image

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসানীতিতে সবাই আতঙ্কে। সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের ছাপ আমরা দেখতে পাচ্ছি, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুখে।


শনিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবসে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে, শিক্ষক-কর্মচারী নির্যাতন, হয়রানি ও চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে’ আয়োজিত মহাসমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।


সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে কেন এতো কথা বলে। আমি বুঝতে পারি না। নির্বাচন তো আমরা করছি, সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এই কথাগুলো শুনলে ঘোড়াও হাসে। অবৈধভাবে হোক, যাই হোক- প্রধানমন্ত্রী তো। তাও আবার ১৫ বছর ধরে আছেন প্রধানমন্ত্রী। উনি কি একবারও চিন্তা করেন না যে, আমার এই কথাগুলো শুননে মানুষ হাসবে। 


তিনি বলেন, আবার বলছে, ওদের এতো মাথা ব্যথা কেনো। ওরা মানে, আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব।


এখানে তো সুষ্ঠু নির্বাচনই হয়। ওদের মাথা ব্যথার কারণ এটা যে, ওরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আর নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসানীতিতে সবাই আতঙ্কে। সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের ছাপ আমরা দেখতে পাচ্ছি, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুখে।


প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ফখরুল বলেন, এখনো আহ্বান জানাচ্ছি, অনেক কষ্ট দিয়েছেন মানুষকে। আমার ভাইদেরকে অনেক হত্যা করেছেন, অনেক স্ত্রীকে স্বামীহারা করছেন, অনেক মাকে পুত্রহারা করেছেন, অনেক সন্তানকে পিতাহারা করেছেন, অনেক রক্ত ঝরিয়েছেন, আর নয়- এখনো সময় আছে আপনি মানে মানে দয়া করে বিদায় হোন। আপনারা যে অপকর্ম করেছেন, এই জবাবদিহিতা হয়তো একসময় করতে হবে। কিন্তু তার আগেই যদি সসম্মানে বিদায় হতে চান তাহলে এখনো সময় আছে বিদায় হোন।  


তিনি আরো বলেন, এই সরকারের কোন জবাবদিহিতা নেই। সংসদ আছে। সেটা হচ্ছে তোষামোদি করার কারখানা। যারা অনির্বাচিত তারা গিয়েছেন সেখানে। ওখানে গিয়ে তাদের একটাই কাজ আহা বেশ বেশ করা। একটাই কাজ। প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা করবেন, আর সবাই বলবেন- আহা বেশ বেশ। 



বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে আজকে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হচ্ছে শিক্ষার পরিস্থিতি। শিক্ষার পরিবেশ যদি উন্নতি করতে হয় তাহলে পরিবর্তন দরকার। সেই পরিবর্তন হচ্ছে, এই জবরদখলকারী সরকারকে সরিয়ে দিয়ে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে যারা সত্যিকার অর্থে শিক্ষার মান উন্নত করতে চায় তাদেরকে প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করে তাদের সামনের দিকে নিয়ে আসতে হবে।


তিনি বলেন, আজকে যে সঙ্কট, সেই সঙ্কটের মূল কারণটা হচ্ছে- একটা অগণতান্ত্রিক সরকার জাতির উপরে বেআইনিভাবে চেপে বসে আছে। এই কারণে শিক্ষা ব্যবস্থায় চরম নৈরাজ্য। শুধু স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষায় নয়- আজকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে আর শিক্ষার কোন পরিবেশ নাই। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয় শুধুমাত্র দলীয় লোকদেরকে। আজকে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া দুই পদ্ধতিতে, একটি হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ঘরানার হতে হবে এবং আরেকটি হচ্ছে, টাকা দিতে হবে। 


প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ফখরুল আরো বলেন, এসব ডিগবাজি খেয়ে কোন লাভ নাই। একবার এদিকে যায়, আরেকবার ওদিকে যায়। আমরা বলতে চাই, রাজনৈতিকভাবে আপনার সময় শেষ হয়ে গেছে। দয়া করে মানে মানে কেটে পড়েন। তা না হলে জনগণ আপনাকে ক্ষমা করবে না। তারা আপনাদের ক্ষমতা থেকে টেনে নামাবে। 


বিএনপি আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনায় সুযোগ পেলে শিক্ষকদের জাতীয়করণ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন মির্জা ফখরুল।


মহাসমাবেশে শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে শপথবাক্য পাঠ করেন। 


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, যে যাই বলুক বিএনপি তার মতো করেই অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারকে বিদায় করবে। সরকারের ফাঁদে এখন পর্যন্ত পা দেয়নি। সামনেও দিবে না। বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, সরকার সুপরিকল্পিতভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করা।


শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বিএনপির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবা, মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির মাওলানা দেলোয়ার হোসেনসহ সারাদেশের শিক্ষক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।