বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ দেশে অবশ্যই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে সেটা হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। তার আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আমাদের দফা এক, দাবি এক- শেখ হাসিনার পদত্যাগ।
সোমবার বগুড়া শহরের সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের ‘তারুণ্যের সমাবেশ’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার নেতাকর্মীদের নিয়ে এ সমাবেশ আয়োজিত হয়।
আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীদের কথা শুনে ঘোড়া হাসেও মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বেসামাল হয়ে পড়েছে। কখন কী বলে বোঝা যায় না। সরকার আজ রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে দেশ পরিচালনা করছে। আবার তারাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে।
তিনি বলেন, তারা ২০০৮ সালে ছলচাতুরীর মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একতরফা ও ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছে। আজকে সরকার রাজনৈতিক কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীদের চাকরি দিতে পারে না। কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে না। কীভাবে করবে? তারা তো লুটপাট ও বিদেশে টাকা পাচার এবং বেগমপাড়ায় বাড়ি বানাতে ব্যস্ত। তাদের লক্ষ্য হলো লুট করা।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কয়েকটা ফ্লাইওভার ও কয়েকটা সেতু বানালেই কি উন্নয়ন হয়? উন্নয়ন হলো যখন দেশের সব মানুষ সুখে শান্তিতে বসবাস করবে। কিন্তু বর্তমান সরকার ও তাদের নেতাকর্মীরা নিজেরা শুধু বড়লোক হচ্ছে। তারা দশ টাকা কেজি চাল ও ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছিল। মাথায় হিজাব পড়ে, হাতে তসবী নিয়ে ওয়াদা করেছিল। কিন্তু সেটা দিতে পারেনি। টাকা ছাড়া এখন চাকরি হয় না। আওয়ামী লীগের সার্টিফিকেট ছাড়া কারো কর্মসংস্থান হয় না। অথচ দেশে এখনও ৪ কোটির বেশি যুবক বেকার আছে। জনশক্তিকে তারা কাজে না লাগিয়ে নিজেদের ভাগ্য গড়তে লুটপাট করছে।
সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের বাধা ও পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এই সরকার এত কাপুরুষ ও ভীতু যে, সমাবেশে আসার জন্য গাড়ি-ঘোড়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার ১০-১২ বছরে তিস্তার পানি আনতে পারেনি। সীমান্তহত্যা বন্ধ করতে পারেনি। কিন্তু দেশের মানুষের জন্য এনেছে ঋণ। সেই ঋণের বোঝা জনগণকে বহন করতে হচ্ছে। তাদের পকেট কাটা হচ্ছে। আসলে তারা পুরো দেশটা খেয়ে ফেলেছে। তরুণ প্রজন্মকে আবারও ভোটাধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ভাতের অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর সভাপতিত্বে এবং যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, আব্দুল খালেক, শাহিন শওকত, আবু বকর সিদ্দিক, আব্দুল মতিন, আমিনুল ইসলাম, ফজলুর রহমান খোকনসহ আরও অনেকে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনে তরুণ প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করতে দেশের ৬ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তরুণ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। গত বুধবার চট্টগ্রাম বিভাগে সমাবেশ আয়োজনের মধ্য দিয়ে তারুণ্যের সমাবেশ শুরু হয়।