‘বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত’ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এমন কথা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সোমবার বিকেলে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত জনসমাবেশ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও সরকার দলীয় হামলার প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারাদেশের মহানগর ও জেলা সদরে জনসমাবেশ করছে দলটি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর বিএনপি এ সমাবেশের আয়োজন করে।
এ সময় মির্জা ফখরুল আরো বলেন, আমরা একটা ছোট কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছিলাম; অবস্থান কর্মসূচি। অবরোধ, হরতাল, ঘেরাও কর্মসূচি তো দেইনি। তাতেই এ সরকার ভয় পেয়ে গেছে। তারা সন্ত্রাসী, পুলিশ, র্যাব সব কিছু নামিয়ে আমাদের ওপর কি অমানবিক নির্যাতন করেছে।
তিনি বলেন, এ সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই, এজন্য তারা এমন করে জুলুম করে যাচ্ছে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে আটক করছে। এতে আমাদের কি থামতে পেরেছে। এনাফ ইজ এনাফ। আর না। এরা বিশ্বের জনসমর্থন হারিয়ে ফেলেছে।
মহাসচিব বলেন, তারা আবার ভাড়া করে বিদেশ থেকে লোক এনেছে। তাদের মুখ দিয়ে বলেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি নাকি অসাংবিধানিক। কী নাটক। এগুলো করে কোনো লাভ হবে না। পদত্যাগ করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।
তিনি বলেন, আজ সমস্ত দেশের মানুষ একসাথে জেগে উঠেছে, তারা বলছে আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দাও। এখনো সময় আছে জনগণের ন্যায় সঙ্গত আন্দোলনে বাধা দেবেন না।
সরকারকে মির্জা ফখরুল বলেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন অবিলম্বে প্রত্যাহার করুন, সবাইকে মুক্তি দিন ।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, গ্রেফতার করছেন ভালো কথা। আরো করেন। কিন্তু আন্দোলন কি থামতে পারবেন? এদেশের সিনিয়র সিটিজেনশিপ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে রাস্তাই ফেলে পেটালেন, আবার আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে গেলেন, নাটকও করে ছেড়ে দিলেন। এদেশের মানুষ এই সরকারের পতন কামনা করে। আমাদের একটাই দাবি আপনাদের পদত্যাগ। এছাড়া আমরা অন্য কিছু চাই না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, এ সরকার ১৮ কোটি মানুষের টুটি চেপে ধরেছে। এদের কাছ থেকে টুটি ছেড়ে আনতে হবে। এরা গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে। যার জন্য ৫২ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ করছিল এদেশের মানুষ। বর্তমান সরকার লগি বৈঠার সরকার। এরা মানুষের ওপর জুলুম করে শেষ করে দিয়েছে। যা গত ২৯ জুলাই তারা দেখিয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর কিভাবে জুলুম হয়েছে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমান উল্লাহ আমানকে নাকি পুলিশ মানবিকতা দেখিয়েছে। পেপারে ও টিভিতে খবর হয়েছে। এগুলো নাটক করেছে সরকার। নাটক না হলে তারা কেন মিডিয়া দেবে এগুলো। শুধু কেন এই দুই নেতার সেবা-খাবার দিতে হয়। আরো তো অনেক নেতা গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদেরকে তো ছেড়ে দেয়নি। খোঁজ নেয়নি প্রধানমন্ত্রী। এসব নাটক করে পার পাওয়া যাবে না। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিজয়ী হয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়াও বিজয়ী হয়েছিলেন। এবার আমরাও বিজয়ী হবো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এ দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই শেখ হাসিনা সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করবে। এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর নেতা তারেক রহমান। এরা আর কতদিন গ্রেফতার ও আটক করবে। এবারের আন্দোলনে কেউ টিকতে পারবে না। পতন এদের হবেই। এদেশের মানুষের আন্দোলন করার সাংবিধানিক অধিকার। তারা তাদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করবেই।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতেও পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা ও সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে অনেক নেতাকর্মীকে আহত ও গ্রেপ্তার করেছে। তারা আমাদের অবস্থান কর্মসূচি কীভাবে বানচাল করা যায়, সেভাবেই পরিকল্পনা করেছিল। আসলে আমাদের কর্মসূচি বানচাল করতে গিয়ে নিজেরাই বানচাল হয়ে গেছে। তারা এখন গায়েবি মামলা দিচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে আবদুস সালাম বলেন, আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা নিজেরাই আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করল, বাসে আগুন দিল আর আমাদের বিরুদ্ধেই মামলা দেওয়া হয়েছে! এই হলো আওয়ামী লীগ! ওরা কুড়াল নিয়ে আসল সেটা নিয়ে পুলিশ কিছু বলল না! এখন তারেক রহমানের বক্তব্য শুনে আওয়ামী লীগের মাথা খারাপ। এই সরকারের সঙ্গে চোর ডাকাত ও লুটেরা ছাড়া কেউ নেই। আমরা বারবার মাইর খেয়ে যাব, সেটা আর হবে না। এজন্য তো মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করিনি!
জনসমাবেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির নেতা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বরকত উল্লাহ বুলু, আমান উল্লাহ আমান, অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, খায়রুল কবির খোকন, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ফারুক, অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ।