নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে নিরাপদে ক্ষমতা ছাড়ার রাস্তা তৈরির আহবান জানিয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, অবৈধ এ সরকার নিজে নিজেই পড়ে যাবে। ক্ষমতায় থাকার জন্য যা যা যোগ্যতা থাকার দরকার তারা তা হারিয়েছে।
সরকার পতনের এক দফা ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে টানা ১৫ দিনের কর্মসূচির প্রথম দিনে মঙ্গলবার বিকালে টঙ্গীর কলেজগেট এলাকায় গাজীপুর মহানগর বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে জনগণকে শান্তিতে থাকতে দিন, তাহলে জনগণও আপনাদের শান্তিতে থাকতে দেবে।
তিনি বলেন, একাত্তরে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি, আর এখন গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করছি। জনগণের টাকায় জনগণের বুকে আর একটি গুলিও চালাবেন না, চালালে যে চালাবে তাকে বের করার ক্ষমতা এ দেশের জনগণের আছে। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে, পুলিশ এসপি আমাদের কিছু লাগবে না। আগামী কোনো কর্মসূচির জন্য আর পুলিশের অনুমতি নেব না। জনগণের রাস্তায় জনগণ বসে থাকবে। কেউ উঠাতে পারবে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে মানুষ আজ পরাধীনভাবে জীবনযাপন করছে। মানুষের বাকস্বাধীনতা নেই, ভোটের অধিকার নেই, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই। এ অবস্থায় সরকার আরেকটি পাতানো নির্বাচন করার চেষ্টা করছে। নির্বাচন করে তারা বলবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। এ পাতানো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে কেনা বেচা শুরু হয়েছে। এই পাতানো নির্বাচনে কেউ পা বাড়ালে তার পা থাকবে না, জনগণ তাদের পা ভেঙে দেবে।
তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য শুধু লড়াই করছি না। দেশের মালিক জনগণ, জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য লড়াই করছি।
টঙ্গী কলেজ গেট চেয়ারম্যান বাড়ি রোডে আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মো. শওকত হোসেন সরকার এবং সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করীম রনি।
সমাবেশের প্রধান বক্তা বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নেমেছিল। মুক্তিযুদ্ধের পরে আজকে মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আরেকটি যুদ্ধে নেমেছে। সেই যুদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার আন্দোলন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফ্যাসিস্ট, অবৈধ দখলদার, অনির্বাচিত শেখ হাসিনাকে বিদায় দেওয়ার। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আজ লক্ষ্য জনতা মাঠে নেমেছে। এ আন্দোলন সফল সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ দলটাকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগে এখন আর রাজনীতি নাই, এটি তাদের নেতাকর্মীরা বুঝে গেছে। তাদের শিখিয়েছে কেমনে ভোট চুরি করতে হবে, কেমনে টেন্ডারবাজি করতে হবে, কেমনে জায়গা দখল করতে হবে, কেমনে অস্ত্রবাজি করতে হয়। আওয়ামী লীগ এখন আর কোনো রাজনৈতিক দল নাই।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটো, কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার, জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুটু, বিএনপির কেন্দ্রী সদস্য কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, ডা. মাজহারুল আলম, শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি মো. সালাহ উদ্দিন সরকার, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু, অ্যাডভোকেট মেহেদি হাসান এলিস, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম শামীম, সুরুজ আহাম্মেদ প্রমুখ।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, অব্যবস্থাপানা ও লুটপাটের মাধ্যমে আমার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। বিগত ১৫ বছরে গোটা টঙ্গী-গাজীপুরে আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তাদের চাঁদাবাজি ও লুটপাটে অতিষ্ঠ শিল্পোদ্যোক্তারা ব্যবসা গুটিয়ে চলে যাচ্ছে।