লাখো টন কয়লা গায়েবের দায়ভার হাসিনার — রুহুল কবির

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বৃহস্পতিবার, জুলাই ২৬, নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশে এখন গায়েবী শাসন চলছে। চারিদিকে এখন শুধু গায়েবের আওয়াজ। এদেশে মানুষ গায়েব হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ গায়েব হয়, ব্যাংকের লাখ লাখ কোটি টাকা গায়েব হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট থেকে সোনা গায়েব হয়, সোনা গায়েব হয়ে মিশ্র ধাতুতে পরিণত হয়, শেয়ার বাজারের টাকা গায়েব হয়, এখন অমূল্য সম্পদ দেশের খনি থেকে লাখ লাখ টন কয়লাও গায়েব হয়ে গেছে। এ নিয়ে এতো আলোড়ন তৈরী হলেও সরকার তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। বিদ্যূৎ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজে। লাখো টন কয়লা গায়েবের দায়ভারও হাসিনার।

 

প্রেসব্রিফিং এর বক্তব্যের পূর্ণপাঠ নিচে দেয়া হল —

 

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,

আস্সালামু আলাইকুম। সবাইকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।

বন্ধুরা,

দেশে এখন গায়েবী শাসন চলছে। চারিদিকে এখন শুধু গায়েবের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। এদেশে মানুষ গায়েব হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ গায়েব হয়, সরকারী-বেসরকারী ব্যাংকের লাখ লাখ কোটি টাকা গায়েব হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট থেকে সোনা গায়েব হয়, সোনা গায়েব হয়ে মিশ্র ধাতুতে পরিণত হয়, শেয়ার বাজারের টাকা গায়েব হয়, এখন অমূল্য সম্পদ দেশের খনি থেকে লাখ লাখ টন কয়লাও গায়েব হয়ে গেছে। এ নিয়ে এতো আলোড়ন তৈরী হলেও সরকার তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। বিদ্যূৎ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজে। এই লাখ লাখ টন কয়লা গায়েবের দায় তিনি এড়িয়ে যেতে পারেন না। সত্যিকারের গণতান্ত্রিক দেশ হলে প্রধানমন্ত্রী এতবড় কেলেঙ্কারীর দায়ে পদত্যাগ করতেন। কিন্তু বাংলাদেশের অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাকে যক্ষের ধনের মতো ভালবাসেন, তাই তিনি সব বিসর্জন দেবেন, কিন্তু ক্ষমতা ছাড়বেন না। বাংলাদেশ এখন শুধু তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, এখন গোটা ঝুড়িই গায়েব হতে বসেছে। এই সমস্ত ন্যাক্কারজনক মেগা দুর্নীতির ঘটনা সমূহে দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় বইলেও ক্ষমতাসীনদের মনে মৌসুমী হাওয়া বইয়ে যায়।

সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,

সরকারের উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন-গাজীপুর ও খুলনাতে গুড, তিন সিটিতে বেটার নির্বাচন হবে। পুলিশী গ্রেফতারী অভিযানের মধ্যে ভোট জালিয়াতির মহৌৎসবে খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচন তাদের দৃষ্টিতে যদি গুড হয়ে থাকে তাহলে আগামী তিনটি সিটি কর্পোরেশনের বেটার নির্বাচনের চেহারাটা কী হবে তা নিয়ে দেশবাসী আতঙ্কবোধ করছে। ভোট নিয়ে জালিয়াতি, কেন্দ্র দখল করে লাইন ধরে সিল মারা, বাপের সাথে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রের ভোট দেয়া, মৃত ব্যক্তি এসে ভোট দেয়া, ধানের শীষের এজেন্ট ও সমর্থক ভোটারদের বাসা ও কেন্দ্র থেকে গুম করে অন্য জেলায় ছেড়ে দেয়া, নির্বিচারে গ্রেফতার করা, কেন্দ্র থেকে মারপিট করে এজেন্ট বের করে দেয়া, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে কেন্দ্র থেকে ভোটারদের সরিয়ে দিয়ে নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা, ভোট ডাকাতি, ছিনতাই করা, কেড়ে নেয়া, হরণ করা, ব্যাপকভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের হিড়িক, প্রতিপক্ষের মাইক ভেঙ্গে দেয়া, পোষ্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা, সরকারী দলের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ও সমর্থকদেরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করা ইত্যাদিকেই আওয়ামী নেতারা গুড সংস্কৃতি হিসেবে অভিহিত করেন। কারন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন দৃষ্টান্ত নেই। আগামী তিন সিটির নির্বাচনে এখনই ক্ষমতাসীনদের দাপট ও দৌরাত্ম যে বিভৎস রুপ নিয়েছে তাতে এইচ টি ইমাম সাহেবের আগামী তিন সিটির বেটার নির্বাচনের আভাস পাওয়া যায়। আগামী তিন সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মেয়র ও কয়েকজন সংসদ সদস্য ব্যাপকভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নৌকা মার্কার পক্ষে প্রচারণা তো চালাচ্ছেনই, এর উপর বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, সরকারী কলেজ শিক্ষক, সিভিল সার্জনসহ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রত্যক্ষভাবে নৌকা মার্কার পক্ষে কাজ করছে।

