image

সরকার নোবেলজয়ী ও অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জেলে পাঠানোর চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘নব্বইয়ে ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যে’র উদ্যোগে ‘নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান ও কিছু কথা’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এ অভিযোগ করেন তিনি। নব্বইয়ের ডাকসুর ভিপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান ?উল্লাহ আমানের লেখা এই গ্রন্থটি প্রকাশক শাহজী প্রকাশনী সংস্থা।

তিনি বলেন, এই সরকার এমন এক সরকার যারা ন্যূনতম সম্মানবোধ করতে জানে না গুণি মানুষকে। ড. ইউনূস একজন নোবেল লরেট। বাংলাদেশে একমাত্র ব্যক্তি যিনি একটা নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এখন উনার বিরুদ্ধে এমনভাবে লেগেছে যে, তাকে জেলে ঢুকিয়েই ছাড়বে- একটা অবস্থান তারা তৈরি করেছে। বুধবার একজন মন্ত্রী বলছেন যে, আমেরিকার প্রেসিডেন্টকেও তো জেলে যেতে হয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে যে কারণে জেলে যেতে হয় সেই কারণ ড. ইউনূসের না। ড. ইউনূসকে আপনারা ব্যক্তিগতভাবে প্রতিহিংসার কারণে, শত্রুতার কারণে এভাবে ভিকটিম করে তার বিরুদ্ধে এই মামলা-মোকাদ্দমা নিয়ে এসে এভাবে কারাগারে পাঠানোর চেষ্টা করছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আবার তারা বলে কি যে, বিএনপি না কি ড. ইউনূসের ওপর ভর করেছি। ড. ইউনূসের ওপর ভর করার আমাদের কোনো কারণ নাই।

আমরা পুরোপুরিভাবে এদেশের জনগণের ওপর ভর করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, এদেশের জনগণ হচ্ছে সকল শক্তির উৎস, এদেশের জনগণই এদেশের জনগণের সরকার তৈরি করবে এবং ভাগ্য পরিবর্তন করবে। সেই কারণে আমরা মানুষের কাছে গেছি। আপনারা কেনো নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চান না। কারণ আপনারা জানেন যে, এটা করলে আপনারা ১০টা আসনও পাবেন না।

বিরোধী নেতাদের ওরা দ্রুত জেলে দিতে চায় অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, তাদের উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার। যারা এই সরকারের বিরোধিতা করছে, যারা এই সরকারের পক্ষে নয়, যারা এই সরকারকে বলছে যে, তুমি অনেক খারাপ কাজ করেছো তুমি সরে যাও তাদের সকলকে কারাগারে ঢুকিয়ে দিতে চায়। তারা ওই উপলক্ষে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আর আইন মন্ত্রণালয় একটা সেল তৈরি করেছে; সেই সেল নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যে, অতি দ্রুত সেই সমস্ত মামলাগুলোকে চিহ্নিত করবে যেগুলো তাদের ভাষায় চাঞ্চল্যকর মামলা এবং রাষ্ট্রবিরোধী মামলা সেই সমস্ত মামলাগুলোকে অতি দ্রুত যেন রায় দেয়া যায় তার ব্যবস্থা করবে। কিছুদিন আগে আরেকটা আপনারা দেখেছেন যে, আইন মন্ত্রণালয় একই ধরনের আইন পাস করেছে। এভাবে তারা গোটা দেশের আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্ন এটাকে ধবংস করে দেয়ার জন্য পুরোপুরি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি আহ্বান জানাবো, আজকে তরুণদেরকে, ছাত্রদেরকে, যুবকদেরকে যে সাহস বুকে নিয়ে আমাদের আমান উল্লাহ আমানরা বুকে সাহস নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন দীর্ঘ সংগ্রাম করে স্বৈরাচার মুক্ত করেছিলেন, সেই সাহস নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। মৃত্যুর পরোয়া করলে চলবে না, জেলের পরোয়া করলে চলবে না। আজকে আমাদের অবশ্যই এইভাবে শপথ নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়তে হবে। সবাই একবার অন্তত রাস্তায় নেমে পড়ুন- দেখবেন ওরা পালাবার পথ পাবে না।

আমান উল্লাহ আমানকে মিথ্যা মামলায় সরকারের প্রতিহিংসার কঠোর সমালোচনা করে ফখরুল ইসলাম বলেন, আজকে আমি কোর্টে গিয়েছিলাম। আমাদের এই অবস্থাই হয়েছে প্রতিদিন হাজিরা দিতে হয়। আমান উল্লাহ আমানকে ১০ তারিখ হাজিরা দিতে হবে এবং সেখান থেকে কারাগারে চলে যেতে হবে মিথ্যা মামলায়। বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় গৃহবন্দি হয়ে আছেন, তারেক রহমান নির্বাসিত হয়ে আছেন। আজ শুধু এই দৃশ্য নয়, প্রতিদিনই হাজার হাজার বিএনপি’র নেতাকর্মী কোর্টের বারান্দায় ঘুরাঘুরি করছে, বিভিন্ন আদালতে ঢুকছে। এই দৃশ্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশের দৃশ্য হতে পারে না, কোনো গণতান্ত্রিক বিশ্বের দৃশ্য হতে পারে না।

নিজের একটি মিথ্যা মামলার বিচারের কার্যক্রমের তড়িঘড়ি করে শেষ করার কথাও উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত কয়েকদিন আগে আমার একটি মামলার ট্রায়াল শুরু হয়েছে। আমার ধারণা এক/দুই মাসের মধ্যেই আমানের মতো আমাকেও চলে যেতে হবে ভেতরে। তাদের উদ্দেশ্যটা একদম পরিষ্কার। কাউকে বাইরে রাখবে না।

মির্জা আলমগীর বলেন, ম্যাডাম জিয়াকে আপনারা জেলে পাঠিয়েছেন। তাকে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে সবচেয়ে খারাপ জায়গায় রেখেছিলেন। ওই জায়গায় রাখার কারণে তার আজকে লিভার সিরোসিস হয়েছে। আজকে তিনি দুরারোগ্য রোগে ভুগছেন। অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে এবং ডাকসু’র সাবেক এজিএস নাজিম উদ্দিন আলমের সঞ্চালনায় সভায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, গাজীপুর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ফজলুল হক মিলন, বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।