image

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ টিকে আছে শুধু বন্দুকের জোরে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে। দেশের মানুষ এখন একটা কথাই শুনতে চায়, শেখ হাসিনা কবে যাবেন। অন্য কথা শুনতে চায় না। সেই বার্তাই আমরা নিয়ে এসেছি। অনেক রোডমার্চ করেছি, সমাবেশ করেছি। রোডমার্চ চট্টগ্রামে শেষ হয়েছে। আর রোডমার্চ নেই। এরপর সব ঢাকায়, রাজধানীতে। রাজধানীতেই সরকারের পতন ঘটাতে হবে।’ রোডমার্চ কর্মসূচি শেষে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রাতে চট্টগ্রামের বিএনপি কার্যালয় নাসিমন ভবনের সামনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে পরিষ্কার করে বলতে চাই– অনেক মানুষ খুন করেছেন, হাত রক্তে রঞ্জিত করেছেন। আমাদের ভাইদের গুম করেছেন, হত্যা করেছেন। অনেক মায়ের বুক খালি করেছেন। অনেক স্ত্রীকে স্বামীহারা করেছেন। অনেক সন্তানকে পিতৃহারা করেছেন। আর আমরা কাউকে মরতে দেবো না। আমরা পরিষ্কার বলতে চাই– আমাদের রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আর অযথা অন্যায় হুকুমের মধ্য দিয়ে গুলি করতে বলবেন না। অত্যাচার করবেন না। নির্যাতন করবেন না। মিথ্যা গায়েবি মামলা দেবেন না। মানুষ জেগে উঠেছে। সুতরাং শান্তিপূর্ণভাবে যদি ক্ষমতা হস্তান্তর করেন তো ভালো। আমরা সেটাই চাই।

‘এখনও সময় আছে, শান্তিপূর্ণভাবে পদত্যাগ করুন। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, আমাদের দফা একটি, দাবি একটি। আপনার অধীনে কোনও নির্বাচন হবে না। আপনি পদত্যাগ করবেন, সংসদ বিলুপ্ত করবেন। নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন এবং নতুন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন দেবেন। মানুষ নতুন করে সরকার গঠন করবে, পার্লামেন্ট গঠন করবে।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছেন। আপনি বলেছেন, তার চিকিৎসার কী দরকার, বয়স ৮০ হয়েছে। সুতরাং এখন আর এগুলো বলে লাভ নেই। অর্থাৎ আমরা যেটা সন্দেহ করছি, তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছেন, সেটিই আপনার মুখ দিয়ে বেরিয়েছে। আমরা এ হত্যার রাজনীতি আর চাই না।




‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে যারা হত্যা করতে চায়, তাদের পতন অবশ্যই হবে। ৪৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা দিয়েছো, সেই মিথ্যা মামলা অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে।’


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এই মাসটা দেখতে চাই। সামনে দুর্গাপূজা আছে। তাই দুর্গাপূজার আগে আমরা কোনও কঠোর কর্মসূচি দেবো না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে চাই। সরকারকে বলতে চাই, এর মধ্যে আপনারা পদত্যাগ করুন। পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিন। অন্যথায়, জনতাই সেই ক্ষমতা দখল করবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা অহিংস আন্দোলন করছি। যদি আমাদের ওপর কোনও আক্রমণ করা হয়, অশান্তি সৃষ্টি করা হয়, আমাদের নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে হয়রানি করা হয়, গ্রেফতার করা হয় তাহলে বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেবে না। আঘাতের পাল্টা আঘাত করা হবে। প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। সেই প্রতিরোধের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে বিজয়ের সূচনা ঘটবে।’

চট্টগ্রামের এ সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় বিএনপি এবং অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন।  

এর আগে সরকারের পদত্যাগে এক দফা দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবার কুমিল্লা থেকে রোডমার্চ শুরু হয়ে ১৫৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রামের কাজির দেউড়ি নাসিমন ভবনের সামনে গিয়ে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। রোডমার্চে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চারটি জনসভা করে দলটি। প্রথম সভাটি হয় কুমিল্লায়। দ্বিতীয় জনসভা হয় ফেনীর মহিপালো। তৃতীয় জনসভা হয় চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে। এরপর নগরীর কাজির দেউড়ি বিএনপি কার্যালয়ের সামনে চতুর্থ জনসভার মধ্যে দিয়ে শেষ হয় রোডমার্চ। এই রোডমার্চের নেতৃত্ব দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।