image

সরকারে ‘পরিবর্তন আসছে’ বলে কর্মী সমর্থকদের নিশ্চয়তা দিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আর এ বিষয়টি টের পেয়ে আন্দোলন থেকে জনদৃষ্টি সরাতে এবং বিদেশিদের ‘জুজুর’ ভয় দেখাতে সরকার ‘জঙ্গি নাটক’ করছে।

রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভায় সিলেটের কুলাউডায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার ‘ফেলে দেওয়ার’ বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী বিএনপি নেতা বলেন, “অনেকে বলেন, আপনার মুখে এত হাসি দেখি কেন সবসময়? আমি হাসি এজন্য যে, আমি খুব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি… এই ভয়াবহ দানব (সরকার) আমাদের মুখ থেকে সরে যাচ্ছে জনগণের উত্তাল তরঙ্গের মধ্য দিয়ে।

“আমি শুধু আপনাদের কাছে অনুরোধ করব, আপনারা নিশ্চিন্তে থাকেন, পরিবর্তন আসছে, পরিবর্তন হবে। সত্যের জয় হবে, সুন্দরের জয় হবে, গণতন্ত্রের জয় হবে ইনশাআল্লাহ।”

২০১৩ ও ২০১৫ সালে দুইবার সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেমে খালি হাতে ঘরে ফিরলেও এবার কেন বিএনপি আশাবাদী, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন দলটির মহাসচিব।

তিনি বলেন, “বিএনপি বিশ্বাস করে জনগণকে, বিএনপি বিশ্বাস করে মানুষের শক্তিতে; বিএনপির যে রাজনীতি, গণতন্ত্রের রাজনীতি, সেই রাজনীতি আজকে সমগ্র আন্তর্জাতিক বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে। আজকে সেই কারণে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী।”

ফখরুল বলেন, “সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ এক বাক্যে শেখ হাসিনার পতন চায়, সরকারের পতন চায় এবং তারা সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চায়।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সরকার ‘শতকরা ১০টি আসনও পাবে না’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্মরণে। তার ৫৪তম জন্মবার্ষিকীতে আয়োজনটি করে ‘বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন।সংগঠনের উদ্যোক্তাদের মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার পরিবর্তন হলে তাদের আর খেলাধুলা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।

“সব কিছু সঠিকভাবে হবে। আপনাদের চিন্তা করতে হবে না যে, ওই সাঁতারে পলিটিক্সি করে আপনাদের পিছিয়ে রাখা হবে। সেখানে চিন্তা করতে হবে না, ওই আম্পায়ারিংয়ের জন্য সেখানে আবার দলাদলি হবে… সঠিকভাবে চলবে ইনশাল্লাহ। আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি।”

স্মরণসভায় কোকোর জীবনী নিয়ে একটি স্মারণিকা এবং তার নামে ক্রীড়াঙ্গনে পুরস্কার প্রবর্তনের জন্য আয়োজকদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। 

জঙ্গিবিরোধী অভিযান ‘নাটক’

শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সন্দেহভাজন একটি জঙ্গি আস্তানায় যে অভিযান চলেছে, তাকে ‘নাটক’ আখ্যা দেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “কী রকম কূটকৌশলী এরা এবং কি রকম ভয়াবহ এরা! তার প্রমাণ গতকালের পত্রিকায় দেখেছেন কুলাউড়াতে হঠাৎ করে দেখা গেল শহর সঙ্গে লাগা একটু দূরে একটা বাড়িতে একটা জঙ্গিবিরোধী অভিযান হয়েছে। সেখানে থেকে ছয়জন মহিলা, চারজন পুরুষ, তিনজন শিশু গ্রেপ্তার করেছে। সঙ্গে আবার কী? ডেটোনেটার, তিন কেজি বিস্ফোরক… ভয়াবহ।

“হঠাৎ করে কোত্থেকে এল? কারা আনল? কীভাবে আনলে? ওই যখন আন্দোলন উঠতে থাকে তা আগে জঙ্গি নাটক অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেকবার দেখবেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখবেন এবং এটা হচ্ছে অমিনাস সাইন।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “এখন দেখবেন যে জঙ্গি কথা বলে বলে মানুষকে ডাইভার্ট করবে, তাদের দৃষ্টি সরিয়ে নেবে। পশ্চিমা বিশ্বকে আবার সেই জুজুর ভয় দেখাবে যে, এই দেখ বাংলাদেশে আমরা যদি না থাকি জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।”

কুলাউড়ার পাহাড়ি এলাকায় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট জঙ্গি আস্তায় অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে আটক করে শনিবার সকালে। আটকরা ‘ইমাম মাহমুদ কাফেলা’ নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বলে জানানো হয়।

আস্তানাটি থেকে আড়াই কেজি বিস্ফোরক, ৫০ কেজি ডেটোনেটর, প্রশিক্ষণ ম্যুানুয়াল, কমান্ডো বুট, জিহাদি বই, নগদ তিন লাখ ৬১ হাজার টাকা, স্বর্ণাংকার, ছুরি-রাম দাসহ অন্যান্য ধারালো অস্ত্র উদ্ধারের কথা জানানো হয়েছে। 

ডেঙ্গু পরিস্থিতি: ‘ওদের কোনো উদ্বেগ নেই’

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের কোনো ‘ভাবান্তর নেই’ বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

রাজধানীর মুগদা হাসপাতালের প্রকাশিত একটি ছবির বিষয়ে তিনি বলেন, “যেভাবে আমরা জেলখানায় শাড়ি দিয়ে গিয়ে শুয়ে থাকি, ওইভাবে শাড়ি দিয়ে গিয়ে সমস্ত বাচ্চারা শুয়ে আছে। তাদের হাসপাতালের ওই মেঝের মধ্যে চিকিৎসা হচ্ছে। কেন? এত উন্নয়ন, কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন, মেগা প্রজেক্ট… আমার এখানে কেন এই বাচ্চারা সঠিক চিকিৎসা পাবে না?

“কারণ একটাই যে, এই শেখ হাসিনার সরকারের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতাই নেই। তাই এভাবে নির্বাচন করে, বিরোধী দলকে মেরে-পিটিয়ে সরিয়ে রাখতে চায়।” 

ক্রীড়াঙ্গনে ‘রাজনীতিকরণ’ 

ক্রীড়াঙ্গনে ‘দলীয়করণের কারণে’ যোগ্য ও সত্যিকারের ক্রীড়াবিদ বেরিয়ে আসছে না বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আগে ইন্টার স্কুল প্রতিযোগিতা হত, অ্যাথলেটিক্স হত, ফুটবল হত, ভলিবল-হকি-ক্রিকেট হত। সেই ইন্টার স্কুল স্পোর্ট এখন আর হয় না। মাঠগুলোতে এখন আর খেলা আমরা দেখতে পাই না।”

বগুড়ায় শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক ভেন্যু থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ কাজ করেছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “আপনি যদি বগুড়ায় যান, সেখানকার প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকে তারা ধ্বংস করে ফেলেছে। সেখানে চমৎকার একটা হাসপাতাল আছে। যেহেতু সেটার নাম জিয়া মেমোরিয়াল হসপিটাল, সরকারি হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও সেটাকে কোনো রকমের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় না। আপনি যদি হসপিটালের ভেতরে ঢুকেন দেয়ালের সমস্ত প্লাস্টার খসে পড়ছে, ফ্লোর-টাইলস ভেঙে গেছে… সেগুলো মেরামত করা হয় না।”

আয়োজক সংগঠন বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সাবেক ক্রিকেটার দেবব্রত পালের সঞ্চালনায় আলোচনায় অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী ইমাম তপন, মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের সাবেক পরিচালক শরীফুল আলম, বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের অতিরিক্ত মহাসচিব কাজী মহিউদ্দিন বুলবুল, ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক সহসভাপতি মঞ্জুর হোসেন মালু, বিসিবির সাবেক পরিচালক আল ফুয়াদ রেদোয়ান, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবু, ক্রীড়াবিদ শাহ আলম, ক্রীড়া সাংবাদিক নাসিমুল হাসান দোদুল ও মোজাম্মেল হক চঞ্চলও আলোচনায় বক্তব্য দেন।