image

সরকার পতনের দাবিতে তরুণদের এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এজন্য গুলি ও আক্রমণ উপেক্ষা করে সবাইকে রাজপথে নামতে হবে। তরুণদের জেগে উঠতে হবে।


শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সরকার পতনে একদফা দাবি এবং গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র যৌথ উদ্যোগে এ বিক্ষোভ সামবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়া এবং নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন করতে না দেয়ার বিষয়ে দৃঢ় শপথ নিতে তরুণদের আহ্বান জানান তিনি।


মির্জা ফখরুল বলেন, তরুণদেরকে শুধু এখানে স্লোগান দিলে হবে না। সামনে বেরিয়ে আসতে হবে। গুলি এবং আক্রমণ সবকিছুকে সামনে নিয়ে দেশকে বাঁচাতে চাইলে আমাদেরকে সামনে এগিয়ে আসতে হবে। আজকে ডাক এসেছে। দেশের কাছ থেকে, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের কাছ থেকে। আর কালবিলম্ব নয়। এখনই সময় আমাদেরকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ভয়াবহ এই সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর এই গণতন্ত্র দিবসে আমাদের শপথ হচ্ছে, আমরা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবো না। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।


নেতাকর্মীদের সাজা ও মামলার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্বাচনের তারিখ যতো ঘনিয়ে আসছে ততই তারা (সরকার) বিভিন্ন অজুহাতে সারা দেশে গণতান্ত্রিক কর্মী যত আছে এবং বিএনপি’র নেতাকর্মী যত আছে তাদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা ও মামলা দিয়ে আটক করে রাখছে। কারণ কি? কারণ একটাই যে, সামনে নির্বাচন। নির্বাচন থেকে সমস্ত বিরোধী দলকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনে যাতে বিরোধী দলের নেতারা অংশ নিতে না পারেন- সেই কারণে তাদেরকে আটক করে রাখতে হবে।


ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনের আগেই ডিসি, এসপি এবং ইউএনও তাদের মতো করে সাজাচ্ছে। আর নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে যে, যেভাবে পারো এবং যত পারো বিএনপি’র বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দাও। তাদেরকে কারাগারে নাও। অনেক নেতা আছেন যাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দেয়া হয়েছে। মামলাকে ভয় করলে চলবে না। মামলাকে উপেক্ষা করে তথাকথিত ছাত্রলীগ এবং যুবলীগকে অতিক্রম করে আমাদেরকে আজকে জোট বেঁধে রাস্তায় দাঁড়াতে হবে। 

 

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে এটা সরকার না। এটা রেজিম। তারা হত্যা, গুম, খুন ও দুর্নীতি করছে। তারা জনগণের ভোট ও মতামতকে তোয়াক্কা করে না। টিকে থাকার অস্ত্র কোর্ট ও পুলিশ। এর মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।


বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, দেশে গণতন্ত্রের অপমৃত্যু হয়েছে। আমরা চাচ্ছি, এই সরকার পদত্যাগ করুক। এই সরকারের পদত্যাগের পর একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠন হবে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। তাদের অধীনে আগামীতে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে জনগণ যাকে ভোট দিবে তারাই সরকার গঠন করবে।

 

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজকে গণতন্ত্র আছে, মানবাধিকার আছে, আইনের শাসন আছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আছে, বিচার আছে? নেই। এই অবস্থায় আমরা গণতন্ত্র দিবস পালন করছি। লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমেছে গণতন্ত্রের পক্ষে। আজকে ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র উদ্ধারে মানুষ রাস্তায় নেমেছে। আজকে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে গণতন্ত্র ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য।

 

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের সদস্য আব্দুর রহিম, জাসাস’র সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকনসহ দলটির অঙ্গ সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।


সমাবেশে অংশ নিতে বেলা ১টা থেকে ব্যানার, ফেস্টুন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল সহকারে নয়াপল্টনে জড়ো হতে শুরু করেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী। বিকাল সাড়ে ৪টায় নেতাকর্মীদের পদচারণায় নয়াপল্টন জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এ সময় তারা সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে কর্মসূচির প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তোলেন। এরমধ্যে বিকাল সোয়া ৩টার দিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় বৃষ্টি উপেক্ষা করেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীদের সমাবেশস্থলে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।