image

ইসরাইলের নজরদারি প্রযুক্তি এনে সরকার বিরোধী দলের নেতাদের ফোন হ্যাক করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন- ‘পকেটের মোবাইলটাই এখন বড় শত্রু। ফোনে কথাবার্তা সবকিছুই এখন নজরদারিতে।’ 

শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গী ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলটি সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, ইসরাইলি প্রযুক্তি পেগাসাস ব্যবহার করে সরকার বিরোধী দলের নেতাদের ফোন হ্যাক করছে। বিরোধী দলকে দমনের জন্য এবং বিরোধী মতকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে তারা (সরকার) এটা করছে। এটা কোনো গণতান্ত্রিক দেশে হতে পারে না।


২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপের বিষয় উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করে গিয়েছিলাম, কিন্তু বোকা বানিয়ে দিয়েছিল। ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই। তাদের (আওয়ামী লীগ) বিশ্বাস করে আগেও সংলাপ করেছি, প্রতারিত হয়েছি। এখন প্রশ্নই আসে না।’

২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের উদাহরণও তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। তিনি প্রশ্ন করেন, কিভাবে আশা করেন এ অবস্থায় এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে মানুষ ভোট দিতে পারবে? মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, নির্বাচন থেকে বিরোধী দলগুলোকে সরে যাওয়ার জন্য চক্রান্ত শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে আগের মামলাগুলোর বিচার দ্রুত শেষ করার জন্য। 

 নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০১১ সালের ১০ মে বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ সংক্ষিপ্ত আদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা দিয়েছিল; কিন্তু সেখানে পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল- নিরাপত্তার স্বার্থে এবং বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দুটি নির্বাচন করা যেতে পারে। কিন্তু সরকার এ নিয়ে ডাহা মিথ্যাচার করছে। কারণ তারা দেখেছে তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন হলে ভোট পাবে না।

বিদেশে অর্থপাচারের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, হঠাৎ করে শুনলাম সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে সরাসরি বিমান যোগাযোগ। কাকতালীয় জানি না, আমাদের নেতারা তখন সুইজারল্যান্ডে গিয়েছিলেন। পুরো দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা বিদেশের ব্যাংকে, বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে রাখা হয়েছে। যেখানে জবাবদিহিতা করতে হয় না; কিন্তু এখন জবাবদিহি করতে হচ্ছে তো। যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশনের (নিষেধাজ্ঞা) পর খুব বলছে ভয় পাই না, ভয় পাই না। এখন থলে থেকে তো কালো বিড়াল বেরিয়ে আসছে।  

তিনি বলেন, স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা), ভিসানীতিসহ আরও নানা কারণে বাংলাদেশের সামগ্রিক ভাবমূর্তি এখন তলানিতে। দেশকে রোল মডেল নয়, গোল মডেল বানিয়েছে। দেশকে ফতুর করে দিয়েছে সরকার।

আওয়ামী লীগ দেশে ভয়াবহ লুটপাট করছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ভয়াবহ লুটপাটের কারণে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী আওয়ামী লীগের নাম দিয়েছিলেন নিখিল বাংলা লুটপাট সমিতি। এরা এখনো ভয়াবহ লুটপাট করছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে।

তিনি বলেন, আমি সারা দেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানাব, গণতন্ত্র ও দেশকে বাঁচাতে এই সরকারকে সরানোর জন্য কোনো দ্বন্দ্ব-দ্বিধা বা কালবিলম্ব না করে এখনই সবাইকে রাস্তায় নেমে পড়তে হবে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটি সত্যিকারের জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বিভিন্ন মেগা প্রকল্প নিয়েও কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সরকার মেগা প্রজেক্টের কথা বলে; কিন্তু প্রতিদিন ৫০ জনের মতো লোক মারা যায় রাস্তায়। কারণ পুরো সড়কে নৈরাজ্য, কোনো দেখভাল নেই। আর ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় ২০ হাজার কোটি টাকা। কারণ টাকা বাইরে পাচার করা হয়।

মির্জা ফখরুল ডেঙ্গু পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে সিটি করপোরেশনের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। কলকাতায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। দেশে জনগণ কর দিচ্ছে কিন্তু কর্তৃপক্ষ শুধু বড় বড় কথা বলছে।

এনপিপির চেয়ারপারসন ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নজরুল ইসলাম, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী প্রমুখ।