। এই সরকার হটানোর জন্য এই জনগণই যথেষ্ট। আন্দোলন কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে শুরু হবে ইনশাআল্লাহ।’’

সরকার বিএনপির ৪২-৪৩ লাখ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “তারা (নেতা-কর্মী) যদি ঢাকার দিকে আসতে থাকে, এই বিচার ব্যবস্থার খোঁজখবর থাকবে? আমরা প্রয়োজন পড়লে এই ৪২/৪৩ লাখ লোককে ঢাকার দিকে ধাবিত করব ইনশাআল্লাহ। এই সরকারের তখতে তাউস আমরা ভেঙে চু্রমার করে দেব।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘ওরা (পুলিশ) যদি গেরিলা কায়দায় মামলা দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়, আমরাও বিনা কারণে আর ছাড় দেব না। কারণ, এই সরকারকে সংবিধান বলেনি যে, বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন করা যায়। এভাবে আর চলতে দেওয়া হবে না।”

যুব দলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান রবকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম ও ফরহাদ হালিম ডোনার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন এবং হামলায় আহত যুবদলের সাইদুল ইসলাম সেন্টু, লিটন মোল্লা, সাজিদ হোসেন বাবুও বক্তব্য রাখেন।