বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার যদি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে আলোচনা চায় তাহলে বিএনপি সেই আলোচনায় অংশ নিতে রাজি আছে। আজ বুধবার (১১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর গুলশানে দলটির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে গতকাল সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলোও তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, সাজা, নির্যাতন বাড়িয়ে দিয়ে সরকার দেশকে সাংঘর্ষিক অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে।’
‘বিএনপিনেতা এ্যানিকে বাসার দরজা ভেঙে ডাকাতের মতো পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে’ বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। এ্যানিকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। সরকারের পদলেহনকারী কয়েকটি দল ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল বলেনি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। সরকার দেশকে সাংঘর্ষিক অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আবার সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি করে ২০১৪ ও ২০১৮- এর মতো একতরফা নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু জনগণ সেটা হতে দেবে না।’
সংলাপের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘মার্কিন প্রতিনিধি দল কোনো মতামত দেয়নি। আমরা পরিষ্কার বলেছি, এই পরিস্থিতিতে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে দেশবাসী উদ্বিগ্ন। তার কোনো ক্ষতি হলে সরকার জনরোষের স্বীকার হবে। তাই অবিলম্বে তাঁকে (খালেদা জিয়া) বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবি জানাচ্ছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, আইন মন্ত্রণালয়ে একটি বিশেষ শাখা খোলা হয়েছে। যাদের কাজ হলো বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা ও গায়েবী মামলার তালিকা করে নির্দিষ্ট কিছু মামলা দ্রুত বিচার করে সাজা দেওয়ার জন্য আদালতকে নির্দেশ দেওয়া। কাজটা শুরু হয়েছে এবং গতকালই ১৫ জন নেতাকে চার বছর করে সাজা দেওয়া হয়েছে।’
‘দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি দৃঢ়ভাবে মনে করে, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনের নামে সরকার যা করছে তা বেআইনি সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছু নয়। অবিলম্বে এই কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য জোর দাবি জানানো হচ্ছে’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সম্প্রতি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনা দ্রুত বাড়ছে। পুলিশের পাশাপাশি ডিবি এ বিষয়ে অধিক তৎপর। স্বাভাবিক দলীয় শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ড, এমনকি গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠিয়ে নেতাকর্মীদের আগের কোনো গায়েবী মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এজাহারভুক্ত আসামি না হওয়া সত্ত্বেও জামিন দেওয়া হচ্ছে না। উচ্চ আদালত থেকে জামিনপ্রাপ্তরা নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে গেলেই জামিন নামঞ্জুর করে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘কারাগারে বন্দিদের ওপর নিপীড়নের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি কক্ষে দ্বিগুন-তিনগুন বন্দিকে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে। ১৫ দিনের আগে তো নয়ই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ১৫ দিন পরেও বন্দিদের সঙ্গে আত্মীয়-স্বজন দেখা করতে পারেন না। স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার নিত্যই ঘটছে। খাবার অতি নিম্ন মানের এবং রোগে চিকিৎসা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি নির্যাতন, নিপীড়নের এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে রাজনৈতিক বন্দীদের সঙ্গে আইনানুগ মানবিক আচরণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।