image

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এটা শিয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেওয়ার মতো।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সবচেয়ে প্রতারক দল। তারা যা বলে তার উল্টোটা করে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশনকে বলেছিল যে, তারা গত দুটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করেছে এবং আমরা পরবর্তী নির্বাচনে আবারও একই কাজ করব”।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ আয়োজিত এক ছাত্র কনভেনশনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথাগুলো বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন. চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে, আর বিদেশে ঘোরাঘুরি করে লাভ হবে না বলে ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে এ মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘ওনারা (সরকার) খুব আনন্দে আছেন। আমেরিকায় ১৮ দিন ঘুরে এলেন, এখন ব্রাসেলসে যাবেন। চতুর্দিকে ঘোরাঘুরি শুরু হয়েছে। এই ঘুরে ঘুরে যদি কোনোরকমে সামাল দেওয়া যায়—এই চেষ্টা করছেন।’

মহাসচিব বলেন, ‘আর ঘোরাঘুরি করে লাভ হবে না। চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। পরিষ্কার করে বলতে চাই, এ দেশের সব মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে, তারা বাঁচতে চায় আপনাদের হাত থেকে। আপনাদের নির্যাতন-অত্যাচার, চুরি, দুর্নীতি রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেওয়া—সবকিছু থেকে মানুষ এখন বাঁচতে চায়।’

আসন্ন দুর্গাপূজার ছুটিতে সরকারকে সিদ্ধান্ত নেওয়ারও পরামর্শ দেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এখনো বলছি, সময় আছে। আমাদের মান্না সাহেব (মাহমুদুর রহমান মান্না) বলেছেন, দুর্গাপূজার কথা। ভালো কথা। দুর্গাপূজার সময় যে ছুটি থাকবে, এর মধ্যে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে দেন। ল্যাঠা চুকে যাবে। মানুষ ভোট দিতে যাবে।’

সরকারপ্রধানের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এতই যদি জনপ্রিয় হন, তাহলে সুষ্ঠু একটা ভোট দিতে অসুবিধা কোথায়? পদ্মা সেতু বানিয়েছেন, আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল বানিয়েছেন, উড়ালসেতু বানিয়েছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বানিয়েছেন, লোকজন তো আপনাকেই ভোট দেবে। তাহলে দেন একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন।’

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘সেটা আপনি করবেন না। কারণ, আপনি জানেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না।’

সরকার হটানোর ‘এক দফা’ আন্দোলনে ছাত্রসমাজকে হাত গুটিয়ে বসে না থাকার আহবান জানান বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা একটা বড় যুদ্ধে নেমেছি। সেই যুদ্ধটা হচ্ছে একটা ভয়াবহ শক্তি, যাকে আপনারা-আমরা ফ্যাসিবাদী শক্তি বলছি। এই ফ্যাসিবাদী শক্তি, যারা আমাদের সব অধিকার কেড়ে নিয়ে আমাদের স্বপ্নগুলো ভেঙে খান খান করে দিয়ে, বাংলাদেশটাকে তাদের বিচারকের (বিচারপতি) ভাষায় জাহান্নাম বানিয়েছে, তাদের একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার যুদ্ধে আমরা নেমেছি।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকবেন না, হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না। যদি বাঁচতে চান, দেশকে বাঁচাতে চান, আপনাদের বাবা-মা, ভাইবোনকে বাঁচাতে চান, তাহলে জেগে উঠতে হবে এবং ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে রাজপথে। লড়াই করে, সংগ্রাম করে তাদের পরাজিত করতে হবে। আমাদের দৃপ্ত শপথ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপির নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরীকে (এ্যানি) তার বাসা থেকে দরজা ভেঙে গ্রেপ্তার এবং থানায় নিয়ে নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এটা সবার জন্য লজ্জার। কোন অবস্থায় এ্যানির মতো একজন সাহসী ছেলে আদালতে দাঁড়িয়ে বলেন যে চোর-ডাকাতকে মানুষ এভাবে মারে না।

মির্জা ফখরুল ছাত্রসমাজকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এ ঘটনা থেকে বার্তা হচ্ছে, মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকবেন না, হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না। সবাইকে জেগে উঠতে হবে। অন্যথায় তারা আপনার মাথার ওপর চেপে বসবে। আজ এ্যানিকে যেভাবে মেরেছে, কাল আপনাদের সবাইকে মারবে। সুতরাং সেই বোধটা নিয়ে আসতে হবে।’

মির্জা ফখরুল ছাত্রসমাজকে সরকারবিরোধী ক্ষোভ মুঠোফোনে প্রকাশ করা ছেড়ে রাজপথে নেমে আসার ডাক দেন। তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেন, এখন তরুণদের সব ক্ষোভটা মোবাইল সেটে। স্ট্যাটাস দিলেই ক্ষোভ শেষ। ক্ষোভ মোবাইল সেটে দিলে হবে না। ক্ষোভ নিয়ে রাজপথে আসতে হবে। রাজপথে এসে তাদের পরাজিত করতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে।’

ক্ষমতাসীনদের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তারা আমার সবকিছু কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমার মাকে (খালেদা জিয়া) বন্দী করে রেখে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করছে। আমাদের ৬৪৮ জন ভাইকে গুম করে দিয়েছে, সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে। এই এক বছরে মধ্যে ২২ জন যুবনেতা, ছাত্রনেতা, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে রাস্তায় গুলি করে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, ‘এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কোথায়? আপনাদের মধ্যে সেই বিদ্রোহ জাগিয়ে তুলতে হবে।’

জাতীয় ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের সভাপতিত্বে কনভেনশনে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম, জাগপার একাংশের রাশেদ প্রধান, আরেক অংশের খন্দকার লুতফুর রহমান, গণ অধিকার পরিষদের নুরুল হক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, এলডিপির নুরুল আলম, কবি আবদুল হাই শিকদার, অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম বক্তব্য দেন।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর সমর্থক ১৫টি ছাত্রসংগঠন নিয়ে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ গঠিত হয়। কনভেনশনে ছাত্র অধিকার পরিষদের তারিকুল ইসলাম, ছাত্র ফেডারেশনের মশিউর রহমান খান, ছাত্রলীগ (জেএসডি) তৌফিক উজ জামান, গণতান্ত্রিক ছাত্রদলের মেহেদি হাসান, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের মেহেদি হাসান, জাতীয় ছাত্রসমাজের কাজী ফয়েজ আহমেদ, জাগপা ছাত্রলীগের আবদুর রহমান, ভাসানী ছাত্র পরিষদের আহম্মেদ শাকিল, ছাত্র জমিয়তের নিজাম উদ্দিন আল আদনান, জাতীয় ছাত্র সমাজ (বিজেপি)সাইফুল ইসলাম, ছাত্র ফোরাম (গণফোরাম) সানজিদ রহমান, বিপ্লবী ছাত্র সংহতির ফহিবুর রহমান, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের আহমেদ ইসহাক, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের শহীদুল ইসলাম, ছাত্র ফেডারেশনের ফারহানা মানিক বক্তব্য দেন।

কনভেনশনে ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ছাত্র ঐক্যের মুখপাত্র ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল। এই কনভেনশনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়। একপর্যায়ে মিলনায়তনসহ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশন প্রাঙ্গণ সমাবেশে পরিণত হয়।