এমনকি নির্বাচনে দায়িত্বরত কর্মকর্তারাও নৌকার পক্ষে কাজ করছেন। নির্বাচন কমিশন নিজেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে গ্রেফতার, গণগ্রেফতার, হয়রানী, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় বাধাসহ নানা বিষয়ে কমিশনের অভিযোগের পাহাড় জমা হলেও গতকাল ইসি সচিব বলেছেন-সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। অথচ কমিশনের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছিল-তিন সিটি নির্বাচনে কাউকেই গ্রেফতার করা যাবে না। ইসি সচিবের এই বক্তব্য পক্ষপাতমূলক এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তরায়। দেশের বিভিন্ন নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা আসন্ন তিন সিটি নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তারা বলছেন-তিন সিটিতে কোন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই, নির্বাচনের কোন সুষ্ঠূ পরিবেশ এখনও ইসি তৈরী করতে পারেনি। নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের এখন আর কোন আস্থা নেই।

সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন যতই ঘনিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের ক্যাডার’রা ভোটারশুন্য নির্বাচন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুলিশ এই প্রস্তুতিতে সহায়তা করছে। পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র উচিঁয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মারধর করছে এবং পুলিশকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিচ্ছে। মঙ্গলবার হেতম খাঁ এলাকায় বিনা কারনে ছাত্রদলের নেতাদের মারধর করে বিএনপি অফিস ভেঙ্গে দিয়েছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। সেখানেও পুলিশ তাদের কথা মতো কাজ করেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে নির্বাচন কোনভাবেই সুষ্ঠু ও অবাধ হবেনা। নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছে। রাজশাহীতে সরকার দলীয় প্রার্থীর নির্দেশে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও তাদের অঙ্গ এবং সহযোগি সংগঠনের সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা বিএনপি’র গণসংযোগ ও পাড়া মহল্লায় নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন এবং নারী কর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। এ নিয়ে রাজশাহী নির্বাচন কমিশন অফিসে প্রতিনিয়ত অভিযোগ করলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। আওয়ামী লীগের কোন ভোট নেই, পরাজয় নিশ্চিত জেনেই সন্ত্রাসের ওপর তারা নির্ভর করেছে। পাড়া মহল্লায় ধানের শীষের গণজোয়ার বইছে। ভোটারগণ আগামী ৩০ জুলাই শতবাধা উপেক্ষা করে এর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। রাজশাহীতে গণগ্রেফতার করেও সরকার দলীয় প্রার্থী পার পাবেনা। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা সরকারী সন্ত্রাসীদের বাধা অতিক্রম করে সাধারণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়া নিশ্চিৎ করবে এবং ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করবে।  

বন্ধুরা,

গতকাল কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে সকাল ৮টায় ভোট শুরুর পর থেকে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে বিএনপি’র এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়।

ভোটকেন্দ্রে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রিজাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ব্যালট পেপার ছিনতাই, জাল ভোট প্রদান, নৌকা প্রতীকে জোর করে সীল মারা, প্রায় সকল কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্র দখল করে জালভোটের মহৌৎসব চলেছে কক্সবাজার পৌর নির্বাচনে, যা আপনারা আজকের গণমাধ্যমে ছবিসহ প্রত্যক্ষ করেছেন।

এছাড়া গতকাল নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার পৌরসভা নির্বাচন অনুুষ্ঠিত হয়। ভোটের দিনের আগে থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম চলে। ভোটারদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, বিএনপি’র এজেন্টদের মারপিট করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া,ব্যালট পেপার ছিনতাই ও জাল ভোট প্রদানের মহৌৎসবে মেতে ওঠে সরকারী দলের সন্ত্রাসীরা। সরকারী দলের সন্ত্রাসীরা ঘোষনা দেয় যে, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ব্যালটে সিল মারলেই কেবল ভোট কেন্দ্রে যেতে হবে, নইলে যেতে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী পারভীন আক্তার নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় রিটার্নিং কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপার এর নিকট লিখিত অভিযোগ করলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

বন্ধুরা,

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সহ-সভাপতি শাহীনুর আলম মারফত, কাপাসিয়া থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, খিলক্ষেত থানা বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার টুটুলকে রাজশাহী পর্যটন মোটেল থেকে বের হওয়ার সময় কয়েকটি মোটরসাইকেল ধাওয়া করে আটক করে নিয়ে যায়। কিন্তু তাদেরকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করছে না আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। রাজশাহী সিটি নির্বাচনী এলাকার ভোটারদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত করার জন্যই তাদেরকে আটক করা হয়েছে। আগামী তিন সিটির নির্বাচন কী রুপ নেবে এই ঘটনায় সেটির সুষ্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়। আগামী তিন সিটি নির্বাচনে এটি সরকারের দুরভিসন্ধির বহি:প্রকাশ। আমি দলের পক্ষ থেকে উল্লিখিত নেতৃবৃন্দকে আটকের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে তাদের অবস্থান নিশ্চিতের জোর দাবি করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

Torna su