image

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দলীয় কাজে ব্যবহার ও নির্বিকার ভূমিকার জন্যই সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দাপটে গোটা জাতি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আজ দেশকে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিনত করার জন্যই শুধু সাধারণ মানুষ নয়, পুলিশ সদস্যদেরও জীবন যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা এতটাই ভেঙ্গে পড়েছে যে, প্রতি পদে পদে মানুষের জীবন বিপন্ন। এই ঈদের ছুটিতে প্রায় ৩৫ জন মানুষের জীবন হানি ঘটেছে শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতির কারণে। তারা বেপরোয়া চালকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।

রোববার নয়া পল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ঈদের প্রাক্কালে মানুষ ঘরমুখি হলেও নিজ জেলা বা গ্রামে তারা নিরাপদ ছিল না। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ এদের নানা সহযোগী সংগঠনের সমন্বয়ে জনপদের পর জনপদে গঠিত রক্তাক্ত সন্ত্রাসের পরিকাঠামোয় এক আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছিল। মানুষ বাড়িতে ফিরেও স্বস্তিতে ছিল না। সমাজ, সংস্কৃতি, সভ্য আচরণ আজ বিপন্ন অশুভ রাষ্ট্রশক্তির দৌরাত্বে। আওয়ামী অবৈধ শাসনের তীব্র কষাঘাতে আজ জনগণের জীবন মরনের প্রশ্ন। ওরা হিংসা-প্রতিহিংসার পথে এগোতেই ভালোবাসে।

তিনি বলেন, বর্তমানে সামাজিক অবক্ষয় এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, ক্ষমতার আশ্রয়প্রশ্রয়ে গড়ে ওঠা দানবদের আক্রমণে কেউ রেহাই পাচ্ছে না। বিশেষ করে এই সমাজে নারীদের জীবনের যেন কোনো মূল্যই নেই। এমনই এক দু:সময় চলছে যখন বোনকে উতক্ত্য করার কারণে বিচার চাইতে গিয়ে তরুণ খুন হয়। পিতা-মাতা নিজের মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের কবলে পরে জীবন হারায়। প্রতিনিয়ত নিজের বোন বা কন্যা সন্তানের সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে প্রচণ্ড নাজেহালসহ জীবন দিতে হয়। জেলায় জেলায় গড়ে উঠেছে ক্ষমতার ছত্রছায়ায় বখাটেদের উৎপাত। কয়েক বছর আগে বরগুনায় নয়ন বন্ডের কথা আমরা জানি, এবারে ভোলায় শুনছি ০০৯ নামে এক ভয়াল গ্যাং- এর নাম। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে সংবাদপত্রে যে কাহিনী ছেপেছে তা লোমহর্ষ। সর্বত্র মানবাধিকার আজ বিপন্ন।

রিজভী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শুধু বিরোধী দলের কর্মসূচিকে বানচাল করা, সহিংস আক্রমণ চালানো, বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও স্বাধীন মতপ্রকাশ কারীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে বলেই আজ সমাজে নৈরাজ্যের অন্ধকার নেমে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দলীয় কাজে ব্যবহার ও নির্বিকার ভূমিকার জন্যই সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দাপটে গোটা জাতি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আজ দেশকে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিনত করার জন্যই শুধু সাধারণ মানুষ নয় পুলিশ সদস্যদেরও জীবন যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা এতোটাই ভেঙ্গে পড়েছে যে, প্রতি পদে পদে মানুষের জীবন বিপন্ন। এই ঈদের ছুটিতে প্রায় ৩৫ জন মানুষের জীবন হানি ঘটেছে শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফলোতির কারণে। তারা বেপরোয়া চালকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান শাসন ব্যবস্থায় অবৈধ দখলদারদের কর্তৃত্বের কারণে চারদিকে গড-ফাদার, মাফিয়া আর সিন্ডিকেট-বাজদের জয়-জয়কার। যদি জনসমর্থিত ও জবাবদীহি মূলক সরকার থাকত তাহলে বর্তমান খাদ্যপণ্যের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটত না। দলীয় লোকদের দিয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের প্রতি সরকারের উদার দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই আজ জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ মানুষকে অনাহারে থাকতে হচ্ছে। অস্বাভাবিক দাম দিয়ে নূন্যতম প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারছে না। অবৈধ সরকারের মন্ত্রী ও প্রভাবশালী দলের নেতাদের জড়িত থাকার কারণে সিন্ডিকেট প্রচণ্ড শক্তিশালী। যে কারণে ভারতে কাচা মরিচের কেজি ২৫ টাকা অথচ কাচা মরিচ আমদানির অনুমতি দিলেও সিন্ডিকেটের কারণে বাংলাদেশে তা বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি থেকে কোথাও কোথাও ১১০০/১২০০ টাকা কেজি। এহেন সিন্ডিকেশন শুধুমাত্র দুর্বৃত্তপরায়ণ অনাচারমূলক সরকার থাকলেই সম্ভব। এরা মানুষের ক্ষুধা নিয়ে তামাশা করে।

বিএনপি নেতা বলেন, গণতন্ত্রকামী মানুষের কণ্ঠ চাপা দেয়ার জন্য বিগত ১৪ বছর ধরে তারা লক্ষ মানুষকে কারাবন্দি এবং অসংখ্য মৃতদেহ ইতস্তত বিক্ষিপ্ত, কোথাও স্তুপিকৃত করে গণতন্ত্রের পথকে করেছে জনশূণ্য। তবে এবারের আন্দোলন হবে আওয়ামী প্রভূত্ববাদের অধীনতা থেকে মুক্তির আন্দোলন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং দেশ নায়ক তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা ও সাজা প্রত্যাহারের দাবির আন্দোলনে দেশবাসী আজ ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ। এবারের মুক্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার আদায়ের সংগ্রামে হবে ‘স্মরণীয় জয়’।এ সময় তিনি সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কর্তৃক হামলা ও মামলার বিবরণ তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমদ আযম খান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্চাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর শরফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল, তারিকুল আলম তেন জিং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।