image

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখন দফা একটাই- শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আর কোনো দফা নেই। সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। ভোটাধিকার ফিরে দিতে হবে।

আজ বুধবার বিকেলে নয়া পল্টনে একদফা ঘোষণার সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। গণতন্ত্রের ঘাতক, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও সর্বনাশা অনাচারে লিপ্ত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণ-আন্দোলনের একদফার যৌথ ঘোষণার জন্য সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই অবৈধ সরকার তার ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে আমাদের শত শত নেতাকর্মীকে খুন করেছে। ছয় শ’র মতো নেতাকর্মীকে গুম করেছে।

এ সময় তিনি আবেগঘনভাবে বিএনপির গুম হওয়া সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী ও তার পরিবারকে স্মরণ করেন।

২০১৩-১৪ সালে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ফখরুল বলেন, তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের ছেলেদের ধরে নিয়ে গিয়ে পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছ। এখন আমাদের তরুণরা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, যদি তুমি ভয় পাও, তবে তুমি শেষ। যদি তুমি ঘুরে দাঁড়াও, তবেই তুমি বাংলাদেশ। এখন সব দিকে খালি তরুণ আর তরুণ। তোমরাই পারবে এদেরকে রুখে দিতে।

সমাবেশে আসা মানুষদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, এই আওয়ামী লীগ সরকার বলেছিল, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে, ১০ টাকা সের চাল খাওয়াবে। কিন্তু তাদের কথার সাথে সেটার মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। এরা আবার বলেছিল, কৃষকদের বিনামূল্যে সার দেবে। এখন সারের দাম তিন চার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আবার সারও পাওয়া পায় না কৃষকরা।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে এই সরকার জীর্ণশীর্ণ কারাগারে রেখেছিল, তাকে ভালো চিকিৎসা পর্যন্ত দেয়নি। আমরা বাবারার তার চিকিৎসা বাইরের দেশে করানোর জন্য বলেছিলাম। পরিবার থেকেও বলা হয়েছিল। কিন্তু তাকে যেতে দেয়া হয়নি। এজন্যে তাকে বারবার হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, কোর্টকে ব্যবহার করে এ সরকার ক্ষমতায় থাকতে চায়। তারা মামলা দিয়ে মাসের পর মাস জেলে আটকে রাখে, জামিন দেয় না। যেটা মানুষের বিচার পাওয়ার শেষ ভরসাস্থল, সেখানে এখন বিচার পাওয়া যায় না।

তিনি আরো বলেন, ‘এখন আর কথা বলার সময় নেই। এখন আমাদের একটাই কাজ- এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের আন্দোলনে নেমে আসা।’

জনগণ জেগে উঠেছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যখন জনগণ জেগে ওঠে, তখন তাদের আটকানো যায় না। ঝড় এলে বাঁধ দিয়ে ঠেকে রাখা যায় না। সুনামি এলে তাকে আটকানো যায় না। আজ বাংলাদেশে প্রতিবাদের সুনামি শুরু হয়েছে। ঢাকার বাহির থেকে আসতে অনেক বাধা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তা ঠেকানো গেছে? ঢাকার রাজপথ আজ নেতাকর্মীদের পদচারণায় ভরপুর।

কর্মসূচি ঘোষণার পর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এটা একদফা আন্দোলনের প্রাথমিক কর্মসূচি। এতে যদি আঙ্গুলে ঘি না উঠে, তবে কিভাবে আঙ্গুলে ঘি তুলতে হয়, তা এ দেশের জনগণ ভালো করেই জানেন।

আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, হামলা করবেন মামলা করবেন। মিথ্যা ফরমায়েশি রায় দিয়ে সাজা দেবেন এটা হতে দেব না। অনেক সুযোগ দিয়েছি। আর সুযোগ পাবেন না। অনেক ডলার পাচার করেছেন। গত ১৫ বছরে অনেক জেলে পুরিয়েছেন, সাজা দিয়েছেন, তাতে কোনো লাভ হয়েছে? বিএনপি কখনো পিছু হটে না।

আমরা সবাই রক্ত দিতে চাই জানিয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনাকে যেতে হবে, তবে তিনি কোন দেশে যাবেন, তা তিনি জানেন না। কোন দেশ তাকে পাসপোর্ট দেবে এ নিয়ে তিনি অস্থিরতায় আছেন। এখন আপনাদের গায়ে একটা আঘাত এলে পাল্টা দু’টা আঘাত করবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন আলী খান বলেন, এই সরকার দেশের সুশাসন নষ্ট করে কুশাসন সৃষ্টি করেছে। এই সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করে জুলুমের শাসন কায়েম করেছে। তারা গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছে। এই সরকার ভোটাধিকার হত্যা করে দিনের ভোট রাতে করেছে। এরা দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজকে যে ঘোষণা আসবে, এই ঘোষণা আগামী দিনে এই সরকারের পতন ঘটাবে ইনশাআল্লাহ। জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। জাতি আজ মুক্তির ঘোষণা চায়। বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সরকারকে বিদায় করার জন্য। জনগণ জেগে উঠেছে। তাই ওই সংবিধানের দোহাই দিয়ে আর পার পাওয়া যাবে না। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী, বাক স্বাধীনতা হরণকারী কারো রেহাই মিলবে না। এবার যেতে হবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় ‌বিএন‌পি স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহাজান ওমর, ডাক্তার এ জেড এম জাহিদ হোসেন, মোহাম্মদ শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, জয়নুল আবেদিন, নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, মিজানুর রহমান মিনু, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কামরুজ্জামান রতন, ফজলুল হক মিলন, আব্দুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসে বদলে সভাপতি এসএম জিলানী, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।