বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কিছু হলে দেশের মানুষ এই ফ্যাসিস্টদের কাউকে ছাড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সু-চিকিৎসা নিয়ে তার পরিবার সরকারের কাছে একাধিকবার আবেদনই করেনি, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেছে। দেশের মানুষ এত বোকা নয়। তারা বুঝেছে শেখ হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া। তাকে যদি আটক রাখা যায় তাহলে তারা (সরকার) অবৈধ শাসন টিকিয়ে রাখতে পারবে। আজকে তাই তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে চায়। দেশের মানুষ পরিষ্কার জানিয়ে দিতে চায়, খালেদা জিয়ার কিছু হলে জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না।
তিনি বলেন, আজ সকালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত বোর্ডের চিকিৎসকরা পরিষ্কার করে বলেছেন, দেশে যা যা করার দরকার করা হয়েছে সবই করা হয়েছে, এখন তাকে সুস্থ করতে হলে বিদেশে না নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহসচিব বলেন, খালেদা জিয়া দেশে সহনশীল রাজনীতি সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি সংসদীয় গণতন্ত্র কায়েম করেছেন। আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৬ দিন হরতাল দিয়েছে। আজকে তারা তা মানছেন না। এই আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এরা ফ্যাসিস্ট।
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজকে মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায় দিয়ে বিএনপির ১৫ জন নেতাকে ৪ বছর করে সাজা দিয়েছে। গতকাল আরও ১৫ জন সাবেক ছাত্রনেতাকে জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তারা মনে করছে এদেরকে আটক রাখলে বিএনপিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। প্রতিটি সাজার বিরুদ্ধে হাজার হাজার কর্মী সৃষ্টি হচ্ছে। বিএনপি হচ্ছে ফিনিক্স পাখির মত। এগুলো করে সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে পারবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এ সরকারের কাছ থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি আশা করা যায় না। একটি মৃত্যু পথযাত্রী সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রমাণ করে এরা কতটুকু অসভ্য।
সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) কাউকে চিকিৎসা করতে দেবেন না, আপনার চিকিৎসাও বাংলাদেশে হবে না। কেউ চিকিৎসা করাবে না। শেখ হাসিনার পতন হওয়া ছাড়া কেউ মাঠ ছাড়বে না। সভা-সমাবেশ ছাড়া এই সরকারের পতন হবে না। সবাই কঠিন কর্মসূচির প্রস্তুতি নেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, খালেদা জিয়া সম্মুখ দরজা দিয়ে রাজনীতিতে নেমে জনগণের নেত্রী হয়েছেন। এটি সরকার সহ্য করতে পারেনি। তাই তাকে অন্তরীণ করে রেখেছে। শুধু তাই নয়, বিনা চিকিৎসায় হত্যা করার চেষ্টা করছে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ করে যে দেশ স্বাধীন করেছি সে দেশে আইনমন্ত্রী বেআইনি কথা বলে। অর্থমন্ত্রী অনর্থের মূল। পররাষ্ট্র যে ভাষায় কথা বলেন মনে হয় উনি অন্য দেশের মন্ত্রী। বানিজ্যমন্ত্রী নিজেই ব্যবসায়ীর ভাষায় কথা বলেন। যে গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করেছি, সে গণতন্ত্র ভোগ করতে পারছি না।
আন্দোলনের মাধ্যমেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আহ্বান জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, তাকে মুক্ত করতে হবে। দেশকে মুক্ত করতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, সরকার জিয়া পরিবারকে ভয় পায়। তারা জানে খালেদা জিয়া মুক্ত হলে সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে যে অযাচিত কথা বলেছেন, সারাদেশের মানুষ তার বক্তব্যে ছি ছি দিচ্ছে।
ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদীন ফারুক।
দুপুর ২টায় এ সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১১টা থেকেই মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। মির্জা ফখরুল যখন মঞ্চে আসেন তখন বিজয়নগর থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। সমাবেশ শেষে খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে আগামী ১৪ অক্টোবর নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে বেলা ১১ টা থেকে তিন ঘণ্টার গণঅনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব।