image

ওএনবি (২৫ জুলাই) লন্ডন : সারাদেশ থেকে দলে দলে ঐক্যবদ্ধভাবে ২৭ জুলাই ঢাকার মহাসমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য দলমত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মঙ্গলবার (২৫ জুলাই ২০২৩) এক ভিডিও বক্তব্যে দেশবাসীর প্রতি তিনি এ আহবান জানান।  

মহাসমাবেশ সফল করার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, 'ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে দেশের গণতন্ত্রকামী সকল শ্রেণী পেশার জনগন যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমাবেশে যোগ দেই তাহলে ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের দাবি মানতে বাধ্য হবে। জনগণের এখন একটাই দাবি, 'দফা এক দাবি এক - শেখ হাসিনার পদত্যাগ'। শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে রেখে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। অবৈধ সরকার, অবৈধ সংসদ আর বর্তমানের মেরুদন্ডহীন নির্বাচন কমিশন রেখে কখনোই নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবেনা, হতে পারেনা। জনগণ হতে দেবেনা'।

তারেক রহমান বলেন, 'চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত সফলতায় নিতে বিএনপি এবং গণতন্ত্রকামী সকল রাজনৈতিক দল, আগামী ২৭ জুলাই রাজধানী ঢাকায় মহাসমাবেশ আহবান করেছে। এই সমাবেশ, স্রেফ কোনো একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সমাবেশ নয়। এই সমাবেশ, ছাত্র-তরুণ-যুবক-নারী-শিশু এবং সকল শ্রেণী পেশার মানুষের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার সমাবেশ। এ সমাবেশ সাংবাদিকরা যাতে স্বাধীনভাবে লিখতে পারেন সেই অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সমাবেশ। এই সমাবেশ মানবাধিকার কর্মীরা যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন, তেমন পরিবেশ তৈরির জন্য সমাবেশ। এই সমাবেশ দেশের সিভিল সোসাইটি যাতে নিরাপদ পরিবেশে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করতে পারেন তেমন রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার সমাবেশ। এই সমাবেশ ১২ কোটি মানুষের লুন্ঠিত ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারের সমাবেশ। এ সমাবেশ রাজনীতিবিদরা যাতে মানুষের পক্ষে নির্ভয়ে কথা বলতে পারেন, এটি সেই অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ।

দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তারেক রহমান আরো বলেন, 'ফ্যাসিস্ট মাফিয়া চক্রের কাছে জনগণ আর জিম্মি থাকতে পারেনা। মাফিয়া চক্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী জনগণ জেগে উঠেছে। তিনি সবাইকে সারাদেশ থেকে ভোটের অধিকার আদায়ের মিছিলে শামিল হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, 'বাংলাদেশ যাবে কোন পথে-ফয়সালা হবে রাজপথে। তিনি গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি শপথ গ্রহণের আহবান জালিয়ে বলেন, আসুন, আবারো শপথ নেই, দেশ এবং জনগনের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য এক দফা দাবি আদায়ে 'লড়বো একসাথে, রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফার আলোকে 'দেশ গড়বো একসাথে'।

গণতন্ত্রকামী দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারেক রহমান বলেন, 'বর্তমান দেশ এখন দুইভাগে বিভক্ত। একদিকে বিনাভোটে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা তাবেদার অপশক্তি অপরদিকে বাংলাদেশের পক্ষের গণতন্ত্রকামী দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তি। সিদ্ধান্ত নেয়ার চূড়ান্ত সময় এসেছে। সিদ্ধান্ত আপনার, আপনি কোন পক্ষে যাবেন। গণতন্ত্রবিরোধী রক্তপিপাসু ফ্যাসিস্ট সরকারের 'পিস কমিটি'র তালিকায় নাম লেখাবেন নাকি দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশের পক্ষের দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তির সমাবেশে যোগ দেবেন'।

তারেক রহমান বলেন, এবার যদি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো জনগণের ভোট ডাকাতি করার সুযোগ পায়, তাহলে দেশ চূড়ান্তভাবে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হবে। ভোটের অধিকার হারিয়ে, মানুষের অধিকার হারিয়ে, মানবিক মর্যাদা হারিয়ে স্বাধীন দেশে জনগণকে পরাধীন হয়ে বেঁচে থাকতে হবে। দেশপ্রেমিক নাগরিকদের দৃঢ় ও সাহসী সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে গণতন্ত্রকামী জনগণের নিরাপদ ভবিষ্যৎ। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি সাংবিধানিক এবং বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। দুদক এবং নির্বাচন কমিশনের মতো বিচার বিভাগও এখন মাফিয়া সরকারের ইচ্ছে পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে অবিশ্বস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নাম,নির্বাচন কমিশন। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার কথিত একটি উপনির্বাচন এবং নতুন রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনের আচরণ রীতিমতো ফৌজদারি অপরাধের সামিল।

তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রক্ষমতা জবরদখল করে রাখা ফ্যাসিস্ট অপশক্তি যতই হুমকি ধামকি দিক তারা সংখ্যায় নগন্য অপরদিকে গণতন্ত্রকামী জনগণের সংখ্যা অসংখ্য অগণিত। সুতরাং,গণতন্ত্রকামী জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনকে সফল গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারে। 

স্বাধীনতার ঘোষকের পুত্র তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতার ঘোষকের একজন সৈনিক, বিএনপির একজন নেতাকর্মী বেঁচে থাকতেও গণতন্ত্রকামি জনগনের আন্দোলন ব্যর্থ হতে পারেনা। ৫২'র ভাষা আন্দোলন জনগণ ব্যর্থ হতে দেয়নি। ৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ জনগণ ব্যর্থ হতে দেয়নি। হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র-মানবাধিকার- ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনও জনগণ ব্যর্থ হতে দেবেনা। দাবি আদায় করে তবেই জনগণ ঘরে ফিরবে। জনগণের বিজয় হবেই হবে। বিজয় সন্নিকটে, সুনিশ্চিত ইনশাল্লাহ।

দীর্ঘ ২৪ মিনিটের বক্তব্যে তারেক রহমান চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, দীর্ঘ আন্দোলনের সময় দলের নেতাকর্মীদের আত্মত্যাগ, রাষ্ট্র গঠনে তরুণ প্রজন্মের ভিকা, চলমান আন্দোলনের প্রতি দেশি বিদেশী শক্তির সমর্থন এবং আন্দোলন পরবর্তী বাংলাদেশ গড়ার রূপরেখা নিয়েও কথা বলেন। জন প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন তারেক রহমান। 

র্যাব পুলিশ এবং জন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, তারেক রহমান বলেন, 'একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমর্থন থাকা স্বাভাবিক। তবে বিএনপি আশা করে, প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মকর্তা কর্মচারী হিসেবে সেই সমর্থন ব্যক্ত করার একমাত্র জায়গা হওয়া উচিত ভোট কেন্দ্র। 

'সুতরাং রাষ্ট্র অর্পিত দায়িত্বের অপব্যবহার করে মানুষের ভোটের অধিকার হরণের সঙ্গে আপনি কোনোভাবেই নিজেকে জড়াবেন না' প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি সুস্পষ্ট বার্তা দেন তারেক রহমান।  

জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানিয়ে তারেক রহমান আরো বলেন, 'আপনি নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে আপনি কি আপনার নিজের ভোটটি দিতে পেরেছেন? আপনার পরিবারের সদস্যগণ ভোট দিতে পেরেছে ? পারেননি। আপনাদের কেউ কেউ হয়তো নিশিরাতে একাই একাধিক ভোটের বাক্স ভর্তি করে ভোট ডাকাতের সহযোগী হতে পেরেছেন। কিন্তু নিজের পছন্দের প্রার্থীকে একটি মাত্র ভোট দেয়ার গৌরবজনক সম্মানটি অর্জন করতে পারেননি। সুতরাং, জনগণের চলমান যেই আন্দোলন, এই আন্দোলন 'আপনি যাতে ভোট দিতে পারেন, আপনার সেই ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার-ও আন্দোলন'।

তারেক রহমান বলেন, 'জনগণের চলমান এই আন্দোলন প্রশাসনের বিরুদ্ধে নয়। আপনারা সতর্ক থাকবেন, জনগণের আন্দোলন সম্পর্কে মাফিয়া সরকার নানারকম গুজব ছড়িয়ে আপনাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করবে। আপনারা মাফিয়া চক্রের ছড়ানো গুজবে কান দেবেন না। আপনাদের কারো ভয়ের কোনো কারণ নেই। আপনারা নিজেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার অবৈধ ক্ষমতার লালসা মেটানোর হাতিয়ারে পরিণত করবেন না। মনে রাখবেন, আপনাকে ব্যবহার করা শেষ হয়ে গেলে মাফিয়া চক্র আপনাকে ছুড়ে ফেলে দেবে'।

জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান আরো বলেন, 'আপনারা অযথা আন্দোলনকারী জনগণকে হয়রানি করবেন না। আন্দোলনকারী জনগণ আপনাদের শত্রু নন। আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী। কোনো দলের নন। 

বিএনপির পক্ষ থেকে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের আস্বস্ত করে তারেক রহমান বলেন, 'ফ্যাসিস্ট হাসিনা গত পনেরো বছরে নিজের দলীয় স্বার্থে প্রশাসনের নিরপেক্ষ চরিত্র নষ্ট করে দিয়েছে। জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী আপনারা কেউ অযথা রাজনৈতিক কারণ বা অন্যকোনো প্রতিহিংসামূলক আচরণের শিকার হবেন না। বরং, ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রশাসনে আপনাদের কেউ আইন অনুযায়ী কাজ করার দায়ে বিপদে পড়লে কিংবা চাকুরী হারালে ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক সরকার অবশ্যই আপনাদের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি আধুনিক ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে । এই আন্দোলনকে সফল করতে নাগরিকদের লুন্ঠিত ভোটেরঅধিকার পুনরুদ্ধার-ই বিএনপির প্রথম অগ্রাধিকার। লুন্ঠিত ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারের চলমান এই আন্দোলনে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী হতাহত হয়েছেন। হামলা মামলা নির্যাতন নিপীড়ণের শিকারে পরিণত হয়েছেন। এই আন্দোলনে শহীদের কাতারে সর্বশেষ শামিল হয়েছেন লক্ষীপুরের সজীব। গণতন্ত্র-মানবাধিকার-ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান এই আন্দোলনে 'শহীদে'র মিছিল হয়তো আরো দীর্ঘ হবে। ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে ফ্যাসিস্টরা হয়তো আরো মরণ কামড় দেবে।

তারেক রহমান বলেন, জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ইতোমধ্যেই মাফিয়া সরকার ভীত হয়ে পড়েছে। দেশে যেমন ফ্যাসিস্ট সরকারের আয়ু কমতে শুরু করেছে একইভাবে তাদের বিদেশে পালানোর পথও রুদ্ধ হয়ে আসছে। নিজেদের করুন পরিণতি ঠেকাতে ফ্যাসিস্ট সরকার এখন '৭১ সালের মতো তথাকথিত 'পিস কমিটি' গঠন করেছে। ৭১ সালে 'পিস কমিটি' গঠন করেও হানাদারবাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন দমাতে পারেনি। বর্তমানেও 'আওয়ামী পিস কমিটি' দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার চলমান আন্দোলন দমাতে পারবেনা।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, মাফিয়া চক্রের সীমাহীন অবিচার-অনাচার-অত্যাচারে জনজীবনে নাভিঃশ্বাস উঠেছে। একদিকে চলছে লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, মাফিয়া চক্রের বিকৃত উল্লাস, অপরদিকে ঘরে ঘরে, স্বামী-সন্তান-স্বজন আর অধিকারহারা মানুষের নিঃশব্দ ক্রন্দন। 

তারেক রহমান বলেন, বর্তমানে আওয়ামী মাফিয়া সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি বাংলাদেশ, জিম্মি জনগণ। প্রতিটি সেক্টরেই চলছে অনাচার অনিয়ম। বিদ্যুৎ খাতের লুটেরাদের রেহাই দিতে ফ্যাসিস্ট হাসিনা তার অবৈধ সংসদে ইনডেমনিটি আইন পাশ করেছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় মাফিয়া চক্র বাজার সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। 

‘নিশিরাতের সরকারের অবৈধ বাণিজ্য মন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলেছেন, 'বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ক্রাইসিস হবে' । অবৈধ বাণিজ্য মন্ত্রীর এ বক্তব্যের কয়েকদিন পরই দেশের জনগণ দেখেছে বাজার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতরা মাফিয়া সরকারের প্রধানকে তুষ্ট করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এতে প্রমাণিত হয়েছে, দেশের লুটেরা সিন্ডিকেটের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা,’ বলেন তারেক রহমান ।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী দুর্নীতিবাজ কিছু ব্যাবসায়ীর বাজার সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলছে। ফলে অর্থাভাবে অর্ধাহারে অনাহারে কাটছে মানুষের জীবন। দেশে চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ। দেশে এখন সর্বক্ষেত্রে পাহাড়সম বৈষম্য। শেখ হাসিনার লুটেরা দলের বেপরোয়া লুটপাটে  দেশের প্রায় সবকটি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে। নির্মম সত্য হলো শেখ হাসিনার মূলনীতি - উন্নয়নের নামে দুর্নীতি।

তারেক রহমান বলেন, এ অবস্থার পরিবর্তন অনিবার্য। পরিবর্তনের জন্য দরকার জনগণের ক্ষমতায়ন। জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা এবং টেকসই গণতন্ত্র সম্ভব নয়। জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের অন্যতম প্রধান অস্ত্র প্রতিটি নাগরিকের 'ভোটের অধিকার প্রয়োগের নিশ্চয়তা বিধান' । জনগণ দিনের আলোয়, নির্ভয়ে, নিরপেক্ষভাবে ভোট প্রদানের সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে কখনোই ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা থাকা সম্ভব নয়। এ কারণে ক্ষমতা দখল করেই ফ্যাসিস্ট হাসিনা প্রথমেই জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা বিনাভোটে রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে প্রকাশ্যেই অন্য দেশের করুনা ভিক্ষা করছে। অবৈধ ক্ষমতার লালসা মেটাতে এভাবে অন্যদেশের করুনা ভিক্ষা করার মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনা স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অপমান করেছেন।

তারেক রহমান বলেন, দেশে বর্তমানে প্রায় ১২ কোটি ভোটার। ভোটার তালিকায় এরমধ্যে গত একদশকে তরুণ প্রজন্মের প্রায় তিন কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে। কিন্তু তরুণ প্রজন্মের এইসব ভোটারদেরকে গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে দেয়া হয়নি। আজকের তারুণ্যই আগামীর বাংলাদেশ। অথচ জীবনের শুরুতেই তরুণ প্রজন্মকে মিথ্যাচার আর প্রতারণার সঙ্গে পরিচিত হতে বাধ্য করা হয়েছে।

তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্ম জীবনের শুরুতেই দেখেছে তাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে রেখেছে এক মিথ্যাবাদী প্রতারক সরকার। ভোট ডাকাত মাফিয়া সরকার তরুণ প্রজন্মের সামনে লুটপাট-দুর্নীতি-মিথ্যাচার ছাড়া কোনো আদর্শ উপস্থাপন করতে পারেনি বলেই অন্যের স্বার্থ রক্ষায় কিছু তরুণ তাদেরই সহপাঠি আবরারকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।

তারেক রহমান বলেন, একজন মাত্র ব্যক্তির অবৈধ ক্ষমতার লালসা মেটাতে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ, ফ্যাসিবাদের যাঁতাকলে পিষ্ট। গণতন্ত্রের ঘাতক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা, বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। সারাবিশ্বে বাংলাদেশের বর্তমান নিশিরাতের সরকারের পরিচয় 'গভর্নমেন্ট অফ দ্যা মাফিয়া,বাই দ্যা মাফিয়া, ফর দ্যা মাফিয়া'।

স্বাধীনতার ঘোষকের পুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, মাফিয়া চক্রের সীমাহীন অবিচার-অনাচার-অত্যাচারে জনজীবনে নাভিঃশ্বাস উঠেছে। একদিকে চলছে লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, মাফিয়া চক্রের বিকৃত উল্লাস, অপরদিকে ঘরে ঘরে, স্বামী-সন্তান-স্বজন আর অধিকারহারা মানুষের নিঃশব্দ ক্রন্দন। মাফিয়া চক্রের দেশ এবং জনগণের স্বার্থবিরোধী কর্মকান্ড সম্পর্কে গত ১৫ বছর ধরে বিএনপি জনগণের সামনে বলে আসছিলো। শত বাধা বিপত্তি মোকাবেলা করেও অব্যাহত রেখেছিলো প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, আন্দোলন। এ আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে বিএনপির অসংখ্য কর্মী জীবন দিয়েছেন। গুম খুন অপহরণের শিকার হয়েছেন। অনেকে আহত হয়েছেনপঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। 

তিনি বলেন, নিশিরাতের মাফিয়া সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির এতদিন যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেছিল আজকের বাস্তবতায় এটি প্রমাণিত, বিএনপির প্রতিটি অভিযোগ যৌক্তিক এবং সত্য। ফলে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, বিএনপির দাবিগুলোর প্রতি দেশের জনগণ যেভাবে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিয়েছে, বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক শক্তিও একইভাবে তাদের নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে। দেশের জনগণ বিশ্বাস করে এই মাফিয়া চক্রের হাতে দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা ও সম্মান নিরাপদ নয়।  

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি সাংবিধানিক এবং বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। দুদক এবং নির্বাচন কমিশনের মতো বিচার বিভাগও এখন মাফিয়া সরকারের ইচ্ছে পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে দেশের সবচেয়ে অবিশ্বস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নাম, নির্বাচন কমিশন। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার কথিত একটি উপনির্বাচন এবং নতুন রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনের আচরণ রীতিমতো ফৌজদারি অপরাধের সামিল। 

তারেক রহমান বলেন, বর্তমানে আওয়ামী মাফিয়া সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি বাংলাদেশ। প্রতিটি সেক্টরেই চলছে অনাচার অনিয়ম। বিদ্যুৎ খাতের লুটেরাদের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে ফ্যাসিস্ট হাসিনা চোরাই সংসদে ইনডেমনিটি আইন পাশ করেছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় মাফিয়া চক্র বাজার সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। নিশিরাতের সরকারের অবৈধ বাণিজ্য মন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলেছেন, 'বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ক্রাইসিস হবে' বাণিজ্য মন্ত্রীর এ বক্তব্যের কয়েকদিন পরই দেশের জনগণ দেখেছে বাজার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতরা মাফিয়া সরকারের প্রধানকে তুষ্ট করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এতে প্রমাণিত হয়েছে, দেশের লুটেরা সিন্ডিকেটের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। 

তারেক রহমান বলেন, দেশ এবং জনগণের স্বার্থবিরোধী মাফিয়া চক্রের কর্মকান্ড সম্পর্কে গত ১৫ বছর ধরে বিএনপি জনগণের সামনে বলে আসছিলো। শত বাধা বিপত্তি মোকাবেলা করেও অব্যাহত রেখেছিলো প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, আন্দোলন। এ আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে বিএনপির অসংখ্য কর্মী জীবন দিয়েছেন। গুম খুন অপহরণের শিকার হয়েছেন। অনেকে আহত হয়েছেন পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।

তিনি আরো বলেন, নিশিরাতের মাফিয়া সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির এতদিন যেসব কথা বলে এসেছিলো আজকের বাস্তবতায় এটি স্পষ্ট, বিএনপির প্রতিটি কথাই যৌক্তিক এবং সত্য প্রমাণিত হয়েছে। ফলে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, বিএনপির দাবিগুলোর প্রতি দেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিয়েছে। দাবিগুলো এখন গণ দাবিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোও আজ এই গণদাবির প্রতি তাদের নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে। দেশের জনগণ বিশ্বাস করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা মাফিয়া চক্রের হাতে দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা ও সম্মান নিরাপদ নয়।

তারেক রহমান বলেন, দেশ এবং জনগণ আজ এক গভীর সংকটে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ আরো একাধিকবার এমন নৈরাজ্যের অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল। তবে বারবার প্রতিবার দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তির সাহসী ভূমিকায় দেশ সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যমুক্ত হয়েছিল।

 তিনি বলেন, 'তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ ঘুচিয়ে স্বাধীনতার ঘোষকের নেতৃত্বে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশ একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলো। 'মাদার অফ ডেমোক্রেসি' বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন নেতৃত্বে স্বৈরাচারকে পরাজিত করে বাংলাদেশ এশিয়ার ইমার্জিং টাইগারে পরিণত হয়েছিল। সেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আবারো পথ হারিয়েছে। ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি মহাজোটের নামে একজোট হয়ে বর্তমানে বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। দেশকে তাবেদার রাষ্ট্র বানানোর সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ২০০৯ সালে ঠান্ডা মাথায় সুপরিকল্পিতভাবে সেনা কর্মকর্তা হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে যেভাবে দেশের গৌরব ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া হয়েছিল, এরপর থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ'।