সরকার হটানোর 'এক দফা' আন্দোলন ঘোষণা দেওয়ার পর প্রথম কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন আজ বুধবার উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পদযাত্রা শুরু করেছে বিএনপি। এই পদযাত্রাটি মহানগর উত্তরের উদ্যোগে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত এবং এরপর ব্রিজ থেকে মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত যাবে।
বিএনপির কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীনদের হামলার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। আজ সকাল সাড়ে ১১টায় পদযাত্রা শুরুর আগে আব্দুল্লাহপুরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এ বক্তব্য দেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, 'আমার গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে যেয়ে আমরা মিছিল-মিটিং করব, আর আপনারা বাঙলা কলেজ থেকে ইট মারবেন, পাথর মারবেন আর আমরা ছেড়ে দেবো… এটা তো হবে না।'
'ছেড়ে দেওয়ার দিন শেষ, এখন খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ। আর কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না। আমাদের অধিকারকে আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। গতকাল সারা দেশে (ক্ষমতাসীনরা) যে অত্যাচার করেছে আমাদের ওপরে, সেই অত্যাচারের সমুচিত জবাব আমরা দেবো ইনশাল্লাহ।'
তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশের জনগণ ভোটের অধিকার আদায় করে নেবে। ১৫ বছর আপনাদের অত্যাচার আমরা সয়েছি, এই অত্যাচার আর আমরা সইব না।'
'আমরা দেশের জনগণ, বিএনপির নেতাকর্মীরা জেল খাটতে শিখেছে, মৃত্যুবরণ করতে শিখেছে, মিছিল করতে শিখেছে… আপনাদের অত্যাচার আর সহ্য করতে পারব না। আমরা অত্যাচারের জবাব দেবো।'
মির্জা আব্বাস বলেন, 'গতকাল লক্ষ্মীপুরে আমাদের লোক মেরেছেন, আপনারা শান্তি মিছিলের নামে অশান্তি তৈরি করছেন। আমাদের মিটিংয়ে আমাদের মিছিলে কোনো রকম গোলযোগ হয় না। আপনারা গোলযোগ তৈরি করতে চান। কেন?'
'আমরা যেদিন মিছিল-মিটিং করি, আপনারা সেদিন দিয়েন না। আপনারা যেদিন করবেন, আমরা দেবো না। আর তা না করে গোলযোগ করাবেন.. এটা আর সহ্য করা হবে না।'
আজ সকাল সাড়ে ১১টায় উত্তরার আব্দুল্লাহপুর পলওয়েল মার্কেটের সামনে থেকে যাত্রা শুরু করেছে বিএনপি। বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে বিএনপির পদযাত্রা বিকেল ৪টায় যাত্রাবাড়ী পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে হাজারো নেতাকর্মী এই পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে এই পদযাত্রা রামপুরায় গিয়ে দক্ষিণ বিএনপির কাছে হস্তান্তর করবে, সেখান থেকে দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে পদযাত্রাটি যাত্রাবাড়ী গিয়ে শেষে হবে বলে মহানগর নেতারা জানান।
উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবেদিন ফারুক, গাজীপুর জেলা সভাপতি ফজলুল হক মিলন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
গত ১৩ জুলাই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে সরকার হটানোর 'এক দফা' আন্দোলনের যে ঘোষণা দেন, তার প্রথম কর্মসূচি হিসেবে গতকাল সারাদেশে মহানগর ও জেলায় এই পদযাত্রা কর্মসূচি হয়। রাজধানীতে প্রথমদিন গাবতলী থেকে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার পর্যন্ত পদযাত্রা হয়।
মির্জা আব্বাস বলেছেন, 'বিশাল রাস্তা উপরে রোদ্র, নিচে উত্তপ্ত রাজপথ আর আওয়ামী লীগের অত্যাচার এই ৩টা বাধা অতিক্রম করে আমাদেরকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে, এই ৩টি বাধা অতিক্রম করে আমাদেরকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, এই ৩টা বাধা অতিক্রম করে আমাদের তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে হবে।'
'আমাদের কথা বলার অধিকার আদায় করতে হবে, আমাদের ভোটের অধিকার আদায় করতে হবে। এই বাংলাদেশ কারো করদ রাজ্য নয়, এই বাংলাদেশ এ দেশের মানুষ বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছে।'
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ নেতা বলেন, 'আমি দেখলাম, কাদের সাহেব বলেছেন, সংবিধানের বাইরে আপনারা একচুল সরবেন না। খুব ভালো কথা কাদের সাহেব। আপনার কথায় আপনি স্থির থাকেন।'
'আমরাও বলি, সংবিধানের বাইরে আমরাও এক পা যাবো না। সবার লক্ষ্য সংবিধান। খায়রুল হকের (এবিএম খায়রুল হক) সংবিধান না বাংলাদেশের সংবিধান। আমরা চাই অখণ্ড সংবিধান। যে সংবিধানে কাটাছেড়া করা হয় নাই। যে সংবিধান থেকে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে, ওই সংবিধান আমরাও চাই না। আমরা চাই সেই সংবিধান যে সংবিধানে কাটাকাটি ছিল না, অপারেশন ছিল না, পোস্টমর্টেম ছিল না। যেই সংবিধান বাংলাদেশের জনগণ তৈরি করেছিল, সেই সংবিধান আমরা চাই।'
ঢাকা ছাড়া বুধবার দিনাজপুরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খুলনায় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও চট্টগ্রাম মহানগরে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছেন।
বিএনপির পাশাপাশি সমমনা জোটগুলোর মধ্যে সকাল ১১টায় গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এবং ১২ দলীয় জোট কমলাপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পদযাত্রা শুরু করেছে।
বিকেল ৩টায় জাতীয়তাবাদী সমমনা দল কমলাপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এবং লেবার পার্টি পুরানা পল্টন থেকে মানিকনগর পর্যন্ত, এলডিপি এফডিসির কাছে থেকে, গণফোরাম-পিপলস পার্টি আরামবাগের কাছ থেকে পদযাত্রা করবে।
এক দফা ঘোষণায় রয়েছে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, বিদ্যমান অবৈধ সংসদ বিলুপ্ত, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশি সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
বিএনপির এই পথযাত্রাকে ঘিরে ২০ কিলোমিটার সড়ক পথের বিভিন্ন পথে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে।