image

যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তৃতা প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তার (প্রধানমন্ত্রী) বক্তব্যের মধ্য দিয়ে একটা জিনিস প্রমাণিত হয়েছে, রাজনৈতিকভাবে এই দেশের মালিক একজন। এই দেশে শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ নেই। বিচার বিভাগ তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন, আইনকানুনের তোয়াক্কা করেন না।

আজ মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের পক্ষে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে গতকাল যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকেরা মির্জা ফখরুলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, গতকাল বক্তৃতায় তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যা ঘোষণা করেছেন, বিশেষ করে তার (খালেদা) চিকিৎসার ব্যাপারে। এত কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য...প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে যিনি আছেন, তিনি দিতে পারেন, এটা আমরা কল্পনাও করতে পারি না, মানতেও পারি না।

মির্জা ফখরুল প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের নিন্দা জানান। তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। সে কারণেই আমরা গণতন্ত্রের ভাষা ব্যবহার করি। আমরা শালীনতায়, পরম সহিষ্ণুতায়, অন্যের মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি এবং সংবিধানের মৌলিক বিষয়গুলোকে আমরা খুব গুরুত্ব দিই। সেই কারণেই আমরা দেশের শুভবুদ্ধির সব মানুষের কাছে বিষয়গুলো তুলে ধরতে চাই। আশা করি, তাদের (সরকার) শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে।

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা গণতান্ত্রিকভাবেই যাব, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে যাব। এরপরও কেউ যদি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা দেয়, সেই বাধাও আমরা গণতান্ত্রিকভাবে অতিক্রম করব। এটা আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন।

খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়ার সঙ্গে আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের কোনো শর্ত আছে কি না, জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব তা নাকচ করে দেন। তাহলে খালেদা জিয়াকে অসুস্থ অবস্থায় রেখে বিএনপির পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশ্নই উঠতে পারে না। শুধু বেগম জিয়াকে এই অবস্থায় রেখে নয়, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। এটা পরিষ্কার করে আগেও বলেছি, আবারও বললাম আমরা।

বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, সরকার আইনের দোহাই দিয়ে হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আইনের দোহাই দিয়ে দেশের একজন প্রবীণ, জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রাখার সুযোগ নেই।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত আসামি খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪০১ ধারাকে বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সেটাকে নাকচ করে দিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, দণ্ডবিধির ৪০১ ধারার কোথাও সরকারের সিদ্ধান্ত দিতে বাধা নেই। এ জন্য প্রয়োজন শুধু সরকারের সদিচ্ছা। সুতরাং যে অসুস্থতার চিকিৎসার সুযোগ দেশে নেই, সেই রোগের চিকিৎসা যে জায়গায় রয়েছে, সেখানে যাওয়ার অনুমতি দিলে আইনের ব্যত্যয় ঘটবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, যে রোগের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়, সামর্থ্য অনুযায়ী দেশের বাইরে গিয়ে কারও চিকিৎসা নিতে বাধা দেওয়া সংবিধানকে অবজ্ঞা করা। প্রকৃতপক্ষে খালেদা জিয়াকে সংবিধানের দেওয়া চিকিৎসা সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, যা অন্যায়, অমানবিক ও অসাংবিধানিক। তিনি বলেন, আমরা আবারও সরকারকে বলব, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অন্যায়ভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার পরিণতি কখনো ভালো হয় না। এ ধরনের বেআইনি, অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণের জন্য সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান এবং ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।