বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, কয়েকদিন আগে সরকার খুব লাফালাফি করেছিল। এখন কিন্তু থেমে গেছে। এখন বলেন, আমরা সংঘাত চাই না। আলোচনায় বসতে চাই। আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করে এসেছি। এ আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে এসেছে। আমাদের দশ দফার আন্দোলনের প্রথম দফা সরকারের পদত্যাগ। আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবর্তন চাই, আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আজ সোমবার (২৯ মে) বিকেলে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
জিয়াউর রহমানের স্মৃতিচারণ করে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, তাঁর মৃত্যু সংবাদে সারা দেশ ছিল বাকরুদ্ধ। যে জিয়া মানুষের হৃদয়ে অবস্থান করছেন, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে কোনো লাভ নেই। তাঁকে যতই খাটো করা হোক ধ্রুবতারার মতো সত্য জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক। দেশের কঠিন সময়ে এই জাতির সামনে ত্রাণ কর্তা হিসেবে হাজির হয়েছেন। যতই মিথ্যাচার করেন না কেন, তাকে কারো মন থেকে মুছে ফেলা যাবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জিয়াউর রহমান জীবনে তিনটি সফল ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। সৈনিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন ও রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি সফল। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির নামে লুঠপাট হচ্ছিল, সেজন্য তিনি সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি বাতিল করে মুক্ত অর্থনীতি চালু করেছিলেন। এ আওয়ামী লীগ সব দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল করেছিল। আর জিয়াউর রহমান সুযোগ পেয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন। সে কারণে রাজনীতিবিদ হিসেবে সফল। এ কারণে বর্তমান সরকার জিয়াউর রহমানকে ভয় পায়। তার নামে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে কিন্তু কোনো লাভ হবে না।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপির লজ্জিত হবার কোনো ইতিহাস নেই। গৌরব করার মতো ইতিহাস আছে। আমরা সামরিক শাসন জারি করিনি, গণতন্ত্রও হত্যা করিনি। আওয়ামী লীগই ১/১১-এর অবৈধ সরকারকে বৈধতা দিয়েছে। বিএনপি কর্মী হিসেবে বলতে পারি, বিএনপি শুধু স্বাধীনতা ঘোষকের দল নয়, গণতন্ত্র রক্ষাকারী দল। বিএনপির শাসনামলেই জনগণ গণতন্ত্রের সুফল পেয়েছিল।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাদেশের ভোট চোরদের রুখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি করেছে। আপনাদেরও এখন থেকে সজাগ থাকতে হবে। কারা ভোট চোর, তাদের তালিকা করতে হবে। ওদের (ভোট চোর) অপকর্মের ছবি তুলে ফেসবুকের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে হবে। বিএনপির অফিসে তা পাঠিয়ে দিতে হবে। বাকি কাজ আর চিন্তা করতে হবে না। আমরা বলে দিতে চাই, আগামীতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে এবং জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আগামীতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, সরকার এখনো বিভিন্ন গায়েবি মামলা দিয়ে বিএনপিকে হয়রানি করছে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের অত্যাচারের ইতিহাস আজ নতুন নয়। আগেও তারা গণতন্ত্র কুক্ষিগত করে রেখেছিল। অবাধ লুটপাটের কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল কায়েম করেছিল।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ।