image

‘নিরাপত্তাহীনতা’ এবং ন্যায়বিচার ‘না পাওয়ার কারণে’ হিন্দুরা দেশ ছাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।


তার অভিযোগ, প্রশাসন তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখে না। আদালতেও ‘পাত্তা’ পাওয়া যায় না।


শুক্রবার সকালে রাজধানীতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের এক আয়োজনে তিনি এই অভিযোগ করেন।


গয়েশ্বর বলেন, ৬০ এর দশকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে হিন্দু সম্প্রদায় ছিল ৩৭ শতাংশ, এখন তা ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।


এর কারণ ব্যাখ্যা করে গয়েশ্বর বলেন, “সামাজিক নিরাপত্তা… তাদের যে নাগরিক অধিকার সংবিধানে আছে, সেটা থেকে বঞ্চিত। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলে… তারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অভিযোগগুলো খুব একটা গুরুত্ব দেয় না এবং এড়িয়ে চলে।


“প্রশাসন সংখ্যালঘুদের যে অধিকার আছে, তার নিরাপত্তার যে বিষয়টা আছে, সেগুলো প্রশাসন তদারকি করে না। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকরা আদালত বলেন আর প্রশাসন বলেন কোথায় কিন্তু তারা গুরুত্ব পায় না। এক কথায় বলা যায়, বাংলাদেশে পাত্তা পায় না।”



‘বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের বক্তব্য শুধু যথার্থই নয়, বাস্তবে নির্যাতনের মাত্রা আরও ভয়াবহ’ শিরেনামে এই সংবাদ সম্মেলন করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংগঠনটি।


এতে সবার আগে বক্তব্য দিয়ে চলে যান গয়েশ্বর, যিনি এই সংগঠনটির উপদেষ্টা।


তিনি বলেন, “মানুষ যে দলে দলে এক সঙ্গে মিছিল করে দেশত্যাগ করেছে তা নয়। প্রতিদিনই যাচ্ছে সেটা আমরা হয়ত অনুমান করতে পারছি না। যখন পরিসংখ্যান আসে, দেখা যায়, ক্রমান্বয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সংখ্যা কমতে থাকে।


“পার্শ্ববর্তী একটি গণতান্ত্রিক দেশ ভারতবর্ষ। আমাদের দেশের হিন্দুরা ‘সেকেন্ড হোম’ হিসেবে ভারতকে বেছে নেয়। ‘একটা পূর্ব ঠিকানা থাকা দরকার, এখানে থাকা যাবে না’- এই যে মনোবৃত্তিটা কেন সৃষ্টি হল? সৃষ্টি হল এই কারণে যে, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যন্ত্রের ব্যর্থতা, অর্থাৎ রাষ্ট্র সবাইকে এই বাংলাদেশটা যে সবার… এই আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।”


অন্যরা যা বললেন


গয়েশ্বর বক্তব্য দিয়ে যাওয়ার পর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার।


তিনি বলেন, “সম্প্রতি বাংলাদেশে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নির্বাচন ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বরাবর ছয় জন কংগ্রেসম্যান একটি চিঠি দিয়েছে…. যাতে বর্তমান সরকারের অস্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়া, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ক্ষুণ্ন করা, ব্যাপকহারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশপাশি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীন ও তাদের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্যাতনে বিষয় উপস্থাপন হয়েছে।”



ওই চিঠি দেওয়ার জন্য মার্কিন কংগ্রেসম্যানকে সাধুবাদ জানিয়ে বিজন বলেন, গত ১৫ বছরে সংখ্যালঘুদের ‘নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি’ আরও অনেক বেশি।


২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধদের ওপর হামলা, মন্দির ভাংচুর, দুই বছর পর সালে যশোরের অভয়নগরে শতশত বাড়ি, মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হামলা ও লুটপাট, ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগরে, ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর রংপুরের গঙ্গাচড়ায়, ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায়, একই বছরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, সুনামগঞ্জের শাল্লাসহ বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনাও তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্বেমলনে।


এসব হামলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনসমূহের নেতা-কর্মীরা, এমনকি প্রশাসনের কর্মকর্তারাও জড়িত বলে অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্বেলনে। বলা হয়, “বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও ওইসব ঘটনার কোনোটিরই বিচার তো দূরের কথা, সুষ্ঠু তদন্ত পর্যন্ত হয়নি।”


এ ঘটনাগুলোকে আওয়ামী লীগ সরকার ‘রাজনৈতিক ফয়দা লোটার কাজে’ ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করেন বিজন।

ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের উপদেষ্টা নিতাই রায় চৌধুরী, সুকোমল বড়ুয়া, তপন চন্দ্র মজুমদার, সুশীল বড়ুয়া, ভাইস চেয়ারম্যান অপর্ণা রায় দাস, নিতাই চন্দ্র ঘোষ, রমেশ দত্ত, রনজিত রায়, বাংলাদেশ মাইনোরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার মণ্ডল উপস্থিত ছিলেন।