image

সরকারের পতন ঠেকাতে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাজা দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, অবৈধ সরকার দেশকে ভয়ানক গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে চায়।

শনিবার দুপুরে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির মূখপাত্র বলেন, আওয়ামী লীগ এমন একটা রাজনৈতিক দল যারা মানবিক পরিবেশের মূল থেকে উৎসারিত হয়নি। এজন্য বহু মত ও পথকে তারা সহ্য করতে পারে না। ক্ষমতায় এসেই চিরদিন ক্ষমতায় থাকার উদগ্র লালসা তাদেরকে হিংস্র ও রক্তপিপাসু করে তোলে। তাই কুয়াশার আস্তরণ ভেদ করে তাদের দৃষ্টি অগ্রগামী সভ্যতার দিকে দিগন্তবিসর্পী পথে প্রসারিত না হয়ে এক নিষ্ঠুর কর্তৃত্ববাদের অনুগামী হয়। ক্ষমতায় এসেই বারবার এই দৃষ্টান্ত তারা রেখেছে। ওরা বদ্ধ পানিতে লগি ঠেলে নৌকা বাইতে অভ্যস্ত। এরা সুস্থ সমাজ ও মুক্ত চিন্তার খরস্রোতে প্রবাহমান হওয়া বিশ্বাস করে না। তাই ক্ষমতাক্ষুধার অস্থিরতায় ভিন্ন মত ও দলের অস্তিত্ব ধূলিসাৎ করার পরিকল্পনায় ব্যস্ত থাকে।



তিনি বলেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাজা দেওয়ার মতো ঘৃণ্য চক্রান্ত জনগণ রুখে দেবে। এবার কোনো অপচেষ্টায় সরকারের পতনকে ঠেকানো যাবে না। এবার সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তেই হবে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হবেই।

রিজভী বলেন, অবৈধ আওয়ামী সরকার এক সর্বনাশা বিভীষিকা সঞ্চার করার জন্য নতুন অশুভ পরিকল্পনায় মেতে উঠেছে। বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোকে দুর্বল করার জন্যই সরকারের ভিতরে চলছে নানামুখী অপতৎপরতা। স্বেচ্ছাতন্ত্র, উগ্রঅহমসর্বস্বতা, একক কর্তৃত্ব ইত্যাদি দ্বারা গণতন্ত্রের নীতি, আদর্শ ও মূল্যবোধ বিরোধী এমন একটি বিকৃত রাষ্ট্র চরিত্র নির্মাণ করতে যেয়ে রাষ্ট্রের ওপর জনগণের মালিকানা অপহরণ করা হয়েছে। এবারও জনগণকে বঞ্চিত করে একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচন করার জন্য সরকার মনুষ্যত্বহীন ফন্দি এঁটে চলেছে।

বিএনপির এ নেতা বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পেরেছি, সরকার ২০১৩-২০১৪ সালে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় সাজা দিতে জেলা ও মহানগরগুলোর বিচারকদের নির্দেশ প্রদান করেছে। আমরা আরো জানতে পেরেছি যে, সাজা দেয়ার কাজটি সম্পন্ন করা হবে আগামী দুই মাসের মধ্যেই। এ বিষয়ে বিচারকদেরকে সরকারি সিদ্ধান্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলার পুলিশ সুপারদের। বিরোধী দল নির্মূলে সরকার হাতের মুঠোয় ধ্বংসের শক্তি নিয়ে মাঠে নামছে। জনগণকে পরাজিত করার জন্য পর্দার আড়ালে চলছে নানা শলাপরামর্শ ও গোপন বৈঠক।

রিজভী বলেন, ইতোমধ্যে সরকারি অশুভ নীলনকশার কিছু আলামত ফুটে উঠেছে। দলের সিনিয়র নেতারাসহ সকল স্তরের নেতাকর্মীদের বিচারের নামে আদালতে সাক্ষী হাজির করা হচ্ছে। এই সাক্ষীদের পুলিশের শেখানো বুলি বলার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে। সাক্ষীরা পুলিশের হুমকির ভয়ে সাক্ষী দিতে আসে। কিন্তু এরা এমনই গরিব মানুষ যে, বিএনপির নেতাকর্মীদের নামও শোনেননি ও চেহারা পর্যন্ত দেখেনি। এমনকি অনেক পুলিশ সদস্যদেরকেও চাকরি থেকে বরখাস্ত করার ভয় দেখিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে সাক্ষী দিতে নিয়ে আসা হয়। এদের অনেকেই আমাদেরকে বলেছেন ‘আমরা যদি সাক্ষী না দেই তাহলে চাকরি থাকবে না।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যিনি নিপীড়ন ও জুলুমের পন্থা অবলম্বন করেছেন তিনি হলেন সরকারের আস্থাভাজন ডিসি প্রসিকিউশন জনাব আনিছুর রহমান। তিনি উদ্বুদ্ধ আওয়ামী দলীয় ক্যাডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। কারান্তরীণ সাইফুল আলম নীরব, রফিকুল আলম মজনু, মোনায়েম মুন্না, এস এম জাহাঙ্গীর, ইউসুফ বিন জলিল, গোলাম মাওলা শাহিন ও আজিজুর রহমান মুসাব্বিরসহ অসংখ্য নেতৃবৃন্দ আজ ডিসি প্রসিকিউশনের অন্যায়, অন্যায্য হস্তক্ষেপের কারণে কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

‘উল্লিখিত নেতৃবৃন্দকে ব্যাকডেট দিয়ে পেন্ডিং মামলায় নাম দিয়ে আটকে রাখার মূল নায়কই হচ্ছেন ডিসি প্রসিকিউশন। এমনও শোনা যায়, বিএনপি নেতাকর্মীদের নাম শুনলেই ডিসি প্রসিকিউশন নাকি তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন। সরকারের প্রতি দপ্তরেই আওয়ামী গেস্টাপো বাহিনী মনুষ্যত্বহীন এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। বিরোধী দল বিদ্বেষী ডিসি আনিছুর রহমান বিএনপিকে নির্মূল করার মহান ব্রত নিয়ে কাজ করছেন। এই সমস্ত কর্মকর্তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে আগ্রহী নয়। তারা দেশে-দেশে ফ্যাসিবাদের পতনের পরিণাম থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেননি। এরা দুষ্কর্ম করেও পার পাচ্ছে বলেই নিজেদের অপ্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন। তাদের আমি নুরেমবার্গ ট্রায়ালের কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। জনগণ সবকিছু খেয়াল করছে। জনগণ এখন সব দিক থেকে প্রস্তুত। শেখ হাসিনার একক জবরদস্তি শাসনের আর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বিদায়ের বাঁশি বেজে উঠবে।’

বিএনপি নেতা বলেন, আওয়ামী নাৎসিরা জনগণের যে শক্তিকে উপেক্ষা করেছে সেই শক্তি সমাজের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক শক্তি। জনগণ এখন শৃঙ্খল ভেঙ্গে মুক্ত হওয়ার জন্য জেগে উঠেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, দুর্যোগ, চড়াই-উৎরাই পার হয়ে গণতান্ত্রিক শক্তি এখন চূড়ান্ত বিজয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। পরমাণুর অন্তর্নিহিত গোপন বিপুল শক্তির ন্যায় জনগণের শক্তি বিস্ফোরিত হয়ে বর্তমান নিপীড়ক জুলুমশাহীর পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবে। গণতন্ত্রের বন্ধনহীন জয়যাত্রার সার্থক করবে জনগণের শক্তি।

রিজভী সংবাদ সম্মেলনে সারাদেশে সরকার দলীয় সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কর্তৃক হামলা ও মামলার বিবরণ তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুইয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. রফিকুল ইসলাম, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, মনির হোসেন, অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, কাজী রফিক প্রমুখ।