image


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কে কী বলল তা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। সামনে মরণপণ যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে আওয়ামী লীগকে যেতেই হবে। স্বৈরাচার সরকারকে আরেকটা ধাক্কা দাও। এছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। 

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে সমাবেশ হয়। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কী বলল, যুক্তরাজ্য কী বলল বা ভারত কী বলল এটা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই। আমাদের দরকার, দেশের জনগণ কী বলে। জনগণ খুব পরিষ্কার করে বলছে, ‘বিদায় হও, আর সময় নেই। যেতে হবে। এই সরকারকে যেতেই হবে।’

বেলা আড়াইটায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শুরু হয় ঝুমবৃষ্টি। এর মধ্যেই নয়াপল্টনে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার পাশাপাশি ঢাকা জেলার নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। দুপুর ২টার দিকে বিএনপি কার্যালয়ের সামনের সড়কে হাঁটুসমান পানি জমে যায়। ওই পানিতে দাঁড়িয়েই নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও বৃষ্টির মধ্যেই ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে অবস্থান নেন। বেলা তিনটায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সমাবেশ।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে তাদের সাধুবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব। ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘খুব তো বলেছিলেন, খেলতে চাও, খেলতে চাও। ডিসেম্বরে খেলতে চাও। সব বাদ দিয়ে, ক্ষমতাটাকে বাদ দিয়ে; নিতম্বটাকে চেয়ার থেকে সরিয়ে দয়া করে একটু রাস্তায় আসো, খেলা হোক। ভোট হোক। দুঃখিত এভাবে বলতে হচ্ছে। কিন্তু এভাবে বলা ছাড়া কোনো উপায় নাই।’

তিনি বলেন, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের পর ওবায়দুল কাদেরকে (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছেন কোনো চাপে আছেন কিনা। তিনি বললেন, কোনো চাপে নেই, তবে বিবেকের চাপে আছি। আসলে সরকার চোখে অন্ধকার দেখছে। তাই তারা একেক সময় একেক কথা বলছেন।’ 

বর্তমান সরকারকে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের শত্রু আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকার থেকে জনগণকে উদ্ধারে যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যার নেতৃত্বে গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ সেই তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। শুধু তাকেই নয়, ডা. জোবাইদা রহমান কোনোদিন রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না, একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক; তার পারিবারিক সম্পত্তি কয়েক হাজার কোটি টাকা। অথচ তাকে কয়েক লাখ টাকার এফডিআরের জন্য সাজা দেওয়া হয়েছে। কারণ তিনি তারেক রহমানের স্ত্রী। মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্নীতি তো সেই পাকিস্তান আমলেও হয়েছিল, সেই মামলায় তোমাদের (আওয়ামী লীগ) নেতাকেও জেলে যেতে হয়েছিল।’

বিচার বিভাগের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি জানি আপনারা সন্তুষ্ট হবেন না। আমরা যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করি। সবচেয়ে বেশি আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হয় বিচারকদের। সে যদি ন্যায়বিচার করে, অন্যায়ভাবে কাউকে শাস্তি দেন, সেই বিচারককে জবাবদিহি করতে হবে। সব ধর্মেই আছে।’ 

‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে এই জনতা’Ñউল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকে তারেক রহমান, জোবাইদা রহমান, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ যাদের সাজা দিয়েছেন এবং সাজা দেওয়ার জন্য ঠিক করেছেন; আগে চিন্তা করবেন এ দেশের মানুষ আপনাদেরও হিসাব নেবে, জবাবদিহি করতে হবে একদিন।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ধারণা হচ্ছে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন সমাগত। কারণ এই সরকার জানে, জনগণের এই চাপের মুখে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমার বিশ্বাস শেখ হাসিনার (প্রধানমন্ত্রী) পতন না দেখে আমাকে ভগবান চিতায় তুলবে না। এই বিশ্বাস নিয়ে পথ চলছি। এবার যারা গণতন্ত্রের বিরোধিতা করবে তাদের ক্ষমা করার সুযোগ নেই।’

মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন-স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, ঢাকা জেলার খন্দকার আবু আশফাক, নিপুণ রায় চৌধুরী, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, তাঁতী দলের আবদুল কালাম আজাদ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, মৎস্যজীবী দলের আব্দুল রহিম, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, আহমেদ আজম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শিরিন সুলতানা, নাজিম উদ্দিন আলম, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরাফত আলী সপু, রকিবুল ইসলাম বকুল, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন প্রমুখ।