বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। তার জীবনে কোনো অঘটন ঘটলে তার দায় শেখ হাসিনার সরকারকে নিতে হবে।
শনিবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসূচির পূর্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম।
এর আগে পদযাত্রা কর্মসূচি উপলক্ষ্যে বেলা ১২টার পর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল স্লোগান নিয়ে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। বিএনপির এই কর্মসূচিকে ঘিরে আশপাশের এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রতিটি মোড়ে মোড়ে পুলিশকে সতর্ক অবস্থান করতে দেখা যায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। রাজনীতিতে আসার পর থেকেই তিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে চলছেন। প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা তিনি। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে তিনি দেশের পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন। দীর্ঘ ৫ বছর তিনি কারাবন্দি। যে মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। একই ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগের যারা আটক ছিলেন তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। অথচ তাকে আটক রেখে দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তাই আমাদের লক্ষ্য একটাই- এই সরকারের পতন, এর মাধ্যমেই দেশে নতুন সূর্য উদয় হবে।
ফখরুল বলেন, এরা অসাংবিধানিক ও অবৈধ সরকার। তারা ১৫ বছর ধরে জনগণের কাঁধে চেপে বসেছে। এরা এখন গণতন্ত্রের জন্য নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।
তিনি বলেন, আবারও মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলায় সাজা দেওয়া শুরু হয়েছে। সরকার দেশের মানুষের রুটি-রুজির ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তবে সরকারকে সাবধান করে বলে চাই, এখনও সময় আছে নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে, বাড়িতে বাড়িতে হানা বন্ধ করতে হবে। আগামী ৬ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রদলের যাদের তুলে নেওয়া হয়েছে তাদের জনসম্মুখে হাজির করতে হবে। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে বিঘ্নিত করলে কারও শেষ রক্ষা হবে না।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, যতক্ষণ খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে না পারব আমাদের আন্দোলন চলবে। এই সরকার দীর্ঘ মেয়াদি প্ল্যান করে ১৪ ও ১৮ সালে নির্বাচন করেছে। এখন আবার বলছে ৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চায়।
তিনি বলেন, মোদি সরকার বলছে হাসিনা সরকার ক্ষমতায় না থাকলে এশিয়া মহাদেশের বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে, তবে এসব বিদেশি প্রভুদের কথায় আর কোনো কাজ হবে না। জনগণ এবার এই সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অন্যায়ভাবে, বিচারিক আইনের শাসনকে উপেক্ষা করে, শুধুমাত্র ভোট চুরির জন্য খালেদা জিয়াকে আটকে রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে যারা জড়িত কেউ রক্ষা পাবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী বিচার লীগ তৈরি হয়েছে নতুন করে তারা দেশের মানুষের বিচার করতে পারবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির আওতায় তাদের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা এসে যাচ্ছে। তাই আমাদের একটাই লক্ষ্য হবে, এক দফা আন্দোলন সফল করা।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। কিন্তু গণতন্ত্রের প্রশ্নে আমরা আপস করি না, খালেদা জিয়ার ব্যাপারেও আপস হবে না। তাকে চিকিৎসা না দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং দাবি জানাই তাকে যেন অবিলম্বে সুচিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে দেওয়া হয়।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনাকে পদে রেখে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা সম্ভব নয়। তারা ক্ষমতায় থাকলে খালেদা জিয়ার জানাজাও দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই আমরা তার সুচিকিৎসা নয়, নিঃশর্ত মুক্তি চাই।
তিনি বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে যারা বাধা দিতে আসবে তাদের হাত ভেঙে দিতে হবে। পুলিশ দেখলে ভয় পাওয়া চলবে না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে গয়েশ্বর বলেন, সব হিসাব এক কথায় নিতে হবে হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে। আপসহীন নেত্রীর কর্মী আমরা, আপসহীনভাবেই সকল অন্যায়ের প্রতিশোধ নেব। হাসিনা যদি কোনো লড়াইয়ের ঘোষণা দেন, শক্ত হাতে তাকে প্রতিরোধ করতে হবে। কারণ হাসিনার সরকারের পতন মানে গণতন্ত্রের মুক্তি।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আজকে আমরা এখানে এসেছি এক দলীয় বাকশালীয় সরকারকে বিদায় জানানোর জন্য। এই সরকার যদি ভেবে থাকে ষড়যন্ত্র করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখবে, সেটা সম্ভব হবে না। আজ হোক, কাল হোক রাজপথের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারকে বিদায় জানাব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে এ পদযাত্রা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে শান্তিনগর, মালিবাগ ও মগবাজার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আহমেদ আযম খান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, আতাউর রহমান ঢালী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মীর সরফত আলী সপু, নাসির উদ্দিন অসীম, রকিবুল ইসলাম বকুল, ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।