image

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ জানে, আওয়ামী লীগ শুধু ভোট চোর না এরা সবক্ষেত্র থেকে চুরি করে। এরা পকেটমারও। বিদ্যুৎ বিলের নামে মানুষের পকেট কেটে টাকা নিয়ে যায়। সরকার দেশে অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করলো। ঘোষণা দিল ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার। তাহলে এতগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ গেলো কোথায়? সরকারের একমাত্র লক্ষ্য চুরি-ডাকাতি করে বিদেশে পাচার করা।


আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনদিন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সরকার বলে তাদের অধীনে ভালো নির্বাচন হয়। বরিশাল সিটি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করলো। আর আমাদের আলেম সাহেব, শ্রদ্ধার মানুষ চরমোনাইয়ের নায়েবে আমীরকে আঘাত করতে পর্যন্ত দ্বিধা করলো না। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসা করছে, তিন কি ইন্তেকাল করেছেন? এমন নির্বাচন কমিশনার বানিয়েছে শেখ হাসিনা যিনি (সিইসি) না মরলে শান্তি পান না।


আজ শনিবার (২৪ জুন) বিকেলে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।


ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, আজকের সমাবেশের একটাই উদ্দেশ্য শেখ হাসিনাকে বিদায় করা। বরিশালের মাটি রাজনৈতিক দিক থেকে অনেক ঐতিহ্যবাহী। মুকুন্দ দাসের জন্ম এই বরিশালে। শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হক যিনি শুধু বরিশালের নয় অবিভক্ত বাংলার বীরত্ব লিখেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে এই বরিশালে অনেক ত্যাগী বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অনেক আত্মত্যাগ করেছেন তারাও এই বরিশালের মাটিতে রয়েছেন।


তিনি বলেন, আজকে নতুন একটা সংগ্রাম শুরু হয়েছে। এই সংগ্রাম ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। এই মঞ্চে ছাত্রদল নেতা ফিরোজ খান ও মিরাজের মা কিছুক্ষণ আগে বলে গেছেন, ‘হাসিনা সরকারের সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২০১২ সালে তার স্কুলে পড়া ছেলে মিরাজ খান ও কলেজে পড়া ছেলে ফিরোজ খানকে তুলে নিয়ে গেছে।’


শুধু এই দুইজন নয়, আমাদের ইলিয়াস আলীসহ ৭ শতাধিকের ওপরে নেতাকর্মী গুম করেছে এই সরকার। মিরাজ-ফিরোজর মা, ইলিয়াস আলীর সন্তানেরা অপেক্ষায় থাকে এই বুঝি তাদের সন্তান, তাদের পিতা ফিরে এলো। ছোট্ট শিশু সাফা বলেছে, আমি আমার বাবার হাত ধরে ঈদের নামাজ পড়তে যেতে চাই। ভয়াবহ ফ্যাসিবাদ সরকার এইসব শিশুদেরকে পিতৃহারা করেছে। সরকার মায়েদের কোল খালী করেছে, ভোলার রহিমের স্ত্রীকে স্বামীহারা করেছে। সমগ্র দেশে এই অবৈধ সরকার শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য লুটপাট, চুরি, বিদেশে পাচার করার জন্য এই ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য সারাদেশে ভয়াবহ অত্যাচার-নিপীড়ন করছে।


মির্জা ফখরুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চারটি নির্বাচন হয়েছে। একবার আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে একবার বিএনপি সরকারে এসেছে। জনগণ মেনে নিয়েছে। ২০১২ সালে যখন হাসিনা ক্ষমতায় এলো, তারা এই তত্ত্বাবধায়ক আইন বাতিল করে দিয়ে নিয়ে আসলো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। মানে শেখ হাসিনা সরকারে থেকে নির্বাচন হবে। এরপরের সব নির্বাচনে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসে। সুতরাং এই সরকার বৈধ সরকার নয়।



তিনি বলেন, সরকার বলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সংবিধানে লেখা আছে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। কিন্তু সেই জনগণ ভোট দিতে পারে না। দুটি প্রজন্ম ভোট দিতে পারেনি। জনগণ ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করে যেন সুখে শান্তিতে থাকতে পারে। অথচ আওয়ামী লীগ নির্বাচন চুরি করার জন্য সকলকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রেখে, নিজেরা সিল মেরে আগের রাতে ভোট শেষ করে বলে ভোট হয়ে গেছে; আমরা জিতে গেছি। আওয়ামী লীগ এমন করে, কারণ তারা জানে সত্যিকারভাবে জনগণ ভোট দিতে পারে তাহলে ১০টি আসনও পাবে না।


বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ কি পরিমাণে চুরি করেছে তা চিন্তা করা যায় না। কিছুদিন আগেও খবর বেড়িয়েছে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের অনেক টাকা জমা। আর বাংলাদেশের অবৈধ সরকারের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী যখন সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ করে এলেন, তারপর খবর বের হলো সেই সুইস ব্যাংকের টাকা নাকি উধাও হয়ে যাচ্ছে।


তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আমাদের সকল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এভাবে আর আমরা মামলা খেতেই থাকবো না। আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। এভাবে আর চলেতে দেওয়া যাবে না। এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে পরাজিত করে, জনগণকে জয়ী করে ঘরে ফিরতে হবে। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তবেই ঘরে ফিরবো আমরা।



বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন- যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী।


এসময় আরো বক্তব্য দেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, বিএনপির বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিছ আক্তার জাহান শিরিন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।


এছাড়া সমাবেশে সঞ্চালনায় ছিলেন- যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন। এসময় বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।


এর আগে দুইটা থেকেই খণ্ডখণ্ড মিছিল, ফেস্টুন, ব্যানার নিয়ে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জরো হতে থাকেন বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, বরিশাল মহানগর এবং পৌর ছাত্রদল, যুবদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা।


সমাবেশকে ঘিরে যেকোনো প্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় শহরের মোড়ে মোড়ে ও সমাবেশস্থল ঘিরে কড়া পাহারায় ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।