রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীরা তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে নিপীড়ন, সহিংসতা এবং বৈষম্যের শিকার হয়েছে। গত পাঁচ দশক ধরে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।
১৯৭৮, ১৯৯২ এবং ২০১৭ সালে দিন ধাপে বড় পরিসরে তাদের বাস্তুচ্যুতি ঘটেছিল। ২০১৭ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর সময়কালে, অং সান সু চির বেসামরিক শাসনের সময়, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গা গ্রাম এবং জনপদে কঠোর দমন অভিযান চালিয়েছিল। এর ফলে ৭৪০,০০০ জনেরও বেশি মানুষ জীবন বাঁচাতে পালিয়ে যায়। নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তারা। দুঃখজনকভাবে, এই আক্রমণের সময় প্রায় ২৫,০০০ রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছিল। এছাড়া হাজারো নারী ধর্ষণ ও নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিল।
এই ঘটনাটি বর্তমানে জাতিসংঘে তদন্তাধীন।
২০২২ সালের মার্চ মাসে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারণ করে যে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রকৃতপক্ষে জাতিগত রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন এই বিষয়ে নিজ অবস্থান তুলে ধরেছেন।
২০১৭ সালের নভেম্বরে, বাংলাদেশে বর্তমান আওয়ামী লীগ শাসক যার নিজেরই গণতান্ত্রিক বৈধতার অভাব রয়েছে, তারাই মিয়ানমারের সু চির সরকারের সাথে একটি প্রত্যাবাসন চুক্তি করে।
বিশেষজ্ঞ এবং সামরিক পর্যবেক্ষকরা চুক্তিটি যাচাই করেছেন এবং তারা এটিকে বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক বলে মনে করেছেন। কারণ, এটি মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের, রাখাইনে প্রত্যাবাসনের শর্তাদি নির্ধারণের সম্পূর্ণ একক ক্ষমতা প্রদান করেছে।
পর্যবেক্ষকরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, এই চুক্তির ভিত্তিতে, প্রতিদিন ৩০০ জন এবং প্রতি সপ্তাহে ১,৫০০ জন প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার ক্যাম্পে বসবাসরত দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করতে কমপক্ষে ২০৪৬ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে।
এই প্রেক্ষিতে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, এই মানবিক ট্র্যাজেডি নিরসনে একটি টেকসই এবং অর্থবহ পদক্ষেপ নিতে হবে। গণহত্যার ছয় বছর অতিবাহিত হলেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে প্রত্যাবাসনে অগ্রগতি উদ্বেগজনক এবং অগ্রহণযোগ্য। আজ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকেও প্রত্যাবাসন করা যায়নি।
ভয়াবহ নৃশংসতার জন্য মিয়ানমার সরকারকে দায়ী রাখা এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ স্বদেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করে এমন একটি টেকসই সমাধানের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর বর্তায়। এর জন্য কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং মিয়ানমারের মধ্যে জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার প্রচারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা প্রয়োজন।
দুর্ভাগ্যবশত, প্রত্যাবাসনের পূর্ববর্তী দুটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। একটি নতুন চুক্তির অধীনে। মিয়ানমার এখন ১১৭৬ রোহিঙ্গাকে একটি পাইলট প্রত্যাবাসন প্রকল্পের অংশ হিসাবে মংডু শহরে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে। এই সর্বশেষ প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা পর্যবেক্ষণকারী নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি এই মডেল গ্রামগুলিকে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তির ক্যাম্প হিসাবে বর্ণনা করেছে। ২০১৩ সালে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার প্রাদুর্ভাবের পর থেকে, ১৩০,০০০ এরও বেশি রোহিঙ্গা ইতিমধ্যে রাখাইনে এই ধরনের ক্যাম্পে রয়েছে।
আমরা এই নতুন প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টাকে একটি ফাঁদ হিসাবে মনে করি। এই প্রক্রিয়া বিশ্বের প্রায় ভুলে যাওয়া সংখ্যালঘুদের একটি নিপীড়নকে স্থায়ী করবে বলেই মনে হয়।
২১ শে ডিসেম্বর-এ, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি ঐতিহাসিক রেজুলেশন পাস করেছে, যাকে আমরা স্বাগত জানাই।
গণহত্যাসহ রোহিঙ্গা জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে আমরা আহ্বান জানাই। আমরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে পদক্ষেপ নিতে এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যাতে তাদের জাতিগত ও নাগরিক অধিকারের পূর্ণ স্বীকৃতি দিয়ে মর্যাদার সঙ্গে রাখাইন রাজ্যে তাদের স্বদেশে ফিরে যেতে পারে তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই।
আমরা ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাবো, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি তার শাসনামলে দুইবার রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা করেছে। ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৯০ এর দশকের শুরুতে আমাদের দল রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সামরিক শাসনের ওপর উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে সফল হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে জেনারেল নে উইনের শাসনামলে আমাদের পার্টির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অভূতপূর্ব চাপে মিয়ানমার প্রায় ২০০,০০০ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল।
আমাদের দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯২ সালে বড় ধরনের দমনপীড়নের পর ২৫০,০০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার সময় মিয়ানমারের ওপর একই ধরনের চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। মিয়ানমার ২,৩৬,০০০ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছিল। যার মধ্যে মাত্র একটি অংশ বাকি ছিল, যা কুতুপালং ও নয়াপাড়ায় শরণার্থী শিবির।
বাংলাদেশ যেহেতু একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে, আমরা বিশ্বাস করি যে, বিশ্বের দীর্ঘতম মানবিক ও রাজনৈতিক সংকটের একটি টেকসই এবং মর্যাদাপূর্ণ সমাধান খুঁজে পেতে রোহিঙ্গা সংকটের জন্য একটি নতুন পদ্ধতির প্রয়োজন।
আমাদের উদ্দেশ্য হল প্রতিটি রোহিঙ্গার স্বেচ্ছায় এবং নিরাপদে তাদের স্বদেশে মর্যাদা ও সমান অধিকারের সাথে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা। দুর্ভাগ্যবশত, বর্তমান আওয়ামী লীগ শাসনের যার নিজেরই বৈধতার অভাব; তাই এই সংকটের একটি সমাধান অর্জনের সম্ভাবনাকে তারা বাধাগ্রস্ত করছে। তারা সঙ্কটের তীব্রতা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সমস্যা সমাধানে বহুপাক্ষিক ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ এবং এমনকি একজন রোহিঙ্গাকেও তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে তাদের অক্ষমতা সরকারের সম্পূর্ণ কূটনৈতিক ব্যর্থতা। বহু-পাক্ষিক বৈশ্বিক পদ্ধতির পরিবর্তে, সরকার কেন একগুঁয়ে দ্বিপাক্ষিক পথ নিচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে না।
জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলেছে, মিয়ানমারে এখনো নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি হয়নি। রোহিঙ্গা সংগঠনগুলোও তাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি ছাড়াই প্রস্তাবিত অনৈচ্ছিক প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল (ইউএনএইচআরসি) দাবি করেছে যে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মিয়ানমারে ফিরে যেতে বাধ্য করার জন্য ‘প্রতারণামূলক’ এবং ‘জবরদস্তিমূলক’ ব্যবস্থা ব্যবহার করছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদকের এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
এমন এক সময়ে যখন জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায় রাখাইনে বর্তমান রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির অধীনে যে কোনো অনিচ্ছাকৃত এবং টেকসই প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করছে, বাংলাদেশ সরকার আবার একটি অবাস্তব 'পাইলট' বা তথাকথিত 'ট্রায়াল' প্রত্যাবাসন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। নিঃসন্দেহে একটি ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের অধীনে এটি একটি অর্থহীন পরীক্ষা হবে।
এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা সঙ্কটের জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহায়তার সামগ্রিক পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ, কানাডা, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া রোহিঙ্গাদের জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় ধরনের সহায়তা দিয়েছে। চীন ও রাশিয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মিয়ানমারের নিন্দার বিরুদ্ধে ভেটো দিয়েছে এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যেকোনো প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ সহ বেশিরভাগ গণতান্ত্রিক দেশ ২০১৭ সালে মিয়ানমারের বেশ কয়েকজন শীর্ষ জেনারেলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। উল্টো কিছু দেশ মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি করেছে।
২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক সাহায্যের পরিসংখ্যান অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত ১.৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা প্রদান করেছে। অন্যান্যদের মধ্যে, যুক্তরাজ্য ৪১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ইইউ ২৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, অস্ট্রেলিয়া ২৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, জাপান ১৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং কানাডা প্রায় ১০৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছে। রাশিয়া এখন পর্যন্ত ২ মিলিয়ন এবং চীন ৪০০,০০০ মার্কিন ডলার দিয়েছে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুর্কি ও কাতারসহ বেশ কয়েকটি ফাউন্ডেশন ওসিএইচএ তহবিলে অর্থ দিয়েছে।
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭-তে ভারত অপারেশন 'ইনসানিয়াত'-এর অধীনে ৫৩ টন ত্রাণ সামগ্রী দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে আরও ৭ হাজার টন। এছাড়া বিভিন্ন দেশ দ্বিপাক্ষিক ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা দিয়ে থাকতে পারে।
যখন কোনো একটি সরকারের গণতান্ত্রিক প্রতিশ্রুতির অভাব থাকে, তখন তারা তার বৈদেশিক নীতি বহিরাগত শক্তির কাছে বিলিয়ে দেয়। এখানে তাই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন অগ্রাধিকার পায় না। যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করা আমাদের জাতীয় ও পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকার হবে, এই জটিল সংকটের স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার দিকে মনোনিবেশ করবে। রোহিঙ্গা জনগণ অপরিসীম দুর্ভোগ সহ্য করেছে এবং এই দীর্ঘমেয়াদি সংকটের একটি মর্যাদাপূর্ণ সমাধান খোঁজা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি।
চলমান সঙ্কটকে আরও কার্যকরভাবে মোকাবেলা করার জন্য আমরা যে অগ্রাধিকারগুলির রূপরেখা দিয়েছি তা নিচে তুলে ধরা হল:
১. সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা।
২. জাতিসংঘের উচিত স্বেচ্ছায়, নিরাপদ মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবাসন তদারকি করা।
৩. রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধগুলিকে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। যা মিয়ানমারে জাতিসংঘের স্বাধীন ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
৪. ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং সহিংসতার পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য বিশ্বাসযোগ্য জবাবদিহিতার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সকল অপরাধীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৫. স্বীকার করতে হবে যে, রোহিঙ্গাদের নিপীড়ন একটি আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক সমস্যা, যার জন্য আসিয়ান দেশগুলির একটি সক্রিয় নীতি প্রয়োজন৷ মায়ানমার এবং বিদেশে শরণার্থী শিবির এবং ট্রানজিট উভয় ক্ষেত্রেই রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা উন্নত করতে আসিয়ান সদস্যদের মধ্যে উন্নত আঞ্চলিক সহযোগিতা অপরিহার্য।
৬. সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রণীত বার্মা আইনকে আমরা স্বাগত জানাই। যা মিয়ানমারে গণতন্ত্রকে সমর্থন করবে বলে আশাবাদি।
৭. রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ইইউ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ইইউ, আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের (এআরএফ) প্রতিষ্ঠাতা এবং সক্রিয় সদস্য হিসাবে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য গঠনমূলক আলোচনা ও পরামর্শকে উৎসাহিত করতে পারে।
৮. জাতিসংঘ, আসিয়ান এবং অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) থেকে মিয়ানমারের উপর চাপ বৃদ্ধি করতে হবে।
৯. রোহিঙ্গাদের সমর্থনের জন্য জাতিসংঘের সংস্থাগুলি থেকে মানবিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানাতে হবে। বৈশ্বিক মনোযোগ অন্যান্য সংকটের দিকে সরানো সত্ত্বেও, বাংলাদেশের বিভিন্ন শিবিরে বসবাসকারী এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গার দুর্দশার কথা ভুলে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। বিএনপি বিশ্বাস করে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন চালিয়ে যাওয়ার সময়, আমাদের সকল স্টেকহোল্ডারদের বোর্ডে রেখে, রোহিঙ্গা শিশুদের লালন-পালনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, শিশুদের স্বাস্থ্য এবং মিয়ানমারের শিক্ষার ধারাবাহিকতার কথা মাথায় রেখেই এসব করতে হবে।
১০. শরনার্থী শিবিরে বেসামরিক রোহিঙ্গা নেতৃত্ব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা শুরু করতে হবে।
১১. রোহিঙ্গা প্রবাসীদের দীর্ঘস্থায়ী মানবিক ও রাজনৈতিক সংকটের সমাধান খুঁজতে তাদের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
১২. রোহিঙ্গা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগে যে সমস্যা রয়েছে তার সমাধান করতে হবে। এটা সবার স্বীকার করতে হবে যে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য শুধুমাত্র ক্রবৈশ্বিক অনুদানের উপর নির্ভর করা স্থায়ী সমাধান নয়। বৃহত্তর
১৩. রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ 'শিক্ষা' প্রত্যেকের জন্য একটি সর্বজনীন অধিকার। প্রতিটি রোহিঙ্গা শিশু যাতে শিক্ষা পায় তা নিশ্চিত করে ক্যাম্পে একটি ব্যাপক রোহিঙ্গা শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের নৈতিক দায়িত্ব স্বীকার করে নিতে হবে।
১৪. ভাসান চর ক্যাম্প বিষয়ে আরও পর্যালোচনা করতে হবে। কারণ পাঁচ বছরে মাত্র ৩২,০০০ রোহিঙ্গাকে দ্বীপে স্থানান্তর করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের মুখে অবস্থিত ভাসান চর ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতেও রয়েছে।
১৫. প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মতামত ও আকাঙ্ক্ষাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
১৬. রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য রোহিঙ্গা ও রাখাইন সম্প্রদায়ের মধ্যে সমন্বয় ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রতি বছর ৩০,০০০ সন্তান জন্ম নেওয়ায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমস্যা আমাদের অর্থনীতিতে একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রায় হুমকিস্বরূপ। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব আমাদের সঙ্কটের সমাধান করতে হবে। এর জন্য রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দিতে হবে। এর জন্য আমাদের প্রতিবেশীসহ সকল আন্তর্জাতিক বন্ধুদের সাথে নিয়ে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
কিন্তু এখানে, জনগণের ভোটাধিকার ছাড়া ক্ষমতাসীন সরকার, তার অবৈধ ক্ষমতা রক্ষায় বেশি মনোযোগী। আন্তর্জাতিক ফোরামে রোহিঙ্গা মানবাধিকার সমস্যা মোকাবেলার বৈধতা পাচ্ছে না। ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠী নিজেদের টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশের বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে আপস করছে।
অতএব, আমরা মনে করি- জনগণের ভোটাধিকারসহ একটি বৈধ সরকার এখানে জরুরী। যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থেকে সংকটের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে সমস্ত আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডারদের যুক্ত করে কর্মপরিকল্পনা করে এগিয়ে যাবে।
সবাইকে ধন্যবাদ.
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
হোটেল লেকশোর, ঢাকা